গতকাল সোমবার (২১ মার্চ)থেকে ২৬মার্চ পর্যন্ত গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ৬দিন ব্যাপী ‘মুজিববর্ষ লোকজমেলা’ শুরু হয়েছে। টুঙ্গিপাড়া সরকারী শেখ মুজিবুর রহমান সরকারী কলেজ মাঠে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের সহায়তায় এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের ১ নং গেট সংলগ্ন এলাকায় আয়োজিত ‘টুঙ্গিপাড়াঃ হৃদয়ে পিতৃভূমি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ লোকজ মেলার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
আয়োজিত এ মেলা চলবে প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।মেলায় সরকারি-বেসরকারি স্টল থাকবে মোট ১০০টি। এসব স্টলের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে।
এ উপলক্ষে সোমবার(২১ মার্চ) সকালে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এই মেলা সম্পর্কে সাংবাদিকদেরকে ব্রিফ করেন। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক)মোঃ ইলিয়াছুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুর রহমানসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ ও সংবাদকর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এই লোকজমেলায় প্রচুর দর্শক সমাগমের পাশাপাশি দেশীয় নানা পণ্যের সাথে এখানকার মানুষ পরিচিত হতে পারবে, আর সেই সাথে লোকজন নিজের পছন্দের পণ্যটিও কিনতে পারবেন বলে জানান জেলা প্রশাসক।
গোপালগঞ্জ জেলা সদরের প্রসিদ্ধ মিষ্টির দোকানী দত্ত মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক সবুজ দত্ত বলেন, আমাদের দোকানের মিষ্টির নাম শুধু গোপালগঞ্জবাসীই নয়, জেলার বাইরের লোকজনের কাছেও বেশ সুনাম রয়েছে। বিশেষ করে খাটি দুধ দিয়ে তৈরী রসগোল্লা ও সন্দেশের সুনাম চারিদিকে। প্রসিদ্ধ এই মিষ্টির সুনাম সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে আমি মেলায় স্টল নিয়েছি। সাড়াও পাচ্ছি ভালো।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গান্ধিয়াশুর গ্রামের সুনির্মল দাস বাপী জানান, আমি আমার নিজের হাতে তৈরী করা ৬৫ প্রকার বাদ্যযন্ত্র নিয়ে মেলায় প্রদর্শনের জন্য স্টল নিয়েছি। আশাকরি এসব দেশীয় বাদ্যযন্ত্র দেখে ও এর বাজনা শুনে মেলায় আগতরা আনন্দ পাবেন। সেই সাথে অনেক হারিয়ে যাওয়া বাদ্যযন্ত্রও আমার কাছ থেকে দেখতে পাবেন।
মেলায় আগত কলেজ ছাত্রী বুলবুলি বিশ্বাস বলেন, আমরা টুঙ্গিপাড়াতে বসে জাতীয় পর্যায়ের একটি লোকজ মেলা উপভোগ করছি। এই মেলার আয়োজন মেলায় আগতদের আনন্দ দেবার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার ঐতিহ্যবাহী জিনিষের সাথে পরিচিত হতে পারবে।
মেলায় এসেছে শিশুরাও। তাদের একজন মুসনাত জামি। তারসাথে কথা হলে সে জানায়, এর আগে কখনো সে বাইস্কোপ, পুতুল নাচ, নাগর দোলা দেখিনি। এখানে এসে এগুলো দেখে সে খুবই খুশি।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জোনাকী কাজী জানান, বিভিন্ন জেলা থেকে এই মেলায় পণ্য নিয়ে এসেছেন লোকজন। তাদের সাথে এই মেলার মাধ্যমে সংস্কৃতি বিনিময় হচ্ছে।
টুঙ্গিপাড়া পৌর মেয়র শেখ তোজাম্মেল হক টুটুল বলেন, লোকজ মেলার মাধ্যমে আমরা দেশীয় নানা পণ্যের, বিশেষ করে বিভিন্ন জেলার ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলো এক জায়গাতে দেখতে পারছি, কিনতে পারছি।
জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলার হস্ত ও কুটির শিল্প, ঐতিহ্যবাহী এবং জেলার ব্রান্ডিং বিভিন্ন পণ্যের প্রতিনিধিত্বকারী দৃষ্টিনন্দন এ স্টল গুলো তৈরি করা হয়েছে পরিবেশ বান্ধব উপকরণ দিয়ে। এই মেলায় প্রতিদিন বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ এবং মুক্তিযুদ্ধের উপর বিভিন্ন চলচ্চিত্র প্রদর্শন, স্যুভেনির প্রকাশ, পোস্টার প্রদর্শনসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। মেলায় আসলে সবার ভাল লাগবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
খুলনা গেজেট/ এস আই