আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের পাশেই এবার স্থান হলো ডুবোযান টাইটানের। এই দুই যানের যাত্রীদের আত্মীয়তার সম্পর্ক এবার গণমাধ্যমে ওঠে আসে। ১৯১২ সালে আটলান্টিকের অতলে তলিয়ে যায় সেই সময়কার সবচেয়ে বিলাসবহুল জাহাজ টাইটানিক। সেই জাহাজের অন্যতম যাত্রী ছিলেন বৃদ্ধ দম্পতি ইডিটর স্ট্রস ও ইডা স্ট্রস। ইডিটর স্ট্রস ছিলেন মার্কিন সাবেক কংগ্রেসম্যান ও শীর্ষ ধনী। এই দম্পতির উত্তরসূরি হচ্ছেন ওয়েন্ডি রাশ। আর ওয়েন্ডি রাশের স্বামী হচ্ছেন টাইটানের পাইলট ও ওশানগেটের সিইও স্টকটোন রাশ। ভয়াবহ বিস্ফোরণে আটলান্টিকের গভীরে পাঁচ আরোহীসহ মৃত্যু হয় স্টকটোন রাশের।
এই আলোচিত দম্পতির কথা টাইটানিক সিনেমায় তুলে ধরেছিলেন বিখ্যাত পরিচালক জেমস ক্যামেরন। জাহাজের সম্মানিত আরোহী হিসেবে তাদেরকে প্রথমে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে চান উদ্ধারকর্মীরা। নারীদের সঙ্গে তুলে নেয়া হয় ইডা স্ট্রসকে। আর পুরুষদের নৌকায় তোলা হয় ইডিটর স্ট্রসকে। তবে তা মানতে চাননি সাবেক এই কংগ্রেসম্যান। তিনি বলেন সব নারী ও শিশুদের সরিয়ে নেয়ার পর তিনি উদ্ধার জাহাজে উঠবেন।
এদিকে স্বামীকে রেখে যেতে চাননি ইডা স্ট্রস। তিনি বলেন যার সঙ্গে ৪০ বছর কাটিয়েছি তাকে ছেড়ে তিনি যাবেন না। এর পর দুজনই নেমে পড়েন উদ্ধারকারী যান থেকে। খুলে ফেলেন দুজনের লাইফ জ্যাকেট। পরে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে একসঙ্গে বিছানায় শুয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন স্ট্রস দম্পতি। সেই ঘটনা মিথ্যা ছিল না। সেজন্যই সিনেমার নায়ক-নায়িকা জ্যাক ও রোজের মতো আজও দর্শকদের মণিকোঠায় রয়ে গিয়েছেন স্ট্রস দম্পতি। টাইটানিকের সঙ্গেই হিমশীতল আটলান্টিক মহাসাগরের পানিতে ডুবে অমরত্ব বরণ করেন তারা।
এবার সেই একই পরিণতির শিকার হলেন তাদের প্রপৌত্রী ওয়েন্ডি রাশের স্বামী স্টকটোন রাশ। নিখোঁজ ডুবোযান টাইটানের পাইলট ও মালিক প্রতিষ্ঠান ওশানগেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ছিলেন স্টকটোন রাশ। আর এর মধ্য দিয়েই যেন টাইটানিকের সঙ্গে মিলে গেল টাইটানের পরিণতির।
সেই টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখাতে ৫ যাত্রী নিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরের অতলে গিয়েছিল টাইটান। ওশানগেট নামের প্রতিষ্ঠানটির সাবমার্সিবল যান টাইটানের মাধ্যমে টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে নিয়ে যান তারা। ওশানগেটের সিইও হলেন স্টকটোন রাশ। আর ওয়েন্ডি রাশ একই প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা। যাত্রী নিয়ে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে আটলান্টিক মহাসাগরের গভীরে যান স্টকটোন। এর আগেও টাইটানিক দেখতে গিয়েছিলেন স্টকটোন। ফিরেও এসেছিলেন। কিন্তু, এবার আর ফিরতে পারেননি। ভয়াবহ বিস্ফোরণে আটলান্টিকের গভীরে মৃত্যু হয় স্টকটোন রাশের।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের বরাতে ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্ট্রস দম্পতির একমাত্র মেয়ে মিনি। তিনি ১৯০৫ সালে ডা. রিচার্ড উইলকে বিয়ে করেছিলেন। তাদের পুত্র জুনিয়র উইল নিউ ইয়র্কে বিখ্যাত ডিপার্টমেন্টাল স্টোর মেসির প্রেসিডেন্ট হন। তার পুত্র তৃতীয় রিচার্ড উইল পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। তারই মেয়ে হলেন ওয়েন্ডি রাশ। তিনি ১৯৮৬ সালে স্টকটোন রাশকে বিয়ে করেন।
আটলান্টিকের তলদেশে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে স্টকটোন রাশের মৃত্যুর ঘটনায় যে ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি হয়েছে তাতে যেন টাইটানিকের সঙ্গে মিলে গেল টাইটান।
খুলনা গেজেট/এসজেড