খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আগুন নিয়ন্ত্রণে, খুলনায় পাট গোডাউনসহ ১০ দোকানের কোটি টাকার মালামাল পুড়ে ছাই

জয় শুধু সময়ের ব্যাপার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

দোদুল্যমান রাজ্য জর্জিয়ার পর পেনসিলভানিয়ায়ও রিপাবলিকান প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে টপকে গেলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। ভোট গণনার তথ্য বলছে, ইতিমধ্যে ২৬৪ ইলেকটোরাল ভোট নিশ্চিত করা বাইডেনের চূড়ান্ত জয় এখন কেবল সময়ের ব্যবধান মাত্র। অন্যদিকে জনমত জরিপের পূর্বাভাসের চেয়ে ভালো করে ভোটের আমেজে টানটান উত্তেজনা আনা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা ম্লান হয়ে আসছে। বৃহস্পতিবারও মনে হচ্ছিল আলাস্কা, পেনসিলভানিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনায় এগিয়ে থাকা ট্রাম্প নিঃশ্বাস ফেলছেন বাইডেন ঘাড়ে। তবে শুক্রবার জর্জিয়া ও পেনসিলভানিয়ায় বাইডেনের সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়ায় বলাই যায় ট্রাম্পের মিথ্যাচারের ফুলঝুরি আর মামলার মিছিলও যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে বাধা হতে পারবে না বাইডেনের। জর্জিয়ায় ভোট পুনর্গণনার সিদ্ধান্ত সেই সময়কে দীর্ঘায়িত করবে কেবল।

এদিকে বাইডেনের জয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়ায় দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা তার নিরাপত্তা জোরদার করেছে। তার পক্ষে কথা বলতে শুরু করেছে একসময়ের ঘোর বিরোধী রাশিয়ার মতো পরাশক্তি দেশগুলোও।

বার্তা সংস্থা এপির সর্বশেষ হিসাবে ওয়াশিংটন ডিসিসহ ৪৬ অঙ্গরাজ্যের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে দেশজুড়ে বাইডেন পেয়েছেন ৭ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজারের বেশি ভোট। আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৬ কোটি ৯৭ লাখ ৯৩ হাজারের বেশি। আর ইলেকটোরাল কলেজেও বাইডেন ২৬৪ ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন ২১৪ ভোট পাওয়া ট্রাম্প থেকে। জনপ্রিয় ভোটে বাইডেন অনেক এগিয়ে থাকলেও প্রেসিডেন্ট হতে হলে ৫৩৮ ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে তার দরকার হবে কমপক্ষে ২৭০ ভোট। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অবস্থা ছিলÑফল বাকি থাকা চার অঙ্গরাজ্যের সবগুলোতে জয় পেলে হোয়াইট হাউজ ছাড়তে হবে না ট্রাম্পকে। কিন্তু নর্থ ক্যারোলাইনা ছাড়া বাকি তিন রাজ্যেই এখন এগিয়ে বাইডেন। সেক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা রাজ্যগুলোতে বাইডেন জয় পেলে তার ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা দাঁড়াবে ৩০৬-এ। যা ২০১৬ সালের ট্রাম্পের জয় করা ভোটের সমান।

এপির হিসাবে জো বাইডেন ইতিমধ্যে জয় পেয়েছেন ওয়াশিংটন, অরিগন, ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো, নিউ মেক্সিকো, ইলিনয়, ভার্জিনিয়া, নিউ জার্সি, ম্যারিল্যান্ড, নিউ ইয়র্ক, ভারমন্ত, ম্যাসাচুসেটস, নিউ হ্যাম্পশায়ার, কানেকটিকাট, রোড আইল্যান্ড, ডেলাওয়্যার, ডিস্টিক অব কলম্বিয়া, মেইন, মিশিগান, উইসকনসিন এবং অ্যারিজোনায়।

অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতেছেন আইডাহো, ওয়েমিং, ইউটাহ, নর্থ ডাকোটা, সাউথ ডাকোটা, নেব্রাস্কা, ক্যানসাস, ওকলাহোমা, আরকানসাস, লুইজিয়ানা, মিসিসিপি, টেনেসি, কেন্টাকি, ইন্ডিয়ানা, আলাবামা, সাউথ ক্যারোলাইনা, মিসৌরি, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া, মন্টানা, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, ওহাইও, আইওয়া এবং লোয়াতে।

এখনো ফল বাকি আলাস্কা, পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা ও নেভাডার। উল্লিখিত রাজ্যগুলোতে এখনো যেসব ভোট গণনার বাকি তার বেশিরভাগই পোস্টাল বা ডাকযোগের ভোট। আর এবার এই ভোটগুলোর বেশিরভাগই যাচ্ছে বাইডেনের ঝুলিতে। এপির হিসাব বলছে, চার স্যুইং স্টেটের তিনটিতেই এখন এগিয়ে বাইডেন।

এর মধ্যে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে রয়েছে ১৬টি ইলেকটোরাল ভোট। সেখানে ৯৯ শতাংশ ভোট গণনা হয়েছে। বাকি আছে ১ শতাংশ (৫০ হাজার) ভোট। তাতে দেখা যাচ্ছে ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন বাইডেন। একই অনুপাতের ভোট পেয়েছেন ট্রাম্পও। তবে ভোটের সংখ্যায় কিছুটা এগিয়ে বাইডেন। এই সংখ্যা ১৫৫৭। অথচ ভোট গণনার প্রথম দিন সেখানে প্রায় লাখের বেশি ভোটে এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। রাজ্যটিতে ভোটের ব্যবধান খুব কম হওয়ায় পুনরায় গণনার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন স্টেট সেক্রেটারি।

নেভাডার ইলেকটোরাল ভোট ৬টি। সেখানে ৮৭ শতাংশ ভোট গণনায় দেখা যাচ্ছে ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশ নিয়ে এগিয়ে বাইডেন। ৪৮ দশমিক ১ শতাংশ নিয়ে খুব কাছাকাছি রয়েছেন ট্রাম্প। রাজ্যটিতে এখনো ২ লাখ ভোট গণনার বাকি। দুই প্রার্থীর ব্যবধান মাত্র ২০ হাজার ১৩৭ ভোট।

নর্থ ক্যারোলাইনায় ইলেকটোরাল ভোট ১৫টি। সেখানে ভোট গণনা হয়েছে ৯৪ শতাংশ। এর মধ্যে ৫০ দশমিক ১ শতাংশ নিয়ে এগিয়ে ট্রাম্প; বাইডেন পেয়েছেন ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট। রাজ্যটিতে দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান ৭৬ হাজার ৭০১। এখনো গণনার বাকি ৩ লাখ ৫০ হাজার ভোট।

গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য পেনসিলভানিয়ায় ইলেকটোরাল ভোট ২০টি। সেখানে ৯৮ শতাংশ ভোট গণনা শেষে দেখা যাচ্ছে, ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট নিয়ে এগিয়ে বাইডেন। ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট। সেখানে দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান ১৩,৬৬২। ভোট গণনার বাকি আছে ১ লাখ ৫০ হাজার। রাজ্যটিতে বুধবারও ট্রাম্প এগিয়ে ছিলেন প্রায় ৬ লাখ ভোটে। এখানে অবশ্য ভোটের পরে তিন দিন পর্যন্ত পোস্টাল ভোট গ্রহণ করা হয়। সে হিসাবে সেখানে গণনার বাকি থাকা ভোটের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আর তার বেশিরভাগই যেতে পারে বাইডেনের ঝুলিতে।

ট্রাম্প শিবির এরই মধ্যে বাইডেনের ঝুলিতে যাওয়া ব্যাটেলগ্রাউন্ড খ্যাত উইসকনসিন, মিশিগানসহ পেনসিলভানিয়া ও জর্জিয়ায় ভোট গণনা বন্ধ রাখার আবেদন জানিয়ে মামলা করেছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, শেষতক এ নির্বাচনের ফলাফলের বিষয়টি কি আদালতেই গড়াবে? সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্প শিবিরের সেই অভিযোগের মীমাংসা করতে পারবে?

তবে জর্জিয়া ছাড়া ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি মামলা খারিজ করে দিয়েছে আদালত। এছাড়া দেশটির আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্যত তা হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম। তারা বলছেন, ব্যালট, ভোট বা গণনা প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি থাকতেই পারে। কিন্তু তাতে চূড়ান্ত ফলাফলের কোনো হেরফের হবে না।

খোদ ট্রাম্প শিবিরের নির্বাচনী আইনজীবী বেঞ্জামিন গিনসবার্গ বলছেন, বৈধ ভোটকে অবৈধ ভোট ঘোষণা করার বিষয়টিকে শীর্ষ আদালত শুধু বিপুল ‘বঞ্চনা’ হিসেবেই দেখবে। ২০০০ সালে রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ ডব্লিউ বুশের পক্ষে পুনর্গণনার রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। ওই সময়েও রিপাবলিকান শিবিরে ছিলেন আইনজীবী বেঞ্জামিন।

আইনজ্ঞদের বক্তব্য অনুসারে আদালত মামলা আমলে নিলেও ফলাফল বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। যদি শীর্ষ আদালত কোনো একটি রাজ্যের মামলা গ্রহণ করে এবং রিপাবলিকানদের পক্ষেই রায় দেয়, তাহলেও তা চূড়ান্ত ফলাফলের নির্ধারক হয়ে উঠবে না।

এদিকে ট্রাম্প শিবিবের ভোট গণনা বন্ধের দাবির প্রতিবাদে ডেমোক্র্যাটরাও শুরু করেছেন প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। তা নিয়ে কিছুটা সহিংসতা ছড়িয়েছে। কয়েক রাজ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে অনেকে। ট্রাম্প নিজে ভোট গণনা বন্ধের আহ্বান জানানোর পর বাইডেনও কথা বলেছেন এই বিষয়ে। তিনি প্রতিটি রাজ্যের প্রতিটি ভোট গণনার আহ্বান জানিয়েছেন। তার সেই বক্তব্য ‘কাউন্ট এভরি ভোট’ হয়ে উঠেছে বিক্ষোভকারীদের সেøাগান।

বাইডেন নিজের জয়ের প্রত্যয় ব্যক্ত করে সমর্থকদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমি বিজয়ের ঘোষণা দিতে আসিনি। আমি বলতে এসেছি, আমরা বিশ্বাস করি, গণনা যখন শেষ হবে, তখন আমরাই নিজেদের বিজয়ী হিসেবে দেখতে পাব। আর সে বিষয় হবে সকলের, আমেরিকানদের, যুক্তরাষ্ট্রের।

তিনি আরেক এক টুইটে বলেছেন, কাউকেই যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র কেড়ে নিতে দেওয়া হবে না।

এদিকে গতকাল শুক্রবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগ বাইডেনের নিরাপত্তা জোরদার করেছে। ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, বাইডেনের প্রচার শিবির থেকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাকে শুক্রবার দিনের শুরুতে তিনি বক্তৃতা দিতে পারেন বলে জানানো হয়েছে। তারপরই গোয়েন্দা সংস্থা বাইডেনের নিরাপত্তা জোরদার করতে এজেন্ট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

তবে সংস্থাটির মুখপাত্র ক্যাথেরিন মিলহয়েন বলেন, জ্যেষ্ঠ পদে থাকা ব্যক্তিদের নিরাপত্তা আয়োজন কেমন হবে তা নিয়ে কোনো তথ্য সংস্থা থেকে দেওয়া হয় না। বাইডেন শিবির থেকেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে।

বাইডেনের গুরুত্ব বাড়তে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও। রাশিয়ার ক্রেমলিনপন্থি টিভি চ্যানেল শুক্রবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনকে আর শীর্ষ সংবাদ হিসেবে প্রচার না করলেও অন্যান্য সব চ্যানেলেই প্রাধান্য পেয়েছে ট্রাম্পের ভোট চুরির অভিযোগ। তবে ট্রাম্পের এই অভিযোগের যে কোনো প্রমাণ নেই তা খবরে বলা হয়নি।

বিবিসির মস্কো প্রতিনিধি স্টিভ রোজেনবার্গের এক বিশ্লেষণে বলা হয়, রুশ সরকারের জন্য ট্রাম্প সরকার বেশি উপকারী। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনোই রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সমালোচনা করেননি। তিনি মস্কোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখতে আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন ক্রেমলিনের নেতা পুতিনের অনেক সমালোচনা করেন। রাশিয়া সরকারের কাছে বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়া মানে বেশি বাধার সম্মুখীন হওয়া।

ওদিকে ইসরায়েলের ইদিওত আহরনত পত্রিকায় এক সাংবাদিক বলেছেন, জো বাইডেন জিতলে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার সঙ্গে চলবেন, সেটিই তিনি আশা করেন।

খুলনা গেজেট / এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!