খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ

দারিদ্র্য বিমোচনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির গুরুত্ব পর্যালোচনা

জিয়াউর রহমান, পিএমপি

বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশসমূহে দারিদ্র্য একটি দুষ্টচক্র হিসেবে কাজ করে। শুধুমাত্র নিজস্ব প্রচেষ্টায় জনগনের পক্ষে দারিদ্র্যর কষাঘাত থেকে মুক্ত হওয়া খুবই কঠিন ও দুরূহ ব্যাপার। দারিদ্র্যর দুষ্টচক্র ভেঙ্গে এর কবল থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করতে প্রয়োজন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ। দারিদ্র্য বিমোচনে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম পদক্ষেপ হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী। কেননা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী দারিদ্র্য বিমোচনে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। যার ফলে উন্নয়নশীল দেশের দারিদ্র্য দূর করার বড় হাতিয়ার হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী যা দরিদ্র, অসহায় ও সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেবার বিশেষ ট্যুল হিসেবে কাজ করছে।

বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কার্যক্রমটি এসডিজির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ‘কেউ পিছিয়ে থাকবে না’ (No one leaving behind) স্লোগানকে পূর্ণতাদানে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘‘আমার জীবনের একমাত্র কামনা, বাংলাদেশের মানুষ যেন তাদের খাদ্য পায়, আশ্রয়পায় এবং উন্নত জীবনের অধিকারী হয়।’’ জাতির পিতাতার এ চিন্তার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন আমাদের সংবিধানে। তিনি ১৯৭২ সালের সংবিধানের ১৫ (ঘ) অনুচ্ছেদে সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার অর্থাৎ বেকারত্ব, বিধবা, পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতা পিতৃহীনতা বাবার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য লাভের অধিকার সংযুক্ত করে সামাজিক নিরাপত্তাকে রাষ্ট্রীয়কাঠামোর অন্তর্ভুক্তকরেন। সুতরাং বলা যেতে পারে সংবিধানের ১৫(ঘ) অনুচ্ছেদের উপর ভিত্তি করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন দেশে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করেন। কেননা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সামগ্রিক চিন্তা-চেতনায় সমাজের ঝুঁকিপূর্ণ, অবহেলিত, প্রান্তিক ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সামাজিক সুরক্ষা, জীবনমান উন্নয়নের বিষয়টি সদা জাগ্রত ছিল।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী দেশের অবকাঠামো, শিল্প কলকারখানাসহ সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধ্বংসস্তুপ থেকে দেশকে টেনে তুলে জনগণের দুর্দশা লাঘবে রেশন, খোলাবাজারে ভোগ্যপণ্য বিক্রিএবং রিলিফ বিতরণ কর্মসূচি চালু করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এ দেশের তৃণমূলের বিশেষ করে পল্লী অঞ্চলে বসবাসরত দরিদ্র ও অসহায় জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় ১৯৭৪ সালে ‘পল্লী সমাজসেবা’ নামে কার্যক্রমের শুরু হয়। ‘পল্লী সমাজসেবা’ কার্যক্রমের আওতায় বাংলাদেশে সর্বপ্রথম সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণের সূত্রপাত হয় যাকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রমের সূতিকাগার বলা যায়। এ কার্যক্রম দেশের প্রান্তিক জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তিরক্ষেত্রে সূচনা করে যুগান্তকারী ইতিহাস। অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) কার্যক্রম দেশের সর্বপ্রথম সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রম যা ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় চালু করা হয়েছিল যার মূল লক্ষ্য ছিল অতিদরিদ্র পরিবারের খাদ্য সহায়তার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পরবর্তীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ভিজিএফ এর মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হতো। এছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে প্রবর্তন করেন কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচি যার মূল লক্ষ্য ছিল তৃনমূল পর্যায়ের সাময়িক কর্মসংস্থান সংকট ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে রক্ষার সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও শোষণমুক্ত সমাজ গঠন যা বাস্তবায়নে নিররসভাবে কাজ করে যাচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার। সদ্য স্বাধীন দেশে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে জাতির পিতা যে নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তার ধারাবাহিকতায় জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর দেশে প্রথমবারের মতো চালু করেন সামাজিক সুরক্ষা ভাতা, যার মূল লক্ষ্যে ছিল জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলা। তাই বলা চলে, বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে ‘সামাজিক নিরাপত্তাবলয়’ ধারণাটি সুদৃঢ় করা হয়। সরকার এখাতকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং শেখ হাসিনার নির্দেশনায় মানবকল্যাণ দর্শন ধারণায় সরকার প্রবর্তন করেন বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, প্রতিবন্ধীভাতা, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ ব্যাপক যুগান্তকারী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক উদ্যোগে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় সমাজ সেবা অধিদফতরের মাধ্যমে ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে দেশে প্রথমবারের মতো বয়স্কভাতা এবং ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে বিধবা, স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা সম্মানীসহ নানা ধরণের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করা হয়।

তাছাড়া খোলাবাজারে চাল বিক্রি(ওএমএস) , শিক্ষা উপবৃত্তি, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি, মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ নানাবিধ কর্মসূচি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সরকার গঠনের পর থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বয়স্ক, বিধবা, দুস্থ ও দরিদ্র নারী, প্রতিবন্ধী, চা বাগানের শ্রমিক, জেলে, হিজড়া ইত্যাদিসম্প্রদায়ের মানুষের জন্য নানাবিধ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় বছর বছর যেমন বরাদ্দ বাড়াচ্ছেন ঠিক তেমনি দিনদিন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি করছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র, প্রতিবন্ধী শিক্ষা, উপবৃত্তি, হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন, চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন, ক্যান্সার, কিডনি, লিভারসিরোসিস, জন্মগতহৃদরোগ, স্ট্রোক ও থ্যালাসেমিয়া রোগীদের আর্থিক সহায়তা, প্রতিবন্ধী মোবাইল থেরাপি ভ্যান চালুসহ নানাবিধ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। বর্তমান সরকারের সময় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাএবংউপকারভোগীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্র্তৃক গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার সঙ্গে সঙ্গে আরও ২৪টির বেশি মন্ত্রণালয়/ বিভাগ সামাজিক নিরাপত্তার প্রায় ১২৩ টি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। সরকারের মানবিক বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ও উপকারভোগীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীকে আরো যুগোপযোগী ও কার্যকর করতে এবং টেকসই দারিদ্র্য বিমোচনে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে সরকার ২০১৫ সালে ‘জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল’ প্রণয়ন করেন। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে সমাজের ঝুঁকিপূর্ণ, অবহেলিত জনগোষ্ঠীর সামাজিক সুরক্ষাকে আইনি বলয়ের আওতায় আনার জন্য বর্তমান সরকার ভবঘুরে ও নিরাশ্রয়ব্যক্তি (পুনর্বাসন) আইন ২০১১, শিশুআইন ২০১৩, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩, পিতা মাতার ভরণপোষণ আইন ২০১৩, নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন ২০১৩ এবং বাংলাদেশ জাতীয় সমাজ কল্যাণ পরিষদ আইন ২০১৯।

মূলতঃ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা সম্প্রসারণ, বাজেট বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আইন প্রণয়ন ও বিভিন্ন কৌশল গত সংস্কারের ফলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেকল্যাণকর রাষ্ট্রের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ।

আমরা যদি ২০০৮-০৯ বাজেট থেকে বর্তমান২০২২-২৩ বাজেটপর্যালোচনা করি তাহলে আমরা দেখতে পারি, ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭.৭৮ গুন বৃদ্ধি পেয়ে ১ লক্ষ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এছাড়া, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা বাজেটের ১৬.৭৫ শতাংশ এবং জিডিপি ২.৫৫ শতাংশ। এ  হিসাবে বরাদ্দ বেড়েছে ৫ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। সুতরাং দেখা যাচ্ছে  যে, ২০২২-২৩  অর্থবছরের জন্য সামাজিক নিরাপত্তাখাতে বরাদ্দ বেড়েছে ৫ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা এবং১১ লাখ উপকারভোগী বাড়ানো হয়েছে।

দেশে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতের আওতায় ১২৩টি কর্মসূচি বা বিষয় রয়েছে যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছে ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এগুলোর মধ্যে ৮টি কর্মসূচি হচ্ছে নগদভাতা, আর ১১টি খাদ্যসহায়তা।

সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত ও বিশ্ব ব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হওয়াজনিত কারণে নিত্য-প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে দেশব্যাপী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বল্পমূল্যে নিত্য-প্রয়োজনীয় পণ্য বিতরণে সরকারিভাবে ‘ফ্যামিলিকার্ড’ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় এককোটি পরিবার ২০২২-২৩ অর্থবছরে টিসিবির ‘ফ্যামেলিকার্ড’ পাবে যার ফলে দেশের প্রায় পাঁচ কোটি স্বল্প-আয়ের মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে। ২০২২-২৩ বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে আওতা বাড়ছে বয়স্ক ও বিধবাদের ক্ষেত্রে। এই কর্মসূচির আওতায় নতুন করে আরও ১০০ উপজেলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এতে যুক্তহবে ১১ লাখ নতুন উপকারভোগী। সবমিলিয়ে নতুন বাজেটে এর সংখ্যা দাঁড়াবে ৬৮ লাখ। এ কর্মসূচির আওতায় গত তিন অর্থবছরধরে উপকারভোগীরাপ্রতিমাসে ৫০০ টাকা হারে ভাতা পাচ্ছেন, যা আগামী বছরেও অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২২-২৩ বাজেটে প্রতিবন্ধীদের জন্যমাসিকভাতা ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা এবং উপকারভোগীরসংখ্যা ৩ লাখ ৫৭ হাজার বাড়িয়ে ২৩ লাখ ৬৫ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে। নতুনঅর্থবছরে প্রতিবন্ধী ভাতা বাবদ ২ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর সংখা ১০ লাখ ৪৫ হাজার থেকে ২ লাখ ৯ হাজার বৃদ্ধিক রে ১২ লাখ ৫৪ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে এবং এখাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক কল্যাণ, মানব সম্পদ উন্নয়ন, কর্মসৃজন, অবসর ও পারিবারিক ভাতা এবং অন্যান্য এই মোট ছয়খাতে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২২-২৩বাজেটে খাদ্যনিরাপত্তায় ১৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে  যা চলতি বাজেটে এ খাতে ১৮ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। সে হিসাবে বরাদ্দ বাড়ছে ৫৭০ কোটি টাকা।খাদ্য নিরাপত্তায় ওএমএস, ভিজিডি, ভিজিএফ, কাবিখা, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি রয়েছে।

নতুন বাজেটে সামাজিক কল্যাণ খাতে ৩৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতেরমাধ্যমে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র, বেদে, হিজড়া, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মানবসম্পদ উন্নয়নে ৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি বাজেটে রয়েছে ৫ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা উপবৃত্তি, প্রাথমিক ছাত্রছাত্রী উপবৃত্তি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক উপবৃত্তিতে এ টাকা খরচ করা হবে।কর্মসৃজনখাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ১৯ হাজার ৭০০ কোটি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।  চলতি বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১৮ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা। কাবিখা, উন্নয়ন প্রকল্প বা কর্মসূচিতে এই বরাদ্দের টাকা ব্যয় হয়। অবসর ও পারিবারিক ভাতায় নতুন বাজেটে ২৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি বাজেটে রয়েছে ২৬ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা।বয়স্ক, বিধবা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী, মাতৃত্বকালীনভাতা, বীরমুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি দিতে এ টাকা ব্যয় করা হবে। এছাড়া নতুন বাজেটে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৬ হাজার কোটি টাকারপ্রস্তাবকরা হয়েছে। চলতি বাজেটে এ খাতে ৪ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

সার্বিক আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ভিত্তিক পুরাতন পদ্ধতির কর্মসূচিসমূহ দারিদ্র্য বিমোচনে অবদান রাখলেও সার্বিকভাবে মানুষের জীবনমান উন্নত করে টেকসই উন্নয়নে শতভাগ সহায়ক নয়। তাই প্রয়োজন জীবন চক্রমূখী সামাজিকনিরাপত্তা ব্যবস্থার দ্রুত এবংকার্যকর বাস্তবায়ন।

আমরা বিশ্বাস করি জীবন চক্রমূখী সমন্বিত টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট -২০৩০ ও রূপকল্প- ২০৪১ বাস্তবায়ন সম্ভবপর হবে। আমরা আশাবাদী, টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ বর্তমান সরকারের গৃহীত উদ্ভাবনীমূলক পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ মহামারী করোনার ক্ষতিসহ সাম্প্রতিক সময়ের সমস্যা পুষিয়ে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-২০৩০ ও ভিশন-২০৪১ সফলবাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে।

লেখক : উপসচিব ও কনসালটেন্ট, এটুআই প্রজেক্ট, ঢাকা

খূলনা গেজেট/ টি আই




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!