দলীয়করণের মাধ্যমে দুদক-এনবিআরের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে অকার্যকর করে রাখা হয়েছিল দাবি করে এসব প্রতিষ্ঠান ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ও তার স্ত্রী রুখমিলা জামান চৌধুরীর নামে যুক্তরাজ্যে বিপুল অঘোষিত সম্পদের তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। এরপরও দীর্ঘদিন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিষয়টি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সিআইডি ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-সহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের, বিশেষ করে নেতৃত্ব পর্যায়ে দলীয়করণ ও অকার্যকর করার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র নজির।
মঙ্গলবার (১৩ আগন্ট) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ মন্তব্য করে টিআইবি। এতে দুর্নীতি ও অর্থপাচার নিয়ন্ত্রণ এবং এসব অপরাধে জড়িতদের চিহ্নিত করে জবাবদিহি নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি উল্লেখ করে, গত ডিসেম্বর থেকে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর দেশের বাইরে অপ্রদর্শিত সম্পদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ হয়। এতে ব্যাপক জনউদ্বেগ সত্ত্বেও কোনো ধরনের অগ্রগতি (পদক্ষেপ) দেখা যায়নি। বিষয়টি চরম হতাশাজনক।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর ‘হলফনামায় প্রার্থী পরিচিতি’ শীর্ষক টিআইবির প্রতিবেদন ও ‘নো ইইউয়োর ক্যান্ডিডেট’ ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে তথ্য প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের ফলে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর যুক্তরাজ্যে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ ও চলমান ব্যবসা সম্পর্কে দেশবাসীর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবগত হয়েছে।
তিনি বলেন, পরবর্তী সময়ে টিআই-ইউকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা এ সংক্রান্ত সব সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত, প্রমাণ ও নথি টিআই-ইউকে ও টিআইবির উদ্যোগে বিএফআইইউ, দুদক, পুলিশের সিআইডি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে পাঠানো হয় এ বছরের ৪ মার্চ। সব তথ্য-প্রমাণ হাতে থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। সরকার পতনের পর ও বিএফআইইউ প্রধানের পদত্যাগের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে, যা ইতিবাচক বলে বিবেচিত হতে পারে। তবে প্রশ্ন হলো, সব তথ্য-প্রমাণ হাতে থাকা সত্ত্বেও এতদিনেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না?
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, এমন নিষ্ক্রিয়তা কি প্রমাণ করে না- সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয়করণের মাধ্যমে অকার্যকর করে রাখা হয়েছিল? এসব প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বস্থানীয়রা এ অকার্যকরতার অনুঘটক হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন? বস্তুত অর্থপাচার ও অপ্রদর্শিত সম্পদ অর্জনের বিষয়টিকে প্রকারান্তরে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। আশঙ্কার ব্যাপার হলো, দেশের আর্থিক দুর্নীতির তদন্তের দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোতে দলীয় ব্যক্তিদের নিয়োগ, পদায়ন ও অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে করায়ত্ত করে দুর্নীতি করার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। মনে রাখতে হবে যে, সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বিদেশে বিপুল অঘোষিত সম্পদ অর্জনের ঘটনা হিমশৈলের চূড়ামাত্র।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে প্রত্যাশিত নতুন বাংলাদেশে রাষ্ট্রকাঠামোর আমূল পরিবর্তনের অপরিহার্য অংশ হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠান আপাদমস্তক ঢেলে সাজাতে হবে। অন্যথায় দুর্নীতিমুক্ত, সুশাসন, গণতান্ত্রিক ও জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন অধরা থেকে যাবে।
খুলনা গেজেট/এমএম