অভাব যখন চারপাশ দিয়ে ঘিরে ফেলেছে তখন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান থেকে খুবই অল্প টাকায় একটা ভ্যান পেলেন মারজিয়া খাতুন। ভ্যান চালিয়ে পয়সা উপার্জন বেশ শক্ত কাজ। তবে পেট তো আর এসব মানে না। অবশেষে স্বামীর পেশাকেই বেছে নিলেন, ভ্যান গাড়িকে বানালেন ময়লার গাড়ি। শুরু করলেন এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ময়লা সংগ্রহ করা।
সেই থেকে থেমে নেই মারজিয়া খাতুনের ময়লার গাড়ির চাকা। জীবিকার তাগিদে ১০ টি বছর শীত, বর্ষা, গরম উপেক্ষা করে মানুষের বাড়ি থেকে ময়লা নিয়ে ফেলছেন নির্দিষ্ট স্থানে। মাস শেষে বাড়ি হিসেবে পঞ্চাশ বা একশ টাকা যা পান তা দিয়েই চলছে তার জীবন। নগরীর ১৮, ২৫ এবং ২৬ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন রোডের বাড়ি গুলো থেকে তিনি প্রতিদিন ময়লা সংগ্রহ করেন। সকাল ৭ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত চলে তার কাজ। অধিকাশ সময়ই তাকে ময়লায় ভর্তি ভ্যান গাড়ি ঠেলতে হয়, বাইতে হয় চার পাঁচ তলার সিঁড়ি।
এতো কাজ থাকতে এই কাজটিকে কেন বেছে নিলেন জানতে চাইলে মারজিয়া খাতুন খুলনা গেজেটকে জানান, “আমার দুর্দিনে এই ভ্যানটি ছিলো একমাত্র সম্বল। খেয়ে পরে বাঁচতে তো হবে। ভাবলাম ভ্যান চালাইতে না পারি ঠ্যালতে তো পারবো। বাঁচার জন্য মানুষ আরো কতো কঠিন কাজই তো করে। আমি তো আর চুরি ডাকাতি করতিছি না। কষ্ট হইলেও হালাল পথে রোজগার করি।”
স্ট্রোকে স্বামী গত হয়েছেন অনেক দিন আগেই। তখন এক ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে সংসার ছিলো মারজিয়া খাতুনের। নিজে ইনকাম করে ছেলে মেয়ে দু’জনকেই বিয়ে দিয়েছেন। মোটা চাল আর মোটা কাপড়ে আগের থেকে এখন ভালো আছেন। তবে তার আগে পাড়ি দিয়েছেন অনেক কষ্টের পথ। তিনি বলেন, “আগে ময়লার গাড়ি টানার পর ও মানুষের বাড়িতে, দোকানে কাজ করতাম। ভ্যান ঠেলার সময় পুরুষ মানুষে তাকায় থাকতো। এসব এহন আর গায়ে লাগে না।”
সমাজে কঠোর পরিশ্রম করেই জীবন সংগ্রামে এখনো টিকে আছেন মারজিয়া খাতুনের মতো অসংখ্য নারী। এতো পরিশ্রমের পরেও ন্যায্য পাওনা থেকে অনেক সময় বঞ্চিত হন তারা। মারজিয়া বলেন, “এতো কাজের পরও যখন মাস শেষে একশ’ টাকা নিয়া মানুষ আজ না কাল বলে ঘুরায় তহন আর দুঃখ রাখার জায়গা পাই না। মানুষের তো বোঝা উচিত এই একশ’ টাকা পঞ্চাশ টাকা মিলিয়েই তো আমাদের সংসার চলে।”
খুলনা গেজেট/ টি আই