ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দফায় দফায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের রড, চাপাতি-লাঠি হকিস্টিকের হামলায় ছাত্রদলের অন্তত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এদের অনেককেই চিকিৎসার জন্য নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আজ মঙ্গলবার(২৪ মে) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়স্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনের সড়কে ও দোয়েল চত্বরে দফায় দফায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।
গত বেশ কয়েক দিন নাগাদ দুই ছাত্র সংগঠনের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। মূলত গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের এক বিক্ষোভ মিছিলে তাদের সাধারণ সম্পাদকে সাইফ মাহমুদ জুয়লের দেয়া বক্তব্য থেকে ঘটনার সূত্রপাত।
ছাত্রলীগের দাবি, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ছাত্রদল সেক্রেটারি আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। এর সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা উস্কানিমূলক স্ট্যাটাস দিতে থাকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ছাত্রদলে উপর হামলার ঘটনাও ঘটেছিল।
হামলার প্রতিবাদে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয় ছাত্রদল। তবে সেটি প্রতিহতে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিলে সংঘর্ষ অনেকটা অনিবার্য হয়ে ওঠে। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা মেডিকেলে সামনে থেকে ছাত্রদল মিছিল নিয়ে টিএসসির দিকে আসার চেষ্টা করলে সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগের আশপাশের বিভিন্ন হলের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায় বলে জানান।
হামলা প্রসঙ্গে ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, আমাদের সাধারণ সম্পাদককে ছাত্রলীগ গত কয়েকদিন ধরে যে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে সেটি পরিষ্কার করতে আমরা আজ টিএসসিতে এক সংবাদ সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিই। সে উদ্দেশ্যে আজ সকাল ৯টার দিকে মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারের সামনে আসলে এসএম হল, ফজলুল হক হল, জগন্নাথ হল সহ আশপাশের বিভিন্ন হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের উপর কোন কারন ছাড়াই চড়াও হয়।
বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তারা রড-লাঠি হকিস্টিক উদ্দেশ্যে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের উপর ন্যক্কারজনক হামলা চালায়। তাদের হামলায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি রাশেদ ইকবাল, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসার মোহাম্মদ ইয়াহিয়া ও মিছিলের সামনে থাকা নারীনেত্রীরা সহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
এদিকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসা ছাত্রদলের আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ জড়ো হতে থাকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব এর নেতৃত্বে ঢাকা মেডিকেল থেকে ছাত্রদল একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করে। সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী অংশগ্রহণে চলা মিছিলটি দোয়েল চত্বরের সামনে এলে ফের ছাত্রলীগের প্রতিরোধের মুখে পড়ে। এ সময় দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে ইটপাটকেল ছোঁড়া-ছুড়ি ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সামনে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি ছাত্রদল নেতাকর্মীরা।
ছাত্রলীগের ধাওয়ায় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় পিছিয়ে পড়া ছাত্রদলের দুই নেতাকর্মীকে বেড়ধক পেটাতে দেখা যায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদেরকে। পরে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন হল থেকে লাঠিসোটা, রড, চাপাতি নিয়ে ছাত্রলীগ অসংখ্য নেতাকর্মী মারমুখী মনোভাব নিয়ে দোয়েল চত্বরের সামনে অবস্থান নিতে থাকে।
মূলত আজ সকাল থেকেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে ছাত্রলীগের অবস্থান ছিল চোখে পড়ার মতো। এসময় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা সন্দেহভাজন সবার কাছে নাম পরিচয় জিজ্ঞেস ও ফোন চ্যাক করছিল। ছাত্রদল সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ায় বেশ কয়েকজনকে মারধর ও হেনস্থা করার অভিযোগও উঠেছে সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
তবে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বহিরাগতদের নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে সাধারণ ছাত্রদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে। এর সাথে ছাত্রলীগের কোন ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই।