মহান আল্লাহ বলেন, হে ইমানদারগন! তোমাদের উপর রোজা আবশ্যক করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর করা হয়েছিলো, যাতে তোমরা খোদাভীরু হতে পার।
পবিত্র কুরআনের এই আয়াতের দিকে গভীর লক্ষ করলে সুস্পষ্টরূপে বোঝা যায় যে, রোজা দ্বারা মহান আল্লাহর উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া বা খোদাভীরুতা। এটা একটি সার্বজনীন ব্যাপার যে, আদেশদাতা তার হুকুম দ্বারা নিদৃষ্ট কিছু উদ্দেশ্য করে থাকেন। যা তার আদেশের গভীরে নিহিত থাকে। আর উক্ত বিষয়টি হাসিল হওয়া ছাড়া তার আদেশ পালনের স্বার্থকতা মেলে না।
মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে রোজা রাখার নির্দেশ নিছক না খেয়ে থাকার নাম নয়। আবার দিনভর পিপাসার্ত থাকার জন্যও নয়। বরং এই নির্দেশের আড়ালে মহান আল্লাহর একটি মহৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। এই উদ্দেশ্যের মাঝেই না খেয়ে থাকার সার্থকতা নিহিত। নতুবা তা একটি উপোস দিন অতিবাহিত করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
প্রিয় নবীজি সা. এ বিষয়ের দিকে ইঙ্গিতপূর্বক বলেন, কতেক রোজাদার আছে যাদের না খেয়ে থাকার কষ্ট বরদাশত করা ছাড়া আর কিছুই অর্জিত হয় না। (মুসনাদে আহমাদ-১৬৮৫)
সুতরাং রোজার মূল লক্ষ হলো তাক্বওয়া বা খোদাভীরুতা অর্জন। আর তাকওয়া বা খোদাভীরুতার সারকথা হলো মহান আল্লাহর সকল হারাম বা নিষেধাজ্ঞা থেকে নিজেকে বিরত রাখা। এটা একজন মুমিনের চূড়ান্ত সাফল্য। মহান আল্লাহ বলেন-
{ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَخْشَ اللَّهَ وَيَتَّقْهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَائِزُونَ} [النور: 52]
যে ব্যাক্তি আল্লাহ এবং তার রসুলের অনুগত্য করে এবং আল্লাহকে ভয় করে এবং তার নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকে নিশ্চয় তারাই প্রকৃত সফলকাম। (সুরা নুর-৫২)
অপর আয়াতে বলেন-
{فَاتَّقُوا اللَّهَ يَاأُولِي الْأَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ} [المائدة: 100]
ওহে জ্ঞানীরা তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর। যাতে তোমরা সফল হতে পার। (সুরা মায়দা-১০০)
তাকওয়া মুমিনের জিবনের প্রকৃত সম্বল। পার্থিব্য বিভিন্ন অবলম্বন যা মানুষ দুনিয়ায় জিবন যাপনের ক্ষেত্রে গ্রহণ করে থাকে তার মাঝে সবচেয়ে স্থায়ী ও কার্যকরী হলো তাকওয়ার সম্বল। মহান আল্লাহ বলেন-
{وَتَزَوَّدُوا فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوَى} [البقرة: 197]
তোমরা পার্থিব জীবনের উপায় উপকরণ গ্রহণ কর। তবে (মনে রেখ) নিশ্চয় তাকওয়ার সম্বলই উত্তম অবলম্বন।
এছাড়াও তাক্বওয়ার গুরুত্ব বর্ণনায় পবিত্র কুরআনে প্রায় অর্থশতাধিক আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। যা এর দুনিয়া ও আখেরাতের বহুবিদ তাৎপর্য প্রমাণ করে। আর রমজানের রোজা একজন মুমিনের জন্য এই মহান পুজি অর্জনের বিশেষ মাধ্যম।
সুতরাং রোজা মুমিনকে এই শিক্ষাই দিতে চায়, যেভাবে বদ্ধ ঘরের মাঝে খাবার পানির ব্যবস্থা থাকা সত্বেও কেবল আল্লাহকে ভয় করে তা থেকে বিরত থাকা হয়। তদ্রুপ আল্লাহর হারামকৃত প্রতিটি বিষয় থেকে এভাবেই বিরত থাকতে হবে। প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে সর্বত্র আল্লাহকে ভয় করতে হবে। সব ধরনের গোনাহ যেমন চোখের গোনাহ, মুখের গোনাহ এবং শারীরিক অন্যান্য অঙ্গ প্রতঙ্গের গোনাহ। আর এটাই মূলত: তাক্বওয়ার দাবি। আর ইহাই প্রকৃত রোজাদারের প্রাপ্তি।
(লেখক : শিক্ষক, ইমদাদুল উলুম রশিদিয়া মাদরাসা, ফুলবাড়ী গেট, খুলনা )