খুলনার দাকোপ উপজেলার বাজুয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের চুনকুড়ি উত্তর পাড়া এলাকায় জনবহুল রাস্তা নিয়ে এলাকাবাসীর ভোগান্তির শেষ নাই। যেখানে কম-বেশি উন্নয়ন হলেও অবহেলিত রয়ে গেছে সড়ক ব্যবস্থা। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত উন্নয়ন বঞ্চিত এই গ্রামের গ্রামীণ সড়ক ব্যবস্থা। যার কারণে চলাচলের জন্য দূর্ভোগে রয়েছেন অত্র এলাকার হাজার হাজার মানুষ। জরুরি ভিত্তিতে রাস্তাটি সংষ্কারসহ পাকাকরণের দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের বেহাল রাস্তার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে চুনকুড়ি নদী। অন্যদিকে অনেক কষ্ট করে কর্দমাক্ত রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে কিছু স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। কোথাও কোথাও রাস্তার কিছু কিছু অংশ পশুর ও চুনকুড়ি নদীতে ভেঙ্গে গেছে। এরকম অনেক চিত্র চোখে পড়েছে। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রামকে শহর বানাতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির অবহেলায় এখনও এই এলাকার চেহারা মান্ধাতার আমলের মত রয়ে গেছে।
এখানে শত শত স্থায়ী পরিবারের প্রায় ২ হাজার মানুষের বসবাস। গ্রামটিতে জামে মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল ও পোদার গঞ্জ বাজার রয়েছে। স্বাধীনতার ৫২ বছর পার হলেও গ্রামের মাটির রাস্তায় ইটের সোলিং হয়নি। বৃষ্টির সময় থাকে হাঁটু কাঁদা। রেহাই পায় না এই এলাকাসহ অন্য গ্রামের মানুষ। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে গ্রামের মানুষের পড়তে হয় সীমাহীন দুর্ভোগে। বিপাকে পড়তে হয় দাকোপ উপজেলা সদরসহ চালনা পৌরসভায় আসা স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় সমস্যায় পড়তে হয় ইমারজেন্সি রোগিদের। হঠাৎ কোন ব্যক্তি অসুস্থ হলে দ্রুত উপজেলা সদরে নেওয়া সম্ভব হয় না। এমনকি পল্লী চিকিৎসকেরাও অনুপযোগী রাস্তার জন্য সহজে কোন রোগীর বাড়িতে আসতে চায় না। পোদ্দার গঞ্জ বাজার থেকে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা। এর মধ্যে ওয়াপদা রাস্তার কাজ হওয়ার সময় কিছু কিছু রাস্তার ইট তুলে ফেলা হয় যা আজ পর্যন্ত আর বসানো হয়নি। যাহা এলাকার মানুষের উপকার হয়নি বলে অধিকাংশ স্থানীয়রা মন্তব্য করেন। বেহাল দশার জন্য স্বাভাবিকভাবে যাতয়াত করা সম্ভব হয় না।
গ্রামের সুভংকার বিশ্বাস বলেন, মেম্বররা যদি যে কোন মাথা থেকে ইটের সোলিং বসাতেন তাহলে কিছুটা হলেও চলাচল করা যেত। বাজারের প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ৩/৪ খন্ডের মাটির রাস্তায় অতিরিক্ত কাঁদা আছে। যার ফলে আমরা এখনও বৃষ্টিতে কাঁদা পানিতে চলতে খুবই দুর্ভোগ পোহাচ্ছি।
আম্বী বেগম বলেন, আমরা খুবই অবহেলিত আছি। এখন প্রায় সব গ্রাম-গঞ্জের রাস্তাঘাট ইটের সোলিং কিন্ত আমাদের আজও হাঁটু কাঁদায় চলতে হয়। সরকার গ্রামকে শহরে রূপ দিবেন, তাহলে আমাদের অবহেলিত গ্রাম কি কোন নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধির চোখে পড়ে না? অনেক গ্রামে ফাঁকা রাস্তায় পিচ ঢালাই হয়েছে, আর আমাদের গ্রামে প্রায় ২ হাজার জনবসতি বাস করেন।
ফারুক মালঙ্গী বলেন, আমাদের গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে অটোভ্যান আছে, অনেক ব্যক্তির নিজস্ব মটর সাইকেল, ইজিবাইক, নসিমন, করিমন, ভ্যান গাড়ী আছে। যারা এ বাহন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। এসকল যান রেখে আসতে হয় অন্য গ্রামে। না হলে রাস্তার পার্শ্বে পলিথিন কাগজ দিয়ে ঢেঁকে রাখতে হয়। অনেক সময় চুরির ঘটনা ঘটে। চলতি মাসে ভারি বৃষ্টিতে এ গ্রামের কয়েক জায়গার মাটির রাস্তা নিচু হয়ে রাস্তার পানি জমে যাচ্ছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রবীন্দ্রনাথ মোড়ল বলেন, চেয়ারম্যান কে একাধিকবার বলেছি। গ্রামের কাঁচা রাস্তা খুবই অবহেলিত। রাস্তাটি সংস্কার জরুরি। আমি চেষ্টা করছি, গ্রামের মাটির রাস্তা ইটের সোলিং করার।
বাজুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মানষ কুমার রায় বলেন, খন্ড খন্ড করে রাস্তার কাজ করা হয়েছে। চলতি বছরে চুনকুড়ি উত্তর পাড়া এলাকায় খেয়াঘাট থেকে কাজ শুরু করা হয়েছে। মেম্বারদের কিছু কিছু কাজ ভাগ করে দেয়া হয়েছে। এডিপির উন্নয়ন তহবিল থেকে বাকি কাজ করা হবে তবে বৃষ্টির জন্য কাজের বিলম্ব হচ্ছে।
তবে এলাকাবাসী অবহেলিত কাঁচা রাস্তাটিতে পিচের রাস্তা করে চলাচলের উপযোগীর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
খুলনা গেজেট/এনএম