খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ইসি গঠনে সার্চ কমিটি ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতি পালিয়েছে
  সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের তিন সহযোগী গ্রেপ্তার
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৩৪
  যাত্রাবাড়িতে ব্যাটারিচালিত অটো রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ, সংঘর্ষে দুই পুলিশ আহত

ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়, ভয়াবহ দুর্ভোগে উত্তরবঙ্গের যাত্রীরা

গে‌জেট ডেস্ক

রাজধানীর জিগাতলা থেকে ভোর সাড়ে ৫টায় স্বামীর সঙ্গে কমলাপুর স্টেশনে আসেন মেরিনা আক্তার। তার কোলে ১০ মাস বয়সের ছেলে আব্দুল্লাহ আল আমিন, আর সঙ্গে ৬ বছর বয়সী বড় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস। রোববার (১০ জুলাই) ঈদুল আজহা উপলক্ষে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে যাবেন জয়পুরহাট। সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে নীলসাগর এক্সপ্রেসের টিকিট ছিল তার। কিন্তু স্টেশনে এসে অপেক্ষাই করে যাচ্ছেন, ট্রেন আসার নাম নেই। এর মধ্যে ক্লান্ত শিশুটাও ঘুমিয়ে গেছে। অগত্যা স্টেশনের ভেতরেই চাদর বিছিয়ে বাচ্চাকে শুইয়ে দিয়েছেন। সকাল ৯টায়ও তার ট্রেন আসেনি। নতুন শিডিউল অনুযায়ী, নীলসাগর এক্সপ্রেস বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে ছাড়বে বলা হয়েছে।

মেরিনা আক্তার বলেন, জয়পুরহাট যাওয়ার জন্য ভোর ৫টায় বাসা থেকে বের হয়েছি। আমাদের ট্রেন ছিল ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে। কিন্তু স্টেশনে এসে দেখি ট্রেন এখনও আসেনি। অপেক্ষা করতে করতে বাচ্চা কোলেই ঘুমিয়ে গেছে। তাই ওকে স্টেশন চত্বরেই শুইয়ে রেখেছি। এখন দেখছি নীলসাগর ছাড়ার টাইম দিয়েছে ৩টা ১০ মিনিটে। জানি না সেটাও সঠিক সময়ে ছাড়বে কি না। ঈদ করা হবে কি না সেটাও অনিশ্চিত। আমাদের ভোগান্তি দেখার কি কেউ নেই!

ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করা মেরিনা আক্তারের স্বামী মো. মিঠু মিয়া বলেন, ৬টা ৪০ মিনিটের ট্রেনের সম্ভাব্য সময় দিয়েছে বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে। সেটাও ঠিকমতো ছাড়বে কি না সন্দেহ আছে। যদি ঠিক সময়ে না ছাড়ে তাহলে হয়ত বাড়ি গিয়ে ঈদ করা হবে না। শুধু আমাদের ট্রেন নয়, উত্তরবঙ্গগামী সবগুলো ট্রেনেই একই সমস্যা। বাচ্চা দুটোকে নিয়ে খুবই বিড়ম্বনায় পড়েছি। তবে যেহেতু একবার বাসা থেকে বের হয়েই গেছি, বাড়ি যাবই।

এই অবস্থা শুধু মিঠু মিয়া আর মেরিনা আক্তার দম্পতির নয়, উত্তরবঙ্গগামী প্রায় সব যাত্রীরই। শনিবার (৯ জুলাই) সকালে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট সময়ে ছাড়ছে না কোনো ট্রেনই। উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনগুলোতেই সবচেয়ে বেশি শিডিউল বিপর্যয় দেখা গেছে। কোনো কোনো ট্রেন দুই-তিনবারও সময় পরিবর্তন করেছে। স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, টিকিট কাটা যাত্রীরা সবাই প্ল্যাটফর্ম ও স্টেশন চত্বরে বসে আছেন। ক্লান্ত শরীর নিয়ে অনেককে ঘুমাতে দেখা গেছে।

পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনে করে বেসরকারি চাকরিজীবী জসিম উদ্দিন ও তার স্ত্রী নীলার যাওয়ার কথা ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে। ট্রেন ছাড়ার কথা ছিল শুক্রবার (৮ জুলাই) রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে। রাতে এসে দেখেন ট্রেন ছাড়ার নতুন সময় ভোর ৫টা। তাই তারা বাসায় চলে যান। ভোর ৫টার আগে এসে দেখেন ট্রেন ছাড়ার সময় দেওয়া সকাল ৯টায়। স্টেশন চত্বরে কথা হয় এই দম্পতির সঙ্গে।

তারা বলেন, গতকাল রাতে ট্রেন ছাড়ার কথা থাকলেও ছাড়েনি। সকালে এসেও দেখি একই অবস্থা। কখন ছাড়বে তা নিশ্চিত নয়। অপেক্ষার যেন শেষ নেই। ঈদের আগে বাড়ি গিয়ে পৌঁছাতে পারব কি না জানি না।

তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের নতুন সময় দেখা গেছে সূচি বোর্ডে। সকাল ৯টা পরিবর্তন করে সময় দেওয়া হয়েছে সকাল ১০টা ১৫ মিনিট।

পঞ্চগড় ও নীলসাগর এক্সপ্রেসের মতো উত্তরবঙ্গগামী অন্য ট্রেনগুলোও যেন সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি দিতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

 

ধুমকেতু এক্সপ্রেস ছাড়ার কথা ছিল ভোর ৬টায়, সেটি স্টেশন ছেড়ে গেছে সকাল ৮টায়। খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ছাড়ার কথা ৮টা ১৫ মিনিটে। সেটা যথাসময়ে স্টেশনে আসেনি। এই ট্রেন সকাল সাড়ে ১০টায় ছাড়ার নতুন শিডিউল দেওয়া হয়েছে।

দিনাজপুরগামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস গতকাল রাত ৮টায় ছাড়ার কথা। সেটি স্টেশনে এসেছে আজ ভোর ৬টায়। স্টেশন ছেড়ে গেছে সকাল ৭টায়। কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের গতকাল রাত ৮টা ৪৫ মিনিটের গাড়ি স্টেশন ছেড়েছে রাত ১টার পরে। সুন্দরগঞ্জ এক্সপ্রেসের নতুন সময় দেওয়া হয়েছে ১১টা ২০ মিনিট।

নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের ভোর ৬টা ৪০ মিনিটের টিকিট কেটেছেন তাজিদুল ইসলাম। যাবেন নীলফামারীর চিলাহাটি। কিন্তু স্টেশনে আসেনি গাড়ি। তাজিদুল বলেন, উত্তরবঙ্গগামী সবগুলো ট্রেনই ৫-৬ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কি এসব দেখে না!

একতা এক্সপ্রেসের টিকিট কেটেছেন রেজাউল করিম। যাবেন দিনাজপুর। সকাল ১০টায় ট্রেন আসার কথা। তিনি বলেন, আমরা অন্য বছরগুলোতেও ঈদের সময় ট্রেনে যাতায়াত করেছি। কিন্তু এত শিডিউল বিপর্যয় দেখিনি। স্টেশনে এসে যা দেখছি, তাতে ঈদ করতে পারব কি না শঙ্কায় আছি।

খুলনা গেজেট/এস আই

 

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!