খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ভারতে হাসপাতালে আগুন লেগে ১০ শিশুর মৃত্যু

টিকটক হৃদয় সম্প‌র্কে যা জানা যা‌চ্ছে

গেজেট ডেস্ক

দুই বছর ধরে নিখোঁজ এক বাংলাদেশি তরুণীকে ভারতে কেরালায় বীভৎস কায়দায় অমানুষিক যৌন নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেফতার রিফাতুল ইসলাম হৃদয় ওরফে ‘টিকটক হৃদয় বাবু’-এর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক তথ্য পাওয়া গেছে।

টিকটক হৃদয় বাবু নামে পরিচিত বাংলাদেশি এই যুবক বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও ভারতের কয়েকটি রাজ্যের কিছু অপরাধীর সঙ্গে মিলে মানব পাচারের আন্তর্জাতিক চক্র গড়ে তুলেছিলেন। এই চক্রটির নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইসহ কয়েকটি দেশে বিস্তৃত।

শনিবার (২৯ মে) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ডিসি মো. শহিদুল্লাহ এসব তথ্য জানান।

রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকার বাসিন্দা ওই যুবক পড়াশোনা করেছেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। পরে বন্ধুদের নিয়ে জড়িয়ে পড়েন টিকটক ভিডিও তৈরিতে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ৩-৪ যুবক ও একটি মেয়ে মিলে এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করছে।

এই ভিডিও সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে রিফাজুল ইসলাম হৃদয় নামের এক নির্যাতনকারীকে শনাক্ত করে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। পরে গত বৃহস্পতিবার (২৭ মে) পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, বিবস্ত্র করে ৩/৪ জন যুবক এবং এক নারী নির্মম নির্যাতন করছে ওই তরুণীকে। পাচারকারী চক্রের সদস্যরা ওই তরুণীর ভারতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছে যা আধারকার্ড নামে পরিচিত। এই চক্রের সদস্যরা অন্য আরও কোনো নারীকে পাচার করেছে কি না, এ বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পাচারের শিকার এক বাংলাদেশি তরুণীকে বীভৎস কায়দায় নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ২৩ বছর বয়সী ওই তরুণীকে বিবস্ত্র করে শারীরিক নির্যাতনের পর দলবেঁধে ধর্ষণ করা হয়। ভিডিওটির সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার ছয়জনের ওই দলটিকে গ্রেফতার করে বেঙ্গালুরু পুলিশ। গ্রেফতার সবাই একই গ্রুপের এবং তারা বাংলাদেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে ভারতে বাংলাদেশি এক তরুণীকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় দুজন পালানোর চেষ্টার সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানায় বেঙ্গালুরু পুলিশ। ভারতীয় গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কীভাবে কী ঘটেছিল জানতে গ্রেফতার ছয়জনকে শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। সেখানেই গুলির ঘটনা ঘটে। পূর্ব বেঙ্গালুরু পুলিশের ডেপুটি কমিশনার শরণাপ্পা এসডিকে উদ্ধৃত করে এনডিডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রাইম সিন থেকে দুজন পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি ছোড়ে। পরে তাদের আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বেঙ্গালুরু পুলিশের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানায়, নির্যাতনের ওই ঘটনাটি ঘটেছে ছয় দিন আগে। ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওটি দেখার পর প্রথম পদক্ষেপ নেয় আসাম পুলিশ। ওই ভিডিও থেকে পাঁচ নিপীড়কের ছবি প্রকাশ করে তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য টুইটারে পুরস্কারের ঘোষণা দেয় তারা।

হিন্দুস্থান টাইমসের খবরে বলা হয়, ওই ভিডিওর উৎস খুঁজতে গিয়ে আসাম পুলিশ জানতে পারে, নির্যাতনে জড়িতরা আছে বেঙ্গালুরুতে। তারপর সেই তথ্য কর্ণাটক পুলিশকে সরবরাহ করে তারা। পরে বেঙ্গালুরু পুলিশ ওই ভিডিওর সূত্র ধরে ছয়জনকে গ্রেফতার করে।

বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, নির্যাতনের ঘটনাটি ভারতের কেরালার। তবে ভিকটিম ও নিপীড়কদের একজন বাংলাদেশি নাগরিক।

পুলিশের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে যৌন নিপীড়নকারী যুবকদের একজন হলেন ‘টিকটক হৃদয় বাবু’। এরই মধ্যে তাকে বেঙ্গালুরু সিটি পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

বিষয়টি নিয়ে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে ডিসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশি তরুণীকে নৃশংস যৌন নির্যাতনের একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ খুবই দ্রুততার সঙ্গে তদন্তে নেমে আসামি ও ভিকটিম শনাক্ত করে। ইতোমধ্যে ভারতে ৬ জন গ্রেফতার হয়েছে। তারা সবাই আন্তর্জাতিক নারী পাচার গ্রুপ বলে নিশ্চিত হয়েছি। যাদেরকে পুলিশের এনসিবির মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।

তিনি জানান, এই চক্রের সদস্যরা স্কুল-কলেজের বখে যাওয়া ছেলেমেয়েদের টার্গেট করত। বিশেষ করে টিকটক গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করে তারা পাচার কাজে সহযোগিতা করছিল।আমরা জানতে পেরেছি, ভারতে গ্রেফতার টিকটক হৃদয় টিকটকের একটি গ্রুপের এডমিন। সেই গ্রুপের মাধ্যমে গত বছরের শেষের দিকে ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলার একটি রিসোর্টে ৭০০/৮০০ তরুণ-তরুণী পুল পার্টিতে অংশ নেয়। মূলত টিকটক ভিডিও তৈরি করতে গিয়ে তরুণ-তরুণীরা পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হয়ে একটি ফেসবুক গ্রুপে সংযুক্ত হয়। যে ফেসবুক গ্রুপটির মূল পৃষ্ঠপোষক এই আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রটি।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!