জোয়ারের অস্বাভাবিক পানিতে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ ও রামপাল উপজেলার অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। হঠাৎ পানিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন প্লাবিত হওয়া গ্রামগুলোর বাসিন্দারা। বেশকিছু মৎস্য ঘেরও তলিয়েছে জোয়ারের পানিতে।
শুক্রবার (১৫ জুলাই) সকালে স্বাভাবিক জোয়ারের তুলনায় ৩-৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থায় পানির সমস্যা সমাধানের জন্য অতিদ্রুত প্লাবিত এলাকায় রিংবাঁধ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা গুলো চিহ্নিত করে বেড়িবাঁধ নির্মানের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হবে।
মোড়েলগঞ্জের পানগুছি নদীর পানি ৩ থেকে ৪ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় মোড়েলগঞ্জ পৌরসভার কাপুড়পট্টি সড়ক, কাচা বাজার, ফেরীঘাট, কালাচাঁদ মাজার এলাকা, সানকিভাঙ্গা প্লাবিত হয়েছে। এরবাইরে উপজেলার ঘষিয়াখালী, জিউধরার পালেরখন্ড, কাকরাতলী, শনিরজোড়, সোনাতলা, চন্দনতলা, জিউধরা, হোগলাবুনিয়ার ও বারইখালীসহ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
মোড়েলগঞ্জের পৌর এলাকার চা দোকানী জামাল শেখ বলেন, দুই দিন ধইরা জোয়োরের পানিতে মোগো পৌরসভার সবহানে পানিতে তলাইয়া গেছে। দুপুর সাড়ে ১১ থেকে ১২ মধ্যেয়ে পানিতে ভইরা যায় সবহানে। মুই চেয়ার পাইত্তা তার উপরে বইসা দোহানদারি হরতে আছি।
একই এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী কালাম মোল্লা বলেন, মোর হোটেলের মধ্যে একহাত পানি কাস্টমার এর মধ্যে বইতে চায় না। বেশ কয়েক বছর ধইরা এমন অবস্থা চলতে আছে। বছর বছর পানিও বাড়তেআছে। মোগো এইহানে বেড়িবাঁধ না দেলে আর হইবে না।
অন্যদিকে মোংলা- ঘোষিয়াখালি বঙ্গবন্ধু নৌ চ্যানেলসহ দাউদখালি, বগুড়া, তেতুলিয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রামপাল উপজেলার গিলাতলা বাজার, বাঁশতলী, ভোজপাতিয়া, হুড়কা, রাজনগরসহ পেড়িখালি ইউনিয়নের অনেক এলাকা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। মোংলা উপজেলারও কয়েক গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
রামপাল সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা সবুর রানা বলেন, জলযায়ু পরিবর্তের প্রভাবে দিনদিন রামপালের দাউদখালি নদীসহ জেলার সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগে জোয়ারের পানি ছিলো স্বাভাবিক ব্যাপার। এখন জোয়ারের পানিতে রামপালের সদর ইউনিয়নসহ নিম্নঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। রামপালে জোয়ারের পানিতে ঝুকিপূর্ণ এলাকা গুলো চিহ্নত করে দ্রুত বেড়িবাঁধের না দেয়া হলে আগামীতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আরও বাড়বে।
এর আগে বুধবার (১৩ জুলাই) বিকেলে ভৈরব নদীর পানির চাপে বাগেরহাট সদর উপজেলার কেশবপুর এলাকার একটি কালভার্ট ও কালভার্টের দুই পাশের প্রায় ২০ ফুট রাস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছিল। উপজেলার প্রশাসনের অর্থায়নে তাৎক্ষনিকভাবে বালুর বস্তা ও মাটি দিয়ে রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছিল।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাসুম বিল্লাহ জানান, পূর্নিমার প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের সময় সকল নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে মোড়েলগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকাসহ ওই উপজেলা ও রামপাল উপজেলার বেশকিছু এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। মূলত এসব এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকার কারনে জোয়ারের পানি সহজে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা গুলো চিহ্নিত করে জোয়ারের পানি ঠেকানোর জন্য প্রকল্প প্রস্তাবনা দেওয়া হবে। প্রকল্প অনুমোদন হলে দ্রুত কাজ করা হবে।
খুলনা গেজেট / আ হ আ