পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এমন আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ হাতে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিট-১ এ রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল বা পরমাণু চুল্লিপাত্র স্থাপন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে এ কথা বলেন সরকার প্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দক্ষিণাঞ্চলে জায়গা খুঁজছি, কিন্তু আমাদের ওখানে আসলে শক্ত মাটি নাই। জায়গা পাওয়া খুব কঠিন দক্ষিণাঞ্চলে। তারপরও আমরা বিভিন্ন দিকে সার্ভে করছি। একটা পাওয়ার প্ল্যান্ট আমরা করব। একটা ভালো জায়গা কোথায় পাই…। ‘আমার ইচ্ছা পদ্মার ওপারেই করা। অর্থাৎ দক্ষিণাঞ্চলেই করা। আর একটা পাওয়ার প্লান্ট যদি করতে পারি, তাহলে বিদ্যুতের জন্য আর অসুবিধা হবে না।’
এর আগে প্রধানমন্ত্রী পৌনে ১২টার দিকে পরমাণু চুল্লিপাত্রের স্থাপনকাজ উদ্বোধন করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, রাশিয়ার পরমাণু শক্তি সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ এবং প্রকল্পের বাংলাদেশি ও রাশিয়ান কর্মকর্তারা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ যখন ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে…ইতোমধ্যে আমরা কিন্তু সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজ শুরু করে দিয়েছি। আমরা আশা করি, ২০২৪ সালের মধ্যে আমাদের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট হয়ে যাবে। এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নতি হবে।’
বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে সহযোগিতা করায় রাশিয়া সরকার ও দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করার পেছনে রাশিয়ার অবদানের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বন্ধু প্রতীম দেশ তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন, যা বর্তমানে রাশিয়া সর্বতভাবে সেই মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল থেকে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে সহযোগিতা করেছে। আমাদের চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাইন তুলতে গিয়ে রাশিয়ার দুজন জীবন পর্যন্ত দিয়ে গেছেন। তাদেরকে আমি স্মরণ করি।’
পারমাণবিক কেন্দ্রের ইতিহাস তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ ছিল বঞ্চিত। এই বঞ্চনার ইতিহাস কিন্তু পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কারণ ১৯৬১ সালে যখন সিদ্ধান্ত হলো এখানে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হবে তখন পাকিস্তানের সরকার শুধু জমিটায় দিয়েছিল।
‘বাঙালিদেরকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য শুধু জমিটা দেয়া হয়। এর বাইরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ক্ষীণ উদ্যোগ নেয়নি। বরং এর পেছনে যে অর্থ বরাদ্দ ছিল তা পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায় এবং সেখানে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করে।’
১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে জাতির পিতা এখানে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের দাবি তুলেছিলেন বলে জানান তার জ্যেষ্ঠ কন্যা। বলেন, পাকিস্তানিরা সেই ৬১ সাল থেকে ৭০ সাল পর্যন্ত কিছুই করেনি এখানে। এটাই বাস্তবতা।
স্বাধীনতার পর জাতির পিতা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে উদ্যোগ নিয়েছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একদিকে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়া, অপরদিকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ অনেক কঠিন ও ব্যয়বহুল ছিল। বাংলাদেশ অ্যাটোমিক এনার্জি কমিশন হিসেবে গঠন করে দেন তিনি। তখন ডক্টর ওয়াজেদ এটার পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনিও অনেক উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
‘৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যা করার পর এই উদ্যোগটা থেমে যায়। সেসময় অনেকগুলো নিয়ম মানতে হতো। জাতিসংঘের অনেক অনুশাসন ছিল সেগুলো সই করতে হতো। জাতির পিতা স্বাধীনতার পরেই আইএইএ-এর সঙ্গে চুক্তি করে ফেলেন। যার ফলে আমাদের এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে অনেক সহজ হয়।’
খুলনা গেজেট/এনএম