খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সোনারগাঁওয়ে টিস্যু গোডাউনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১২ ইউনিট
  আগামীতে সরকারের মেয়াদ হতে পারে চার বছর : আলজাজিরাকে ড. ইউনূস

‘দাসত্বের শৃঙ্খলে বন্দি একটি জাতি কখনও কারো সম্মান পায় না’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

পাকিস্তানে ক্ষমতাসীন জোট সরকারের পদত্যাগ ও আগাম নির্বাচনের দাবিতে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে, তা সফল করতে নিজের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই) নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির বিরোধী নেতা ইমরান খান। সেই সঙ্গে তিনি বলেছেন, যতদ্রুত সম্ভব শারীরিকভাবে সুস্থ হওয়ার পর তিনি নিজেও ফের আন্দোলনে নামবেন।

শুক্রবার পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরের শওকত খানম হাসপাতাল থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে ইমরান খান বলেন, ‘দাসত্বের শৃঙ্খলে বন্দি একটি জাতি কখনও কারো সম্মান পায় না, কোনো উন্নতিও করতে পারে না।’

‘পাকিস্তানকে একটি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি দিতে যে আন্দোলন জনগণ শুরু করেছে, তা অব্যাহত থাকবে এবং শারীরিকভাবে খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠেই আমি ফের তাতে যোগ দেব।’

ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান ২০১৮ সালে ভোটে জিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। দেশটির রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারকারী সেনাবাহিনীর সমর্থন তখন তার দিকে থাকলেও কিছু দিন পর তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়।

সেনা সমর্থন হারানো ইমরানের বিরুদ্ধে এই বছরের শুরুতে জোট বেঁধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে দেশটির বড় দুই রাজনৈতিক দল। তাতে হেরে গত এপ্রিলে ইমরানের সরকারের পতন ঘটলে প্রধানমন্ত্রী হন মুসলিম লীগের শাহবাজ শরিফ, যিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই।

ক্ষমতা হারানো ইমরান নতুন নির্বাচনের দাবি তুলে পাকিস্তানে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে’ লংমার্চের ডাক দেন। গত ২৮ অক্টোবর লাহোর থেকে শুরু হয় এই কর্মসূচি।

৪ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল এই লংমার্চ; তার এক দিন আগে, ৩ নভেম্বর ওয়াজিরাবাদ শহরে সমাবেশ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হন ইমরান। সমাবেশ চলাকালে স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে ইমরান খানকে লক্ষ্য করে একে-৪৭ অ্যাসল্ট রাইফেল থেকে গুলি চালায় এক হামলাকারী। আরেক হামলাকারী ইমরানের দিকে পিস্তল তাগ গুলি চালিয়েছিল।

পিস্তল দিয়ে যে হামলাকারী হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল, তাকে হামলার সময়েই পাকড়াও করেন বছর তিরিশের এক যুবক। তিনি ঠিক সময়ে তৎপর না হলে নিহতও হতে পারতেন পিটিআিই চেয়ারম্যান।

একে ৪৭ অস্ত্রধারী হামলাকারীর বন্দুক থেকে বের হওয়া ৩ থেকে ৪টি গুলি ইমরান খানের পায়ে বিদ্ধ হয়েছে।

হামলার পরই তাকে চিকিৎসার জন্য লাহোরের শওকত খানম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত রয়েছেন ইমরান খান।

বৃহস্পতিবার হাসপাতালে পরই পিটিআইয়ের জেষ্ঠ্য নেতাদের ইমরান খান জানান, হামলার জন্য তিন জনকে দায়ী মনে করেন তিনি। তারা হলেন পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ এবং সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ফয়সাল নাসির। পিটিআইয়ের জেষ্ঠ্য নেতা আসাদ ওমরের মাধ্যমে এই তিন জনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তেলারও আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।

শুক্রবারের ভাষণে ফের তাদের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে ইমরান বলেন, সেনাবাহিনী ও ক্ষমতাসীন জোট সরকারের বৃহত্তম শরিক দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) অনেক দিন থেকেই তাকে হত্যার চেষ্টা করছে।

‘বৃহস্পতিবার যা ঘটেছে, তা প্রতিষ্ঠান (সেনাবাহিনী) ও পিএমএল-এনের যৌথ পরিকল্পনার ফলাফল। (কিছুদিন আগে) প্রথমে তারা আমার বিরুদ্ধে ধর্মদ্রোহিতা ছড়ানোর অভিযোগ তুলল এবং এ সংক্রান্ত কিছু ভুয়া অডিও টেপ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিল। তারপর বৃহস্পতিবার ওয়াজিরাবাদে আমাকে হত্যার উদ্দেশে হামলা ঘটল।’

‘ভুয়া অডিও টেপ ছড়ানোর কাজটি করেছে পিএমএল-এন। এবং দলটির কোন কোন নেতা এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত, তাও আমি জানি। বর্তমানে আমরা সবাই ডিজিটাল পৃথিবীতে বসবাস করি, তাই এসব তথ্য বের করা কঠিন কিছু নয়।’

‘অডিও টেপ ছড়িয়ে পিএমএল-এন একটা প্রেক্ষাপট আগেই তৈরি করে রেখেছিল, তারপর আমাকে হত্যার প্রচেষ্টা চালায় প্রতিষ্ঠানের কিছু কুলাঙ্গার কর্মকর্তা। আমার ওপর যে প্রাণঘাতী হামলা হতে পারে, সেই খবরও আমি লংমার্চ শুরুর আগেই পেয়েছিলাম।’

‘আমাদের দাবি, যে তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে— অবিলম্বে তাদের পদত্যাগ করতে হবে। যতক্ষণ তারা পদত্যাগ না করবে— জনগণ সড়ক ছাড়বে না।’

পাকিস্তানের অখণ্ডতা একমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোই নিশ্চিত করতে পারে বলে দাবি করেন পিটিআই চেয়ারম্যান। সেই সঙ্গে সেনাবাহিনীকে রাজনীতি থেকে দূরে থাকার আহ্বানও জানান তিনি।

‘যদি সেনাবাহিনী দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করতে পারত, তাহলে পূর্ব পাকিস্তান আজ বাংলাদেশ হতো না। একমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোই পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষা করতে সক্ষম, এক্ষেত্রে সেনাবাহিনী তাদের সহায়ক মাত্র।’




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!