সাতক্ষীরা থেকে এখন ঢাকায় যেতে মাত্র ৫ ঘন্টা সময় লাগে। আগে যেখানে লাগত ৮ থেকে ১০ ঘন্টা। ঘাটে জ্যাম হলে কখনো কখনো ২৪ ঘন্টাও বাসে বসে থাকতে হতো। সাতক্ষীরার মানুষ কখনও ভাবতেই পারেনি সকালে রওনা দিয়ে দুপুরে ঢাকা পৌঁছে যাবে। আবার কাজ শেষ করে সেদিনই ফিরে আসা সম্ভব হবে। এমন স্বপ্ন আজ সত্য হয়েছে শুধুমাত্র পদ্মা সেতুর জন্য।
এক সময় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা সাতক্ষীরার সাথে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল নদীনির্ভর। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে দেশে সড়ক যোগাযোগের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ ক্ষেত্রে চলাচলে ছোট-বড় নদী অতিক্রম করতে হতো, চালু ছিল ফেরি। পরে ফেরির সংখ্যা কমলেও পদ্মা নদী পাড়ি দিতে অনেক সময় কেটে যেত যাত্রীদের। একজন রোগিকে জরুরী চিকিৎসা সেবা দিতে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় নিতে অনেক সময় লেগে যেত। ফেরিতে জানযটের কারণে অনেক সময় ঘাটেই রোগির মৃত্যুও হয়েছে। এজন্য সুদীর্ঘকাল ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে সাতক্ষীরাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর মানুষকে। পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সেই দীর্ঘ ভোগান্তি থেকে নিষ্কৃতি দিয়েছে।
এছাড়া চাকরির পরীক্ষা বা কলেজ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিতেও এ জেলার ছাত্র ছাত্রীদের এক দিন আগে ঢাকা শহরে পৌঁছানো লাগতো। কারণ ফেরিঘাটে যানজট ও মাঝে মধ্যে ফেরী বন্ধ থাকায় বেশ অসুবিধায় পড়তে হতো তাদের। এখন পদ্মা সেতু ব্যবহারের ফলে সময় লাগবে মাত্র ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। ইচ্ছা করলে এখন ভোরে রওনা হয়েও সকালে ঢাকায় গিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে শিক্ষার্থীরা।
দেশের খাদ্যশস্য ও মৎস্য উৎপাদনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী জেলা সাতক্ষীরা। সাতক্ষীরা জেলার সবজি, ফল ও মাছ এখন দ্রুততম সময়ে ঢাকা শহরে পৌঁছাবে। এছাড়া জেলার ভোমরা স্থলবন্দর ব্যবহার করে দ্রুত ভারতে থেকে মালামাল ঢাকা শহরে পৌঁছানোসহ সড়ক পথে সুন্দরবন ভ্রমণে পদ্মা সেতুর ব্যবহার সময় কমাবে দ্বিগুন। সাতক্ষীরার হিমায়িত চিংড়ি ও সাদা মাছ দ্রুত সময়ে পৌছাবে চট্রগ্রাম বন্দরে। ফলে সাতক্ষীরার অর্থনীতির চাকা পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে পদ্মা সেতু।
কলেজ ছাত্র দেবাশিষ দাস বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ভর্তি পরীক্ষা ও চাকরীর পরীক্ষা দেওয়ার জন্য এক দিন আগে আর ঢাকায় যাওয়ার দরকার হবে না। সকালে পরীক্ষা দিয়ে আবার বিকেলে সাতক্ষীরা ফিরতে পারবো। এটি আমাদের সাতক্ষীরাবাসীর জন্য অনেক বড় পাওয়া।
সাতক্ষীরা জেলা আ’লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ডা. সুব্রত ঘোষ বলেন, রোগী নিয়ে ঢাকায় যেতে গেলে অনেক সময় ফেরিঘাটে অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হতো। অনেক সময় রোগীর মৃত্যুও হতো ফেরিঘাটে। পদ্মা সেতু খুলে দেয়ায় এই সমস্যার সমাধান হয়েছে। সাতক্ষীরা থেকে মানুষ উন্নত চিকিৎসা নিতে এখন অল্প সময়ে ঢাকায় যেতে পারবে।
সাতক্ষীরা জেলা আ’লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক শেখ এজাজ আহমেদ স্বপন বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। ভারত থেকে ভোমরা বন্দর হয়ে সরাসরি পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পণ্য আনা নেয়া করতে খুবই কম সময় লাগবে। এতে করে ব্যবসায়িদের পণ্য পরিবহনে খরচ কমায় তারা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
পদ্মা সেতু সাতক্ষীরার অর্থনীতির চাকা পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে চিকিৎসা, কৃষি পণ্য পরিবহন, সুন্দরবন ভ্রমণ, ভোমরা স্থলবন্দর ব্যবহারসহ নানা ক্ষেত্রেই পদ্মাসেতু মাইল ফলক হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন জেলা আ’লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু।
তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে এমন একটি সেতু নির্মাণ করতে যাওয়ার কাজটি সহজ ছিল না। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ ছিল প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত দূরদর্শী ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। স্বপ্নের পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের আর্শিবাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। এই সেতুর কারণে পাল্টে যাবে দেশের দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের মানুষের জীবন যাত্রার মান, ঘুরিয়ে দিবে অর্থনীতির চাকা।
খুলনা গেজেট / আ হ আ