আত্মঘাতি স্যালো বা ড্রেজার মেশিন দিয়ে খুলনার দাকোপে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি বহাল তবিয়তে বিভিন্ন নদী ও খাল থেকে মাটি বালু উত্তোলন করে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে আসছে। পাশাপাশি আবার চলছে কৃষি জমি ভরাট করে জমজমাট পোলাটিং ব্যবসা। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের নাকের ডগায় দীর্ঘদিন যাবৎ দেদারচ্ছে এ ব্যবসা চালিয়ে আসলেও যেন দেখার কেউ নেই।
সরেজমিনে ঘুরে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এই উপজেলায় সরকারিভাবে কোন বালু মহল নেই। তারপরও স্থানীয় কাজীবাছা, পশুর, চুনকুড়ি, ভদ্রা, সুতারখালী, ঢাকী, শিবসা নদী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদা বেড়িবাঁধের ভিতরে বিভিন্ন খাল থেকে নিজেদের ইচ্ছামত মাটি ও বালু উত্তোলন করছে। পোলাটিং ব্যবসার ফলে কৃষি জমির পরিমাণও দিনদিন কমে আসছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। অধিক লাভের আশায় ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও জড়িয়ে পড়েছে এই ব্যবসায়। প্রতিদিন লক্ষ ঘনফুট বালু উত্তোলন করে সড়কসহ বিভিন্ন স্থাপনা কাজে প্রতি ফুট দুই থেকে আট টাকা দরে বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই ব্যবসায়ীরা। কোন কোন স্থানে আবার রাস্তার উপর ইট, বালু ও খোয়া দিয়ে পাইপ বসিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বালু উত্তোলনের ফলে যানবাহন চলাচলে বিঘ্নসহ দূর্ঘটনাও ঘটছে। এমনকি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদা বেড়িবাঁধে ছিদ্র করেও পাইপ ঢুকিয়ে দেদারচ্ছে এ ব্যবসা চালিয়ে আসছে। এদিকে কথিত ঠিকাদার ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধিরা ওই নিম্নমানের মাটি বালু দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনার কাজ।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে উপজেলা সদর চালনা মেরিন মাছ কম্পানির পাশে, পশ্চিম বাজুয়া, বটবুনিয়াসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে দেদারচ্ছে এ বালু উত্তোলন চলছে।
আ’লীগ নেতা গোলাম মোস্তফা খান বলেন, এই বালু উত্তোলন ড্রেজার জনপদ বিধ্বংসি আত্মঘাতি। সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা ছোট এই উপজেলা ৩টি দ্বীপের সমন্বয় গঠিত এবং এক প্রকার বালুর উপর ভেসে আছে। তারপর আবার প্রতিনিয়ত নদী ভাঙ্গনে বাড়িঘর, ফসলি জমিসহ বেড়িবাঁধ বিলীন হচ্ছে। এছাড়া গ্রামিণ কার্পেটিং রাস্তাসহ বিভিন্ন স্থাপনারও ক্ষতি হচ্ছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্যও মারাত্মক হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়ছে। এভাবে যত্রতত্র বালু উত্তোলন করে ব্যবসা চালিয়ে আসলে অচিরেই এই উপজেলা দেশের মানচিত্র থেকে মুছে যেতে পারে। এমনকি মাটির নিচের স্তর ফাঁকা হয়ে সামান্য ভূমিকম্পেও প্রাণের এই জনপদ ধ্বংস হতে পারে বলে আশংঙ্কা করছেন তিনি। অতি দ্রুত এসব কতিপয় ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে স্থায়ীভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম জানান, ওয়াপদা বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে পাইপ ঢুকিয়ে বালি উত্তোলন করছে এমন খবর আমার কাছে আসেনি। আমি খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পাপিয়া সুলতানা বলেন, কয়েক দিন আগে বালি উত্তোলনের খবর পেয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। যদি আবার চলে থাকে তাহলে এখনই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খুলনা গেজেট/এনএম