খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

ড. মসিউর রহমানের স্মৃতিচারণ, নিজ হাতে প্লেট এগিয়ে দিয়ে ভাত মাছ উঠিয়ে দিতেন বঙ্গবন্ধু

একরামুল হোসেন লিপু

ড. মসিউর রহমান ‘৭২ সাল থেকে ‘৭৫ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সচিব ছিলেন। একান্ত সচিব হিসেবে তিনি বঙ্গবন্ধুকে অত্যন্ত কাছ থেকে দেখেছেন। দেখেছেন বঙ্গবন্ধুর মহানুভবতা, বয়সে বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা ও সৌজন্যবোধ, সমসাময়িক রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়েদের জন্য গভীর স্নেহবোধসহ নানাবিধ বিষয় উঠে এসেছে তার স্মৃতিচারণে।

বঙ্গবন্ধু সমাজ কল্যাণ পরিষদের জাতীয় শোক দিবসের ‘শোকাশ্রু’ নামক একটি প্রকাশনায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি নিয়ে লেখা ড. মসিউর রহমান লিখেছেন, সকাল হতে দুপুর পর্যন্ত অনেক সময় আরো বেশি সময় বঙ্গবন্ধু অফিসে ব্যস্ত থাকতেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব এবং অনেক সময় কর্পোরেশন প্রধানগণ তাঁর কাছে আসতেন। রাজনৈতিক নেতারাও আসতেন। সাধারণত বিকেল বেলা রাজনীতিবিদদের সাথে দেখা করার জন্য নির্ধারিত ছিলো। বঙ্গবন্ধুর দরজা সবার জন্য খোলা ছিলো। আমাদের কাছে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বা জটিল নথি থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে দেখার সুযোগ পেতাম না। খুব বেশি জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ হলে দুপুরে খাবার বা বিশ্রামের সময় তাঁর কাছে আবার যেতাম।

খাবার সময়ে গেলে মুখের দিকে তাকিয়ে প্রথম প্রশ্ন তুমি খেয়েছো? আমরা সরাসরি হ্যাঁ বা না বলে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করতাম। তিনি কিছু সময় মুখের দিকে তাকিয়ে বলতেন “তোমার মুখ শুকনো দেখা যাচ্ছে, খাও পরে কাজ”। নিজ হাতে প্লেট এগিয়ে দিয়ে ভাত, মাছ উঠিয়ে দিতেন। কৈ মাছ ও মাছের মাথা ছিলো বঙ্গবন্ধুর নিত্যদিনের মেনু। দেশের প্রধানমন্ত্রীর সামনে কৈ মাছ খাওয়া দুষ্কর। পরিবেশ সহজ করার জন্য তিনি হয়তো বলতেন, “তোমরা মাছ খাওয়া শেখোনি, দেখো এভাবে খেতে হয়”। কৈ মাছের কাঁটা সরিয়ে বা মাছের মাথা হাত দিয়ে ভেঙ্গে কিভাবে মুখে পুড়তে হয় দেখিয়ে দিতেন। খাওয়া শেষ হলে নথির বিষয়বস্তু পড়ে শোনাতাম, তিনি সিদ্ধান্ত দিয়ে লিখে নিয়ে যেতে বলতেন। জটিল বিষয় হলে নথির আদ্যপান্ত পড়ে দেখতেন এবং সিদ্ধান্ত দিতেন। প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বা সচিবের সাথে তখনই আলাপ করে নিতেন।

যারা বঙ্গবন্ধুর চেয়ে বয়সে বড় এবং যাদের সাথে তার আগে পরিচয় বা ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিলো, তাদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর শ্রদ্ধা ও সৌজন্যবোধ ছিল স্বভাবজাত। জনাব জহুরুল হক পাকিস্তানের তথ্য মন্ত্রণালয়ে চাকরি করতেন। যুদ্ধের সময় হাজতবাসে ছিলেন। কিছু জার্মান কবিতা বা ছোটগল্প অনুবাদ করেছিলেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে তথ্য মন্ত্রণালয়ের যোগদান করলে (খুব সম্ভব সচিব পদে) পত্র-পত্রিকায় তাকে নিয়ে সমালোচনা হয়। বঙ্গবন্ধু তাকে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব হিসেবে কাছে নিয়ে আসেন। বঙ্গবন্ধু তাকে জহুর ভাই বলে সম্বোধন করতেন। প্রধানমন্ত্রীর কামরায় জহুরুল হক সাহেব গেলে বঙ্গবন্ধু দাঁড়িয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা করতেন এবং বসতে বলতেন। একদিন তিনি বললেন, “তোমারা জানো জহুর ভাই কে”? বয়স্ক সরকারি কর্মকর্তা ছাড়া তার অন্য পরিচয় আমাদের জানা ছিল না। বঙ্গবন্ধু বললেন, “জহুর ভাই বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী’র (১৯৪৭ সালের আগে) ইংরেজি বক্তৃতা লিখতেন। শহীদ সাহেব খুব কম লোকের ইংরেজি লেখা কাটাছেঁড়া না করে গ্রহণ করতেন না। জহুর ভাইয়ের লেখায় তিনি হাত ছোঁয়াতেন না”। জহুরুল হক সাহেব কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পাস করেন, জার্মান ও ফরাসি সাহিত্য সম্পর্কে তার অনুসন্ধিৎসা ও জ্ঞান ছিলো।
প্রবীণ ও সমসাময়িক রাজনীতিবিদদের সাথে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল অন্তরঙ্গ। কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মণি সিং কে তিনি মনি দা বলে সম্বোধন করতেন। কিছুটা পরিহাসের সুরে বলতেন, “মনি দা আর কতদিন অন্ধকারে থাকবেন এবার আলোতে আসেন”। মুজাফফর ন্যাপের নেতা মুজাফফর আহমেদ’র সাথে ছিলো বন্ধুসুলভ আচরণ। মাওলানা ভাসানীসহ সকল রাজনীতিবিদের প্রতি শ্রদ্ধা ছিলো অবিমিশ্র। সাংবাদিক নির্মল সেনকে বঙ্গবন্ধু ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন। সাংবাদিকদের মধ্যে কে,জি মোস্তফা, এম আর আক্তার মুকুল, (মুকুল ভাই) এবং এবিএম মুসা( মুসা ভাই) প্রায়ই আসতেন। বঙ্গবন্ধুর কাছে আসতে তাদের কোন বাঁধা ছিলো না।

সমসাময়িক রাজনীতিবিদদের ছেলেমেয়েদের জন্য বঙ্গবন্ধুর ছিলো গভীর স্নেহ। রাজনীতিতে তাদের বাবা কোন মতাদর্শের ছিলেন তা আদৌ বঙ্গবন্ধুর বিবেচনায় আসত না। তাদের পরিবার এবং ছেলেমেয়েরা কোন অসুবিধায় পড়েছে জানলে তিনি তাদের উপকার বা সাহায্য করতে কার্পণ্য করতেন না।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!