বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তে গোলাগুলি কমলেও তীব্র হচ্ছে টেকনাফ সীমান্তে। শনিবার সকাল থেকে চার ঘণ্টাব্যাপী টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উত্তরপাড়ায় ওপারে গোলাগুলি হয়। এতে ওই এলাকার দোকানপাট ও বসতবাড়িতে গুলি এসে পড়ে। কেউ হতাহত না হলেও স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন।
তিন দিন ধরে গুলির শব্দ শুনতে না পাওয়া নাইক্ষ্যংছড়িতে গতকাল সবজিখেতে একটি মর্টারশেল এসে পড়ে। স্থানীয় গৃহবধূ হালিমা বেগম সবজিখেতে কাজ করতে গিয়ে এটি দেখতে পান। পরে তিনি সেটি বিজিবির তুমব্রু বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট (বিওপি) এলাকার সামনে সড়কের ওপর রেখে দেন। স্থানীয় লোকেরা মর্টার শেল বললেও বিজিবির মতে, এগুলো মূলত রকেট প্রপেলড গ্রেনেড। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ঘুমধুমের নয়াপাড়া, মঙ্গলবার ও শুক্রবার মধ্যমপাড়া থেকে তিনটি মর্টার শেল উদ্ধার করা হয়।
এ ছাড়া সীমান্ত এলাকা থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ২৩ রোহিঙ্গাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার উখিয়ার রহমতের বিল সীমান্ত দিয়ে এই অস্ত্রধারী রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করার পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও লোকজন তাদের আটক করে বিজিবির কাছে সোপর্দ করে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, পালিয়ে আসা এই ব্যক্তিরা আরাকান রোহিঙ্গা আর্মির (এআরএ) সদস্য। সশস্ত্র এই বিচ্ছিন্নতাবাদী দলটির প্রধান হচ্ছেন নবী হোসেন।
২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সংঘর্ষ চলছে। ইতিমধ্যে বিজিপিকে হটিয়ে তুমব্রু রাইট ক্যাম্প, ঢেঁকিবনিয়া, চাকমাকাটা, কোয়াংচিমন ও কুমিরখালী সীমান্তচৌকি আরাকান আর্মি দখলে নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত তিনটা থেকে দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। পরদিন নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুজন নিহত হন। নিহত দুজনের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী, অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ। এ ছাড়া মিয়ানমারের সেনা, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য, শুল্ক কর্মকর্তাসহ ৩৩০ জন বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। তারা বর্তমানে বিজিবির হেফাজতে রয়েছে।
শুধু সীমান্তের পার্শ্ববর্তী উত্তরপাড়া নয়, এক কিলোমিটার দূরে মাঝেরপাড়া এলাকায় মোহাম্মদ আফসারের ঘরে সকাল সাতটার দিকে জানালা দিয়ে একটি গুলি ঢুকে পড়ে। আফসার বলেন, ‘তখন সবাই ঘরে ছিল। হায়াত থাকায় কারও গায়ে গুলি পড়েনি।’
আফসারের ঘর থেকে ৫০০ গজ পূর্বে দলু মিয়ার ঘরেও জানালা দিয়ে আরেকটি গুলি ঢুকে পড়ে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সিরাজুল মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার চোখের সামনে একটি গুলি উড়ে যায়। আজকে হয়তো আমার জানাজা পড়তে হতো। ঘটনার পর থেকে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে।’