খুলনা বিভাগের দশ জেলায় করোনারোধী টিকা গ্রহণে মানুষের ব্যাপকভাবে আগ্রহ বেড়েছে। উৎসব মুখর পরিবেশে তারা কেন্দ্রে গিয়ে এ টিকা গ্রহণ করছেন। দশ জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ টিকা গ্রহণ করেছেন কুষ্টিয়ায় ও যশোরে। এছাড়া সর্বনিম্ন নিয়েছেন নড়াইলে। গত কুড়ি দিনে বিভাগ জুড়ে সিনোফার্ম ও মর্ডানার টিকা গ্রহণ করেছেন চার লক্ষাধিক মানুষ। আর এ কাজে সম্পৃক্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, সেবিকা ও কর্মীদের ব্যাপক হিমশিম খেতে হচ্ছে।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে জানা যায়, গত ১২ জুলাই থেকে দেশে দ্বিতীয় দফায় মানুষের মাঝে গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। এসময়ে জেলা পর্যায়ে মানুষকে চীনের তৈরি সিনোফার্মের টিকা দেয়া হয়। তবে খুলনাসহ বিভাগীয় শহরে দেয়া হয় আমেরিকার তৈরি মডার্নার টিকা। গণটিকাদানের শুরুর দিকে মানুষ রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত সমস্যায় ভূগছিলেন। এছাড়া সিনোফার্মের টিকায় কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কিনা তা নিয়েও সন্দেহে ছিলো। কিন্তু বর্তমানে সেসব সন্দেহ কাটিয়ে টিকা গ্রহণ রীতিমত উৎসবে রূপ নিয়েছে। এ কারণে খুলনা বিভাগের দশ জেলায় মানুষ ব্যাপকহারে টিকা গ্রহণ করছেন। আর এ কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। বিপুল সংখ্যক মানুষকে টিকা দিতে গিয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, সেবিকা ও কর্মীসহ স্বেচ্ছাসেবকরা হাঁফিয়ে উঠছেন। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা তারা এ কাজেই ব্যস্ত থাকছেন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর জানায়, করোনা টিকা কার্যক্রম ফের শুরু হবার পর গত ২০ দিনে খুলনা বিভাগের দশ জেলায় মোট চার লাখ ৯ হাজার ৭৮০ জন ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন। এরমধ্যে সর্বোচ্চ কুষ্টিয়ায় ৬৬ হাজার ৩৩৯ জন ও যশোরে ৬৩ হাজার ৩১১ জন। সর্বনিম্ন নিয়েছেন নড়াইলে ১৭ হাজার ২৯৮ জন। এছাড়া খুলনা নিয়েছেন ৪৯ হাজার ৪২৮ জন, বাগেরহাটে ৪১ হাজার ২৪৮ জন, মাগুরায় ২৯ হাজার ৫৭৪ জন, সাতক্ষীরায় ৪৫ হাজার ৮২৭ জন, ঝিনাইদহে ৩৮ হাজার ৯৬৭ জন, চুয়াডাঙ্গায় ৩৪ হাজার ১৫১ জন ও মেহেরপুরে ২৩ হাজার ৬৩৭ জন টিকা গ্রহণ করেছেন। এছাড়া খুলনায় মডার্নার টিকা গ্রহণ করেছেন ৩৪ হাজার ৭৪৯ জন। ইতিমধ্যে বিভাগের দশ জেলায় ভ্যাকসিন এসেছে পাঁচ লাখ ৭১ হাজার ৬শ’ ডোজ। যশোরসহ দশ জেলায় বিপুল সংখ্যক মানুষকে এ টিকা প্রদানের পরও মজুদ রয়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ৭৪৫ ডোজ। খুলনায় মডার্নার টিকা মজুদ রয়েছে ১৮ হাজার ৫১ ডোজ।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, ২ আগষ্ট একদিনে বিভাগের দশ জেলায় ৩১ হাজার ৫২৬ জন করোনারোধী টিকা গ্রহণ করেছেন। এরমধ্যে পুরুষ ১৬ হাজার ৮৩০ জন ও মহিলা ১৪ হাজার ৬৯৬ জন। শুধুমাত্র খুলনায় মর্ডানার টিকা গ্রহণ করেছেন তিন হাজার ৬৯০ জন। বাকি ২৭ হাজার ৮৩৬ জন নিয়েছেন সিনোফার্মের টিকা। একদিনে সর্বোচ্চ টিকা গ্রহণ করেছেন খুলনা জেলায় ৭ হাজার ৮১৬, যশোরে ৫ হাজার ১২২ জন ও সর্বনিম্ন টিকা নিয়েছেন মেহেরপুরে ৮৭৯ জন।
এদিকে, গত প্রায় একমাসে যশোরে সিনোফার্মের মোট টিকা এসেছে ৯৮ হাজার ৪শ’ ডোজ। ইতিমধ্যে প্রদান করা হয়েছে ৬৩ হাজার ৩১১ ডোজ ও মজুদ রয়েছে ৩৫ হাজার ৭৭ ডোজ। চলতি মাসে আরো দু’দফা টিকা যশোরে আসবে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে। মোবাইল ম্যাসেজ প্রাপ্তরা হাসপাতালের নাসিং ইনস্টিউট থেকে টিকা গ্রহণ করছেন। মানুষের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে স্বাস্থ্য বিভাগ এখানে বুথের সংখ্যা বাড়িয়ে গোটা পরিস্থিতি ম্যানেজ করছে।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডাক্তার শেখ আবু শাহীন বলেন, যশোরে করোনারোধী টিকার কোন কমতি নেই। স্বাভাবিক নিয়মেই মানুষ এ টিকা পাচ্ছে। এখন ১৮ বছর বয়সিরাও টিকার আওতায় এসেছে। আগামী ৭ আগষ্ট থেকে সহজ নিয়মে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা দেয়া হবে। যাতে গ্রামের সব মানুষ এ টিকার আওতায় আসে। যশোরের কোন মানুষ করোনা ভ্যাকসিনের বাইরে থাকবে না বলে তিনি জানান।
খুলনা গেজেট/কেএম