কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সবজি ক্ষেত, মৎস্য ঘের ও রাস্তাঘাট। পানি সরবরাহের সুব্যবস্থা না থাকায় গত এক সপ্তাহে পানি কমেনি। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ দৃশ্য দেখা গেছে।
সারাদেশের ন্যায় ডুমুরিয়ায় গত সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার ভারী বৃষ্টিপাত হয়। যার প্রভাবে এরই মধ্যে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার ফসলের ক্ষেত ও মাছের ঘের। এছাড়া গ্রামীণ মাটি ও ইটের রাস্তা গুলো সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তবে ক্ষয়ক্ষতির দিক দিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে রংপুর ইউনিয়নে। এখানকার অধিকাংশ মাছের ঘেরের বেঁড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। আর বেঁড়িতে থাকা সবজি লাউ, কুমড়া, ঢেড়শের গাছ পানির সাথে মিশে গেছে। গ্রামের রাস্তাঘাটও ঠিক নেই। ইউনিয়নের বটবেড়া ও মুজারঘুটার এলাকার মানুষ পানিবদ্ধ অবস্থায় এখনও জীবন-যাপন করছে।
এছাড়াও ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে রয়েছে পার্শ্ববতী রঘুনাথপুর ইউনিয়নের দেড়ুলি ও কৃষ্ণনগর এলাকা, ধামালিয়া ও রুদাঘরা ইউনিয়নে।
বৃষ্টির প্রভাবে উপজেলার গুটুদিয়ার লতা-খামার বাটিসহ লাইন বিল-পাবলা, বিল আবাদ, শিবপুর কুলটি এলাকাতেও অনেক ক্ষতি হয়েছে। প্রবাহিত নদী না থাকায় এসব পানি নামানো যাচ্ছে না।
এছাড়া উপজেলার মাগুরাঘোনা, আটলিয়া, শোভনা ও খর্ণিয়া এলাকায় ক্ষেতের সবজি লাল শাক, পালং শাক, বেগুন, ফুলকপি, পটল ও ধুন্দল ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
এ ব্যাপারে ভদ্রদিয়া গ্রামের পরিতোষ হালদার বলেন, অতি বর্ষণ এবং সময়মত পানি সরে না যাওয়ার কারণে এক হাজারের অধিক আগাম ফুলকপির গাছ মারা গেছে তার।
বৃষ্টির এই পরিস্থিতি নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, ফসল উৎপাদনের দিক দিয়ে ডুমুরিয়া উপজেলায় এবার খুব ভালো অবস্থানে ছিল। কৃষকদের উৎপাদিত ফসল হিসেবে মাছের ঘেরের বেঁড়িতে তরমুজ, লাউ, কুমড়া, শসা, করলায় ছেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সীমাহীন ক্ষতি হয়ে গেলো। ঘেরের অধিকাংশ বেঁড়িগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকায় তাতে পচন ধরে গাছ গুলো মরে যাচ্ছে। জমিতে থাকা শাক-সবজি, সিম, বেগুন ও ধুন্দল জাতীয় ফসলের অবস্থাও বেশি ভালো না। অতি বৃষ্টিপাতে কোন ফসল ঠিকমত হয় না।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুবকর সিদ্দিক বলেন, উপজেলার অধিকাংশ মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে। তার মধ্যে প্রবাহমান নদী সংলগ্ন কিছু সংখ্যক ঘের ঠিক আছে। এছাড়া অন্যান্য বিলের ভিতরে থাকা ঘের গুলোর অবস্থা খুবই খারাপ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফ আসিফ রহমান বলেন, প্রাকৃতিক এ দুর্যোগের কারণে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অতি বৃষ্টির প্রভাবে ফসলের ক্ষেত, মাছের ঘের, মাধবকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গ্রামীণ রাস্তাঘাট, মাটির-বাড়িঘর সবই নিয়ে একটা সংকট পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এর মধ্যেও আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। বিশেষ করে মানুষের জান-জীবন রক্ষায় তাদেরকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এনএম