টান টান উত্তেজনা পাকিস্তানে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কি তার ‘উইকেট’ টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হবেন! এ আলোচনায় চায়ের কাপে ঝড়। আজ বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর জাতীয় পরিষদে ভোট।
এখন পর্যন্ত যেসব ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, তাতে ইমরান খানকে ‘প্যাভিলিয়নে’ ফিরে যেতে হবে। কিন্তু ‘এস্টাবলিশমেন্ট’ কোন পক্ষে, শেষ পর্যন্ত কি ঘটে- তার কিছুই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
এরই মধ্যে খবর চাউর হয়ে গেছে, ইমরান খানের ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফকে (পিটিআই) পার্লামেন্ট হিসেবে পরিচিত জাতীয় পরিষদ ঘেরাও করে রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ রিপোর্ট অবশ্য প্রত্যাখ্যান করেছেন তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী। তবে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন ইমরান খান।
জাতীয় পরিষদে অধিবেশন চলার সময় তিনি এতে উপস্থিত থাকবেন। পিটিআইয়ের সব সদস্যকে আজ রোববারের এই অধিবেশনে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। তাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ নিয়ে তারা যেন জাতীয় পরিষদের ভিতরে সোচ্চার থাকেন। পাশাপাশি নেতাকর্মী, সমর্থকদের নির্দেশ দিয়েছেন তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতে ‘যুক্তরাষ্ট্রের মদতে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বিক্ষোভ করতে। জনগণের সঙ্গে সরাসরি প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এই আহ্বান জানিয়েছেন। তার এই প্রশ্নোত্তর পর্ব সরাসরি টেলিভিশনে প্রচার করা হয়।
ওদিকে নিজের ঘনিষ্ঠ বলয়ে আস্থাভাজন ও আইনি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ধারাবাহিক মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করার পর তিনি দলীয় পার্লামেন্ট সদস্যদের আজকের অধিবেশনে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারে ইমরান খান বলে, তার কাছে আজ রোববারের গুরুত্বপূর্ণ ভোটে একাধিক পরিকল্পনা আছে। তিনি পুরো জাতিকে বিস্ময় উপহার দিতে পারেন।
ডন’কে তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন, এর আগে জাতীয় পরিষদে দলীয় সদস্যদের উপস্থিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে যে চিঠি ইস্যু করা হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করেছেন প্রধানমন্ত্রী। উল্টো আজকের পার্লামেন্ট অধিবেশনে পিটিআই সদস্যদের নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
এর আগে শনিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নৈশভোজের আয়োজন করেন। এতে প্রায় ১৪০ জন দলীয় পার্লামেন্ট সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সরকার জাতীয় পরিষদে বিরোধীদের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ একটি বিতর্কে অংশ নিতে চায়। ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যরা কথা বলার সুযোগ চাইবেন।
আজকের অধিবেশনের আগে খবর ছড়িয়ে পড়েছে যে, বিরোধী দলীয় সদস্য ও পিটিআইয়ের প্রায় দুই ডজন ভিন্ন মতাবলম্বী সদস্যকে অধিবেশনে উপস্থিত হওয়া প্রতিরোধ করার কৌশল নিয়েছে সরকার।
পিটিআইয়ের বিদ্রোহী ওই সদস্যরা সিন্ধু হাউজ এবং পাশের ম্যারিয়ট হোটেলে অবস্থান করছেন। তারা যাতে সেখান থেকে বেরিয়ে পার্লামেন্টে যেতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
অজ্ঞাত সূত্রকে উদ্ধৃত করে জিও নিউজ বলেছে, ক্ষমতাসীন পিটিআই ডি-চকে তাদের বিক্ষোভ করার পরিকল্পনা করেছে। এটা ঠিক পার্লামেন্ট হাউজের মূল গেট। যেহেতু সুপ্রিম কোর্ট থেকে অনাস্থা প্রস্তাবে ভোটের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি, তাই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে সুপ্রিম কোর্ট রেড-জোনের ভিতরে সব রকম সভাসমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে।
কিছু চ্যানেল রিপোর্টে বলেছে, ক্ষমতাসীন দল অধিবেশন দীর্ঘায়িত এবং ভোট বিলম্বিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদেরকে অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত লম্বা বক্তব্য দেয়ার সুযোগ চাওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে প্রক্রিয়া বিলম্বিত করা হবে।
আবার বিতর্ক চলার সময় ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যরা তিক্ত বিষয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিতে পারেন, যাতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং বিরোধীরা প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। এমন পরিস্থিতিতে বিশৃংখলা সৃষ্টি হলে স্পিকার তখন ভোট স্থগিত করতে বাধ্য হবেন।
তবে এসব রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছেন তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, পুরো প্রক্রিয়া চলবে সংবিধান অনুসারে। বিরোধীদের একটি প্রচারণার কথা তুলে ধরে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। বলেন, পিটিআই কর্মীরা নাকে এ সময়ে রক্তপাত ঘটিয়ে দেবে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, পিটিআই হলো মধ্যবিত্তদের দল। এখানে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। সভ্য জাতির প্রতিবাদ হবে সভ্য। সহিংস বিক্ষোভের যে ডজন ডজন রিপোর্ট বের হয়েছে এসব ভুয়া খবর বলে দাবি করেন তিনি।