খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

ঝড়ো বাতাস ও অতিরিক্ত তাপমাত্রায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি

এস এস সাগর, চিতলমারী

বাগেরহাটের চিতলমারীতে ঝড়ো বাতাস ও অতিরিক্ত তাপমাত্রায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ৪ এপ্রিল রাতে হঠাৎ ঝড়ে কৃষকদের ক্ষেতের ধানের এই ক্ষতি হয়। দূর থেকে ধান গাছ গুলোকে স্বাভাবিক মনে হলেও শীষে থাকা ধানগুলো চিটে হয়ে গেছে। অনেক ক্ষেতের ধান গাছের পাতা পুঁড়ে গেছে। বাতাসের তোড়ে কিছু কিছু ক্ষেতের ধান মাটির সাথে মিশে গেছে। চাষীরা ফলন্ত ধান পাকার আগ মুহূর্তে এমন ক্ষতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। করোনা পরিস্থিতিতে ধারদেনা করা টাকায় উৎপাদিত ফসলের এমন ক্ষতিতে অনেক কৃষক নি:স্ব হয়ে যাবেন।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, প্রায় ৫০০ একর ধানের জমিতে এ ক্ষতি হয়েছে। ফের বড় ধরণের ঝড় বৃষ্টি ও অতিরিক্ত তাপমাত্রা না হলে কৃষকরা অনেকটাই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন। তবে বাস্তবে ক্ষতির পরিমান আরও অনেক বেশি বলে দাবি করেছেন কৃষকরা।

চিতলমারী কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে মোট ২১টি ব্লক রয়েছে। একুশটি ব্লক এবছর বেরো মৌসুমে ২৮ হাজার ৫২৮ একর জমিতে হাইব্রিড ও ৩৮৩ একর জমিতে উফশী জাতের ধান চাষ হয়েছে। এখানের প্রায় ৩০ হাজার পরিবার এই ধান চাষের সাথে জড়িত। এই ধানের উপর তাদের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড অনেকটা নির্ভর করে। প্রথমদিকে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এ বছরও ধানের বাম্পার ফলন আশা করা হয়েছিল। কিন্তু ৪ এপ্রিল রাতে ঝড়ে ও অতিরিক্ত তাপমাত্রায় নিচু এলাকায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

চিতলমারী উপজেলার শ্রীরামপুর বিলে ধান লাগানো কৃষক তাপস ভক্ত, রনজিত কুমার, সাধন বৈরাগী, সালাম শেখ, তারক মন্ডল, সুশেন বৈরাগী ও সুকুমার মন্ডল, সন্তোষ মন্ডল ও অরুন বালাসহ অনেক কৃষক অভিন্ন সুরে বলেন, খুব আশা করে ধান রোপন করেছিলাম। এক মাসের মধ্যেই ধান কেটে ঘরে তুলতে পারতাম। কিন্তু এখন ধানের যে ক্ষতি হয়ে গেল, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। ঝড়ের পরে ধানের কাছে এসে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে যাই।

কৃষানী লোপা মন্ডল বলেন, নগদ জমায় জমি রেখে ধান লাগিয়েছিলাম। কিন্তু ধানগুলো নষ্ট হয়ে গেল। ধানের কাছে আসলে চোখ থেকে শুধু জল বের হয়। এখন কিভাবে চলব। সংসারে ৬ জন লোক প্রতিদিন কাজ না করলে পেটে ভাত জোটে না। শুধু তো আমার নয়, এলাকার অনেকেরই এই অবস্থা। কি যে হবে সৃষ্টিকর্তা জানেন।

কৃষানী রত্না বৈরাগী বলেন, অনেক আশা করে ধান লাগিয়েছিলাম। ধান কাটব, বাড়িতে নিব। পরিবার-পরিজনকে নিয়ে বছর ভরে খাব। কিন্তু ঝড়ে আমাদের শেষ করে দিয়ে গেল। ধানের কাছে এসে দেখি সব চিটা। এখন কিভাবে ছেলে মেয়ে নিয়ে বাঁচব, কিভাবে চলব এই বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি।

এ ব্যাপারে চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বলেন, ঝড়ের পরেই আমরা ক্ষতির প্রতিবেদন উপর মহলে পাঠিয়েছি। প্রায় ৫০০ একর জমির ধান নষ্ট হয়েছে। নিচু এলাকায় ক্ষতির পরিমান বেশী।

তবে কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর বাগেরহাটের উপ-পরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, ঝড়ো বাতাস ও অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলার কিছুু ধান ক্ষেতে হিটস্ট্রেস জনিত কারণে ফুল স্তরের শীষ সাদা হয়ে গেছে। এটি সাময়িক আক্রান্ত, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বেশিরভাগ রিকভার করা সম্ভব। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে কৃষকদের পরিমিত পানি সেচ ও পটাশ স্প্রে করতে হবে।

খুলনা গেজেট/কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!