খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৫৮
জামানতের টাকা ফেরতের দাবিতে মানববন্ধন

ঝিনাইদহে সওজ’র জমিতে অবৈধ পৌর মার্কেট উচ্ছেদ কান্ড!

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঝিনাইদহ

ঝিনাইদহ পৌরসভার দোকান বরাদ্দ নিয়ে বড় ধরণের ঘাপলার অভিযোগ ও জামানতের টাকা ফেরতের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। ঝিনাইদহ পৌরসভা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ডিডের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা গ্রহণ করা হলেও তার কোন হিসাব নেই।
ডিডের টাকার ভাগ কার পকেটে উঠেছে তা নিয়ে নতুন করে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের জমিতে গড়ে ওঠা অবৈধ পৌর মার্কেট উচ্ছেদের পর এই ঘাপলাবাজীর তথ্য ধরা পড়েছে।

গত ৯ মে বিকালে ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চনপুর এলাকার ট্রাক টার্মিনালে ২৬টি মার্কেট উচ্ছেদ করে ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগ। এই মার্কেটগুলো তিনশ’ টাকার স্ট্যাম্পে চুক্তিনামা করে ঝিনাইদহ পৌরসভা। ২০২০ সালের পহেলা আগষ্ট কার্যকর হওয়া চুক্তিনামার এক নং শর্তে বলা হয়েছে অগ্রিম হিসেবে গ্রহণ করা জমানতের টাকা পৌরসভার তহবিলে জমা থাকবে। কিন্তু ঘর উচ্ছেদের পর বর্তমান পৌর প্রশাসক ইয়ারুল ইসলাম ও সচিব নুর মোহাম্মদ জানিয়েছেন ঘর বরাদ্দের কোন জমানতের অর্থ পৌরসভার তহবিলে নেই।

ট্রাক টার্মিনাল এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ি গোলাম রসুল জানান, তিনি পৌর মার্কেটের তিনটি ঘর ৬ লাখ টাকা জমানত দিয়ে নিয়েছিলেন। সোমবার বিকালে তার সেই ঘর উচ্ছেদ করা হলে প্রায় ১২ লাখ টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তিনি জমানতের টাকা, দোকানের ডেকোরেশন ও ক্ষতিগ্রস্ত মালামাল বাবাদ ১৫ লাখ টাকা দাবী করে মঙ্গলবার (১০ই মে) পৌর প্রশাসকের কাছে লিখিত দরখাস্ত দিয়েছেন। শহীদ মসিউর রহমান সড়কের মীর শুকুর আলীর ছেলে মাসুদ রানাসহ ৬জন ব্যবসায়ী অর্ধকোটি টাকার ক্ষতিপুরণ দাবী করে চিঠি দিয়েছেন।

প্রয়াত শ্রমিক নেতা হাবিবুর রহমান হবুর স্ত্রী শুকতারা বেগম জানান, তার ছেলেরা ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা জমানত দিয়ে ঘর নিয়েছিলেন। একই ভাবে গোলাম সরোয়ার, লাল মিয়া, মন্টু মিয়া রবিউল ইসলাম, অলোক কুমার, মাসুদ মটর্স ও আব্দুল মাজেদসহ ২৬ জন ব্যবসয়ীর বেঁচে থাকার স্বপ্ন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারিয়ে স্ত্রী, সন্তান ও পরিবার পরিজন নিয়ে অনেকেই পথে বসেছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লাল মিয়া জানান, তিনি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে ঘর নিয়েছিলেন। ঘর কেনার সময় স্ট্যাম্পে উল্লেখ করা হয় জমানতের টাকা পৌরসভায় জমা থাকবে। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে সেই টাকা নেই। লাল মিয়া প্রতি মাসে ঘর ভাড়ার ৫০০ টাকা ঝিনাইদহ এবি ব্যাংকে দিয়ে আসছিলেন। তার কাছ থেকে জমানতের টাকা কার্যসহকারী হাবিব নিয়েছিলেন বলেও তিনি জানান।

আপন ফার্নেচারের মালিক সাব্বির জুয়েল অভিযোগ করে বলেন, তার কাছ থেকে ৩শ’ টাকা স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ৬ লাখ টাকার জমানত গ্রহণ করেন কার্যসহকারী হাবিব। তিরি আরো জানান, সওজ থেকে ঘর ভাঙ্গার নোটিশ দেওয়ার পরও হাবিব তাদের আশ্বাস দিয়ে জানিয়েছিল কোন ক্ষতি হবে না। তারপরও আকস্মিকভাবে সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মাটির সঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ মার্কেট তৈরী করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন পৌরসভার কার্যসহকারী হাবিবুর রহমান হাবিব। বিভিন্ন সময় তিনি এই বরাদ্দের টাকা আদায় করে থাকেন। ঝিনাইদহ নতুন হাটখোলায় জেলা প্রশাসকের মালিকানাধীন জমিতেও নতুন নতুন ঘর বরাদ্দ দিয়ে কয়েক কোটি টাকা পকেটস্থ করা হয়েছে। এই টাকা হাবিব ছাড়াও কার পকেটে উঠেছে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে। এদিকে কতিপয় কর্মকর্তা কর্মচারী ঝিনাইদহ পৌরসভাকে লুটপাটের আখড়ায় পরিণত করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। বরং ধরা পড়ার পরও অনেকেই বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

ঝিনাইদহ পৌরসভার সচিব নুর মোহাম্মদ জানান, পৌর মার্কেট তৈরীর সময় নেয়া জমানতের টাকা পৌরসভার ফান্ডে নেই। তিনি বলেন, মার্কেট উচ্ছেদের পর একাধিক ব্যবসায়ি টাকা গ্রহণের বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। এ নিয়ে আমাদের করণীয় কিছুই নেই।

বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ পৌরসভার প্রশাসক ইয়ারুল ইসলাম জানান, তিনি প্রশাসক হিসেবে যোগদান করার পর কোন দোকানঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়নি, তাই এ বিষয়ে তিনি অবগত নন।




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!