খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  অ্যান্টিগা টেস্ট: তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ২৬৯/৯, পিছিয়ে ১৮১ রানে

ডাক্তার-পুলিশ (মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা)

মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান

ইফতার করতে বসবো ঠিক এমন সময়, একটি থানা থেকে অফিসার ইনচার্জ ফোন করলো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন রোগীর আত্মীয় স্বজন কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্সদের উপর চড়াও হয়েছেন। কারণ হিসেবে জানালেন, একজন সন্তানসম্ভবা মা জরুরি অবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা নিতে এসে যথাযথ ব্যবস্থাপনা না পেয়ে/তাকে ঠিকমত না দেখেই খুলনায় রেফার করেন, অসহায় আত্মীয়-স্বজন রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে নেওয়ার প্রস্তুতিকালে সন্তানসম্ভবা মা মারা যান। এমন অবস্থায় রোগীর লোকজন হাসপাতালের উপর চড়াও হন। থানায় ফোন করলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন এবং ডাক্তারদের যথাযথ নিরাপত্তা প্রদান করেন।

আমরা যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করি তাদের কাছে এটি নিত্যদিনের ঘটনা। প্রতিদিন এই কোথাও না কোথাও হাসপাতাল ক্লিনিক সরকারি হোক আর বেসরকারি হোক ব্যক্তিগত হোক অসন্তুষ্ট রোগীর পক্ষ এমনভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে তুলকালাম কান্ড করে ফেলেন। মিডিয়াতে আসুক বা না আসুক পুলিশ সবসময় দায়িত্ব পালনে এগিয়ে যায়। স্বাস্থ্যসেবা খাতের যেকোনো সহযোগিতায় পুলিশ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা প্রদান করে থাকে।

জেলা পর্যায়ে পুলিশ এবং ডাক্তারগণের পারস্পারিক যোগাযোগ শ্রদ্ধাবোধ সহযোগিতা ইত্যাদি কতিপয় ব্যতিক্রম ছাড়া অত্যন্ত সুন্দরভাবে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের জায়গা থেকে এগিয়ে যায়। পৃথিবীর অল্প কয়েকটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম যেখানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর উৎশৃংখল জনতার হামলার ক্ষেত্রে এগিয়ে। হরতাল অবরোধ রাজনৈতিক সহিংসতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে আহত নিহত পুলিশের দ্রুত সেবা চিকিৎসা ও আশ্রয়স্থল এ সকল হাসপাতালের ডাক্তারগণ। জরুরী প্রয়োাজনে তারা পুলিশ সদস্যদের দ্রুত সেবা প্রদান করে থাকেন।

অনেকে হয়তো জানেনা পুলিশের কাজের সাথে চিকিৎসকদের কাজের অনেক সরাসরি সংযোগ রয়েছে। মারামারির মামলার মেডিকেল সার্টিফিকেট, পোস্টমর্টেম, ফরেনসিক টেস্ট, নেশাগ্রস্ত মাতালদের পরীক্ষা, ডোপ টেস্ট ইত্যাদি ক্ষেত্রে পুলিশের সাথে ডাক্তারদের সরাসরি কাজ রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করেছেন বা করেন তারা উভয়ে উভয় বিভাগের সুখ-দুঃখ সুবিধা অসুবিধা গভীরভাবে উপলব্ধি করেন। যার ফলে আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতায় দেখা, মাঠ পর্যায়ে যারা দুর্দিনে দুঃসময়ে বিপদে আপদে একসাথে কাজ করে তাদের মধ্যে কখনো কোনো সমস্যা সৃষ্টি হতে দেখি না। পুলিশ সদস্যদের জন্য ব্যতিক্রম অভিজ্ঞতার মধ্যে রয়েছে অন্য যে সকল সার্ভিসের লোকজনের মাঠ পর্যায়ে তৃণমূলে এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই, তারাই বিভিন্ন সময়ে তাদের কর্মজীবনে ছোটখাটো কোনো বিষয়ে অথবা যেসব বিষয় এড়িয়ে যাওয়া যায় সেসব ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঝামেলা সৃষ্টি করে এবং অন্যদেরকে প্রতিপক্ষ মনে করে। মাঠ পর্যায়ে যে সকল কর্মকর্তা যেকোনো সার্ভিসের হোক একত্রে দুঃসময় সুসময় কাজ করে তাদের ক্ষেত্রে পরবর্তীতে কাজ করা অনেক সহজ। কারণ সবাই সবার সীমাবদ্ধতা, কাজের পরিবেশ সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে অবগত থাকে।

সেবা করলেই সুনাম
আমাদের দেশে পুলিশ সার্ভিস ছাড়া অন্য সার্ভিসসমূহ যেমন ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি ক্ষেত্রে শুধু সেবা করলেই জনগণের পরিপূর্ণ সুনাম অর্জন করা যায়। কিন্তু পুলিশের কাজের ক্ষেত্রে যাকে বা যাদেরকে সেবা করা হবে তার প্রতিপক্ষ পুলিশকে শত্রু হিসেবে গণ্য করে। যেমন মামলার আসামি গ্রেপ্তার করলে বাদীপক্ষ খুশি হয়ে থাকে, কিন্তু বিবাদী পক্ষ তার আত্মীয়স্বজন প্রতিবেশী সবাই পুলিশের উপর নাখোশ হয়। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সময়ের বিবেচনায় একপক্ষ পুলিশকে ভালো বললেও বিরোধীপক্ষ সবাই পুলিশকে শত্রু মনে করে। রাজনৈতিক ক্ষমতার পালাবদলে পুলিশ কারো কারো আপনজন হলেও অন্যদের কাছে ব্যতিক্রম। এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে মামলা রুজু, ওয়ারেন্ট তামিল, আইন ভঙ্গ করা গাডির বিরুদ্ধে মামলা, জরিমানা আদায়, করোনার সময় বাইরে বের হওয়া যাবেনা মর্মে বাধা প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে একপক্ষ সন্তুষ্ট হলেও অথবা আইন প্রয়োগ হলেও অন্যপক্ষ স্বাভাবিকভাবেই পুলিশের উপরে রুষ্ট হন। কিন্তু যে সকল সার্ভিসে শুধুই সেবা করলে যেমন যথাযথ চিকিৎসা সেবা প্রদান করলে, ভালো মানের রাস্তা তৈরি করলে, ভালো ব্রিজ তৈরি করলে, যথাসময়ে জমির দলিলপত্র নামজারি সম্পন্ন করে দিলে শুধু সুনাম আর সুনাম, দোয়া আর দোয়া সেইসব সার্ভিস কি পরিপূর্ণ সুনামের অধিকারী হতে পেরেছে?

জাতিসংঘে বাংলাদেশ পুলিশ সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা লাভ করে। কিন্তু একই পুলিশ বাংলাদেশের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কেন তা পারে না তা খতিয়ে দেখা দরকার। ব্রিটিশ পুলিশ, পাকিস্তানি পুলিশ, সামরিক পুলিশ, স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশ, সব বিদায় নিয়ে আমরা আধুনিক গণতান্ত্রিক সময়ে জন্ম নেওয়া সন্তানেরা পুলিশে চাকরি করি। আমরাও কেন জনগণের কাঙ্খিত মাত্রায় সেবা প্রদান করতে পারি না তা খুঁজে বের করা দরকার। পুলিশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা নিতে নিতেই প্রতিবছর শত শত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-পুলিশে যোগদান করে। তাদের সেবা প্রদান করার ক্ষেত্রে বাঁধা কোথায় তা খুঁজে বের করা দরকার।

রাস্তা ছেড়ে দিলে ক্ষতি কার
মেডিকেল সার্ভিসের সদস্যগণ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন। পুলিশ সদস্যগণ সরকারের আদেশ নির্দেশ মোতাবেক যাতে বিনা প্রয়োজনে কেউ রাস্তায় না নামে সে ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করেন। এই রাস্তায় নেমে আসার ক্ষেত্রে শৈথিল্য প্রদর্শন কেউ কি ভেবে দেখেছেন করোনার ভয়াবহতা কোথায় গিয়ে পড়বে, তা অবশ্যই ওই ডাক্তারের ওই হাসপাতালের উপরে গিয়ে পড়বে। সামরিক বাহিনীতে প্রচলিত রয়েছে ‘কঠোর প্রশিক্ষণ সহজ যুদ্ধ’। অর্থাৎ বাহিরে যত বেশি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে হাসপাতালের উপর তত কম চাপ পড়বে। আমি মনে করি বাহিরের এই পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে প্রচলিত হাসপাতাল এবং সম্মানিত ডাক্তারগনের পক্ষে কোনভাবেই এই করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব নয়।

(লেখাটি সাতক্ষীরার পুলিশ সুপারের ব্যক্তিগত ফেইসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত)

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!