দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় এক ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ সময়ে এইডিস মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৯৬ জন। তাতে চলতি মাসের প্রথম তিন সপ্তায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৪৬৫ জনে। আর এ বছরের শুরু থেকে ধরলে মোট রোগীর সংখ্যা হয়েছে ২৮ হাজার ৪৪৩ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, নতুন একজনসহ চলতি বছর ডেঙ্গু মৃতের মোট সংখ্যা পৌঁছেছে ১৫৬ জনে, যাদের মধ্যে ১০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে চলতি মাসের ২০ দিনে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার বাইরেই বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঢাকায় ৪০৩ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৯৩ জন ভর্তি হয়েছেন।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৬ হাজার ৭৬ জন রোগী। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৩ হাজার ৫৬০ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ২ হাজার ৫১৬ জন।
এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্রুত বাড়ছে। জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫৬ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, জুলাইয়ের প্রথম ২০ দিনেই সেই সংখ্যা বেড়ে তিনগুণ হয়েছে। আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুও বেড়েছে। গত মাসে ৩৪ জনের মৃত্যু হলেও চলতি মাসের তিন সপ্তাহে প্রাণ গেছে ১০৯ জনের।
মাসের হিসাবে জানুয়ারিতে ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন, এপ্রিলে ১৪৩ জন এবং মে মাসে ১ হাজার ৩৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে জানুয়ারিতে ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন, এপ্রিলে দুজন এবং মে মাসে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
এ বছর এইডিস মশা শনাক্তে চালানো জরিপে ঢাকায় মশার যে উপস্থিতি দেখা গেছে, তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় সামনে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়ার আশঙ্কা করেছেন তারা।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ বছর যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিলেন এবং শক সিনড্রোমে মারা গেছেন।
এইডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছর ৬২ হাজার ৩৮২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে রেকর্ড ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।
এর আগে ২০১৯ সালে দেশের ৬৪ জেলায় এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। সরকারি হিসাবে সে বছর মৃত্যু হয়েছিল ১৭৯ জনের।
গত তিন দিন ধরে দৈনিক দেড় সহস্রাধিক করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছিল হাসপাতালে। এর মধ্যে মঙ্গলবার মারা যায় ১৩ জন, তার পরদিনই সর্বোচ্চ ১৯ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছিল। আর বৃহস্পতিবার এই সংখ্যা ৯ থাকলেও শুক্রবার বেশির ভাগ হাসপাতাল তথ্য না দেওয়ায় প্রকৃত চিত্র উঠে আসেনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম ঢাকা মহানগরের ২০টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালের এবং বেসরকারি ৪৮টি হাসপাতালের তথ্য সংগ্রহ করে পরিসংখ্যান দেয় প্রতিদিনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
এর মধ্যে ছয়টি সরকারি হাসপাতাল এবং ২৯টি বেসরকারি হাসপাতাল তথ্য দেয়নি বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
সরকারি যেসব হাসপাতাল তথ্য দেয়নি, তার মধ্যে রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল হাসপাতাল, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সাভার) এবং বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট।
খুলনা গেজেট/এনএম