বিয়ের ৬ মাসের মধ্যে শ্বশুর বাড়ী থেকে লাশ হয়ে ফিরলো নববধু জাকিয়া সুলতানা। স্বামীর পরিবার বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলে দাবি করছে, তবে জাকিয়ার পরিবারের দাবি এটি হত্যাকান্ড। দাকোপ উপজেলার কামারখোলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
দাকোপ উপজেলা সদর পানখালী ইউপির হোগলা বুনিয়া গ্রামের গোলাম রসুল শেখের কন্যা জাকিয়া সুলতানা (২০)। ৬ মাস আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় উপজেলার কামারখোলা গ্রামের রুহুল আমিন গাজীর পুত্র খানজাহান গাজীর সাথে। বিয়ের পর থেকে সুখেই কাটছিলো তাদের দাম্পত্য জীবন। প্রতিবেশীদের ভাষ্য স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ী নিয়ে হাসি আনন্দেই ছিল নববধু জাকিয়া। এরই মাঝে গত ৪ সেপ্টেম্বর সকালে জামাই খানজাহান মোবাইল ফোনে জাকিয়ার পিতা গোলাম রসুল শেখকে জানায় জাকিয়া গুরুত্বর অসুস্থ, তাকে উপজেলা হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। রসুল শেখ হাসপাতালে এসে জানতে পারে তার মেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে এবং ডাক্তার মৃত ঘোষণা করায় খানজাহানের পরিবার লাশ নিয়ে তাদের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে। পথিমধ্যে গোলাম রসুল ট্রলার ঘুরিয়ে মেয়ের লাশ গ্রহণ করে। বিষয়টি সে তাৎক্ষণিক দাকোপ থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে লাশের প্রাথমিক সুরতহাল এবং ময়নাতদন্ত শেষে জাকিয়ার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।
রসুল শেখসহ তার পরিবারের অভিযোগ করে বলেন, আমরা হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই কেন তারা তড়িঘড়ি করে লাশ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল, ঝুলন্ত মৃতদেহ কেন পিতা পুত্র ছাড়া পুলিশ বা অন্য কাউকে দেখার সুযোগ দেওয়া হল না ? তাদের দাবি জাকিয়ার মুখ এবং শরীরের একাধিক স্থানে লালচে দাগের চিহ্ন ছিল। তবে খানজাহানের পরিবার এমন চিহ্ন থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
সরেজমিন আত্মহত্যার ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, ঘটনার দিন সকাল ৭ টার দিকে স্বামী খানজাহান ধান ক্ষেতে যায়। একই সময় তার পিতা রুহুলামিন গাজী পুত্রবধু জাকিয়ার দেওয়া ভাত খেয়ে পুকুরে মাছ মারতে যায়। এরই মাঝে খানজাহান বাড়ী ফিরে ঘরের দরজা বন্ধ দেখে জানালা দিয়ে দেখতে পায় জাকিয়া ওড়নায় ফাঁস দিয়ে ঘরের আড়ার সাথে ঝুলছে। তখন সে লাথি মেরে দরজা খুলে চিৎকার দিয়ে বাবাকে ঘরে ডেকে নিয়ে তার সহযোগীতায় জাকিয়ার দেহ নামায়। পরবর্তীতে প্রতিবেশী স্বজনদের সহায়তায় ট্রলার যোগে উপজেলা হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে। তবে কাঠের ফ্রেম টিনের যে দরজায় লাথি মেরে খোলার দাবি তারা করেছে সেখানে দরজার ছিটকানি বা অন্য কোন অংশে সামান্যতম ক্ষতির কোন চিহ্ন দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে খানজাহানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বাড়িতে থাকা তার পিতা রুহুলামিন গাজী এবং প্রতিবেশী ও স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত তাদের স্বামী স্ত্রী বা সংসারে কোন ধরনের ঝগড়া বিবাদের কথা কেউ কখনও শুনেনি। এমনকি ওই রাতেও স্বামী স্ত্রী একসাথে স্বাভাবিকভাবে ছিল। জানা যায় ঘটনার ২ দিন আগে জাকিয়ার শ্বাশুড়ি তার একমাত্র জামাই চালনা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড আনান্দ গ্রামের কামরুলের বাড়িতে যায়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিল। গোলাম রসুলের মেয়ে জাকিয়া সুলতানা ছিল খানজাহানের দ্বিতীয় স্ত্রী।
আত্মহত্যা সর্ম্পকে জানতে চাইলে দাকোপ থানার ওসি তদন্ত আশরাফুল ইসলাম বলেন, মৃতের পিতা গোলাম রসুল প্রাথমিকভাবে একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন। তবে ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর সে অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মৃতের পরিবার এবং স্বজনদের দাবি তাকে হত্যা করা হয়েছে। ওই সময়ে খানজাহানের কল লিষ্টের কথোপকথন প্রকাশ পেলে রহস্য উন্মোচন হবে এমন দাবি তাদের।
খুলনা গেজেট/এনএম