খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  যাত্রাবাড়িতে ব্যাটারিচালিত অটো রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ, সংঘর্ষে দুই পুলিশ আহত
  জুলাই গণহত্যা : ৮ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক মাসে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ

টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, দুর্ভোগে নিম্ন আয়ের মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের ফলে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বাড়ি ঘরে পানি উঠায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শহরের নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারি অধিবাসীরা। একই সাথে বৃষ্টির কারণে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। বিশেষ করে দৈনন্দিন উপার্জনের উপর নির্ভরশীল দরিদ্র পরিবারগুলো কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। বৃষ্টির কারণে উপার্জন বন্ধ থাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।

এদিকে বৃষ্টিতে আগাম শীতকালীন সবজির ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি বিভাগ। বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়লে আমন ধানের ক্ষতি হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। অন্যদিকে, মানুষের উপস্থিতি কম থাকায় বেঁচা বিক্রি কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সাতক্ষীরা পৌরসভাসহ সদর উপজেলার ধুলিহর, ব্রহ্মরাজপুর, লাবসা, ফিংড়ি, বল্লী, ঝাউডাঙ্গাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের অধিকাংশ নিম্নাঞ্চলের বিলগুলোতে রোপা আমন পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। বেশ কিছু মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে বেশ কিছু এলাকার ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে এসব এলাকার মানুষের দূর্ভোগ আরও বাড়তে পারে।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম-সদস্য সচিব ও জেলা গণফোরামের সভাপতি আলীনুর খান বাবুল জানান, টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে পৌর এলাকার কামালনগর, ইটাগাছা, পলাশপোল, বাঁকাল, খড়িবিলা, বদ্দিপুর কলোনীসহ পৌরসভার বিভিন্ন স্থানের নিম্নাঞ্চল। পানি অপসারণের কোন পথ না থাকায় বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে পৌরসভার এসব নিম্নাঞ্চল। পানিতে ভেসে গেছে বেশ কিছু মাছের ঘের ও পুকুর। নিমজ্জিত হয়েছে নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট।

তিনি আরও জানান, নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে পানি অপসারণের দাবীতে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে আহবান জানানো হয়েছে।

শহরের মুনজিতপুর এলাকার ভ্যান চালক ওয়াজেদ আলী জানান, রোজগার করতে না পারলে সংসার চলে না। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ভ্যান নিয়ে শহরে বের হলেও কেউ ভ্যানে উঠেনি। ফলে খালি হাতেই বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। বৃষ্টি হলে যাত্রীরা কেউ ভ্যানে উঠতে চান না। সকলেই ইজিবাইকে ওঠেন। বৃষ্টির কারণে আমরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছি। শুক্রবার সারাদিন বৃষ্টি না হওয়ায় কিছু টাকা রোজগার করেত পেরেছি। বৃষ্টি আবার হলে সংসার চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।

দিন মজুর সাহেব আলী বলেন, প্রতিদিন সকালে সাতক্ষীরা শহরের পাকাপুলের মোড়ে গিয়ে কাজের জন্য বসে থাকি। সেখান থেকে কাজের চুক্তিতে কাজ করি জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে গত কয়েক দিন ধরে কেউ কাজে নিতে আসছেন না। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছি আমরা। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তালার নগরঘাটা গ্রামের টমেটো চাষী রবিউল ইসলাম রবি জানান, আমি পাঁচ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করে থাকি। সারা বছর ওই একটা সবজি চাষ করে আমার সংসার চালয়ে কয়েক লক্ষ টাকা উদ্বৃত্ত থাকে। কিছুদিন আগে থেকে টমেটো তুলে সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারের আড়তে আনতে শুরু করেছি। ভাল দাম ও পাচ্ছিলাম। কিন্তু গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে টমেটো ক্ষেতের বেশ ক্ষতি হয়েছে। গাছেই অনেক টমেটো পঁচে যাচ্ছে। ফলে এবার আমাকে লোকসানের মুখে পড়তে হতে পাওে বলে ধারণা করছি।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, অন্য বছরের তুলনায় এবারও অক্টোবর মাসের শুরতেই বৃষ্টির পরিমাণ বেশি। বৃষ্টির কারণে এবার শীতকালীন ফসল ভালো হবে না। তবে বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়লে আমন ধানেরও বেশ ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন বলেন, গত ৪ দিনে সাতক্ষীরায় ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে আজ শনিবার থেকে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হতে পারে বলে তিনি জানান।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!