ধান চাষের চেয়ে সবজি চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। অল্প সময়ের মধ্যে স্বল্প পরিশ্রমে ফসল পাওয়া যায়। তাছাড়া সময়মতো পানি দাও, সার দাও আরও কত ঝামেলা, তাই ১৫ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ না করে সবজি চাষ করছি। এতে ঝামেলা কম, লাভও বেশি।’ কথাগুলো বলছিলেন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর গ্রামের চাষি মেহেদী হাসান বাবলু।
শুধু মেহেদী নন, গত কয়েক মৌসুমে ধান চাষ করে লোকসান গোনার পর অনেক চাষিই এখন ধান চাষ না করে সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন। ডুমুরিয়ার কুলবাড়িয়া, ধূলবাড়িয়া, শরাফপুর, আকড়া, খর্ণিয়া, বরাতিয়া, চুকনগর, পাঁচপোড়া, মধুগ্রাম ও গুটুদিয়া গ্রামে এ বছর ব্যাপক হারে সবজি চাষ হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম ভালো পাওয়ায় খুশি চাষিরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রমতে, চলতি রবি মৌসুমে উপজেলায় ৩ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ হয়েছে। গত বছর উপজেলায় সবজি আবাদ হয়েছিল ৩ হাজার ১ শ’ হেক্টর জমিতে। এ বছর সবজির আবাদ বেড়েছে ৪০০ হেক্টর জমিতে। উপজেলায় এ বছর আমন ধান আবাদ হয়েছে ১৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে, যেখানে গত বছর আবাদ হয়েছিল ১৫ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর, খর্ণিয়া, কুলবাড়িয়া, শরাফপুর ও পাঁচপোড়া এলাকায় ধানের পাশাপাশি বিস্তীর্ণ জমিতে ব্যাপক হারে সবজির চাষ হয়েছে। এসব জমিতে শিম, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, ঢেঁড়স, বরবটি, করলা, মরিচ, বেগুন, টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ হয়েছে।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৭ সালের পর থেকে বোরো ও আমন ধান আবাদ করে ন্যায্যমূল্যে না পাওয়ায় কৃষকদের ব্যাপক লোকসান গুনতে হয়েছে। ধান আবাদ করে লাভের মুখ দেখতে গিয়ে উল্টো অনেক কৃষক ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষকেরা ধান চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। এই লোকসান থেকে বাঁচতে অনেক কৃষক আস্তে আস্তে সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের কৃষক যাঁরা সাধারণত নিজেরা শ্রম দিতে পারেন, এমন কৃষকেরা ধান চাষ ছেড়ে দিয়ে সবজি চাষের দিকে বেশি ঝুঁকছেন।
উপজেলার শরাফপুর গ্রামের কৃষক সরোয়ার হোসেন বলেন, তাঁর ছয় বিঘা আবাদি জমি রয়েছে। সবজি চাষের জন্য এবার আড়াই বিঘা জমিতে ধান চাষ করেননি। ওই আড়াই বিঘা জমিতে তিনি শিম ও করলা চাষ করেছেন। অথচ বিগত বছরগুলোতে সরোয়ার তাঁর ছয় বিঘা জমিতে ধান আবাদ করতেন।
সরোয়ার বলেন, বাজারে এখন নতুন ধানের দাম মণপ্রতি সর্বোচ্চ ৭৪০ টাকা। আড়াই বিঘা জমিতে খুব বেশি হলে ৬০ মণ ধান পাওয়া যাবে। ৬০ ধান বিক্রি করে আসবে ৪৪ হাজার ৪০০ টাকা। অথচ আড়াই বিঘা জমিতে লাগানো শিম, ঝিঙা, ধুন্দুল ও করলা বিক্রি করে তাঁর প্রায় ৫০ হাজার টাকা এসেছে। আরও দুই থেকে তিন মাস তিনি এই সবজি বিক্রি করতে পারবেন।
কুলবাড়িয়া গ্রামের আরেক চাষি মিজানুর রহমান বলেন, ধান চাষের চেয়ে সবজি চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। ধানের দাম না পাওয়ায় এলাকার অনেক কৃষক ধান আবাদ ছেড়ে দিয়ে সবজি চাষে ঝুঁকছেন। ন্যায্যমূল্য না পেলে ধীরে ধীরে ধানের আবাদ আরও কমবে।
পাঁচপোড়া গ্রামের রেহেনা বেগম নামের এক কৃষাণী বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর আমি বেশি জমিতে সবজি ও তরমুজ আবাদ করেছি। ইতিমধ্যে আমার খেতের চিচিঙ্গা, ধুন্দুল ও তরমুজ ওঠা শুরু করেছে। বাজারে দামও ভালো।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোছাদ্দেক হোসেন খুলনা গেজেটকে বলেন, ডুমুরিয়ার মাটি সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বিশেষ করে কুলবাড়িয়া, ধূলবাড়িয়া. চুকনগর, খর্ণিয়া ও বরাতিয়া এলাকায় ব্যাপক হারে সবজি চাষ হচ্ছে এবং প্রতি বছর সবজি চাষ বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, সবজির আবাদ বাড়ার বিষয়টি খুবই ইতিবাচক। গত কয়েক মৌসুম ধরে ধানের দামটা অস্বাভাবিক কম ছিল। এ জন্য কৃষকেরা সবজির দিকে বেশি ঝুঁকছেন। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের কম খরচে অধিক লাভ হয় এমন ফসল আবাদে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
খুলনা গেজেট / এআর / এমএম