খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  খুলনা, বরিশালে আজ বৃষ্টি হতে পারে

জোড়া সেঞ্চুরিতে জিম্বাবুয়ের জয়

ক্রীড়া ডেস্ক

জিম্বাবুয়ের অনভিজ্ঞ বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে ঝুঁকি এড়াতে একাদশে ৮ ব্যাটসম্যান। কোনো বাঁহাতি স্পিনার ছাড়াই মাঠে বাংলাদেশ দল। তার মাশুলই যেন দিতে হলো এদিন। দুই ডানহাতি ইনোসেন্ট কাইয়া আর সিকান্দার রাজার ব্যাটে দিশেহারা টাইগাররা। দুইজনই সেঞ্চুরি তুলে নেন। তাদের ১৯২ রানের জুটির কল্যাণে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারের পর এবার ‘প্রিয়’ ওয়ানডে ফরম্যাটের শুরুটাও হার দিয়ে হলো বাংলাদেশের।

হারারেতে আগে ব্যাট করতে নেমে ২ উইকেট হারিয়ে ৩০৩ রানের পুঁজি পায় সফরকারীরা। তাদের ইনিংসের শুরু আর শেষে রান তোলার গতি কম থাকায় সংগ্রহ আর বেশি বড় হয়নি। ৩০৪ রান টপকাতে হলে রেকর্ড গড়তে হতো জিম্বাবুয়েকে। টাইগারদের বিপক্ষে ২৬১ রানের বেশি করে জয়ের রেকর্ড ছিল না তাদের। নিজেদের দিনে রাজা আর কাইয়ার শতকে রেকর্ড গড়েই জিতল তারা। ৫ উইকেট ও ১০ বল হাতে রেখে ৯ বছর বা ১৯ ম্যাচ পর বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় পেল জিম্বাবুয়ে।

এদিন স্ট্রাইক রেটের দিক দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাটিংয়ের সঙ্গে কাঠগড়ায় বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং বিভাগ। একাধিক ক্যাচ যেমন হাত গলেছে, তেমনি সহজ স্টাম্পিংয়ের সুযোগও নষ্ট হয়েছে। বোলাররাও চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেননি। মোসাদ্দেক, শরিফুল, মিরাজরা ছিলেন ধারহীন। ম্যাচ হেরে তারই খেসারত দিতে হলো সফরকারী বাংলাদেশ দলকে। ওয়ানডেতে দাপট দেখানো দলটাই হেরে বসল তুলনামূলক খর্ব শক্তির জিম্বাবুয়ের কাছে।

অথচ পাহাড়সম রানের টার্গেট দিয়ে বল হাতেও দাপুটে শুরু ছিল বাংলাদেশের। প্রথম দুই ওভারেই প্রতিপক্ষকের দুই ওপেনারকে তুলে নেন মুস্তাফিজ ও শরিফুল। প্রথম ওভারের শেষ বলে চাকাভাকে বোল্ড করেন মুস্তাফিজ। ব্যাক অফ লেন্থের বল কাভারে খেলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বল ব্যাটের নিচে লেগে ভেঙে দেয় উইকেট। ৬ বলে ২ রান করেন চাকাভা। পরের ওভারের পঞ্চম বলে তারিসাই মুসাকান্দাকে সাজঘরে ফেরান শরিফুল। ৫ বলে ৪ রান করেন মুসাকান্দা।

৬ রানে ২ উইকেট হারানোর পর কাইয়া আর মাধেভেরের তৃতীয় উইকেট জুটিতে প্রাথমিক বিপর্যয়ে সামাল দেয় জিম্বাবুয়ে। তাদের জুটি থেকে আসে ৫৬ রান। দারুণ খেলছিলেন দুই ব্যাটসম্যান, কিন্তু ১৪তম ওভারের প্রথম বলে কাইয়া অন সাইডে ফ্লিক করে ১ রান নেন। ফিল্ডার বল ধরতে না পারায় দ্বিতীয় রান নিতে যান কাইয়া। তাতেই রান আউটে কাটা পড়েন মাধেভেরে। ২ চারে ২৭ বলে ১৯ রান করেন তিনি।

এরপরের গল্পটা কাইয়া আর রাজার। চতুর্থ উইকেটে দলকে টেনে তোলার পাশাপাশি ব্যাট হাতে বাংলাদেশ দলের বোলারদের শাসন করেন দুইজন। দুইজনই তুলে নেন অর্ধশতক, সেই ফিফটিকে পরে রূপ দেন শতকে। যদিও তাদের এমন ইনিংস বড় করতে দেওয়ার জন্য ক্যাচ ছেড়ে আর স্টাম্পিং মিস করে আবদান রাখেন সফরকারী ফিল্ডাররা। শতকের দৌড়ে এগিয়ে কাইয়া। ১১৫ বলে শতকের দেখা পান এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তার সেঞ্চুরির ইনিংস সাজানো ছিল ১১ চার ও ১ ছয়ে।

যদিও শতকের পর ইনিংসটা বেশি টানতে পারেননি এই ডানহাতি। ইনিংসের ৪২তন ওভারে মোসাদেককে স্লগ করতে গিয়ে ফাইন লেগে ধরা পড়েন শরিফুলের হাতে। এর আগে শরিফুলের ১ ওভারেই দুই জীবন পেয়েছিলেন তিনি। ১২২ বলে ১১ চার ২ ছয়ে ১১০ রানের ইনিংস খেলেন কাইয়া। তবে সতীর্থকে হারানোর আগেই সেঞ্চুরি পেয়ে যান রাজাও। তার আগ্রাসী শতক আসে ৮১ বলে।

পরে রাজার ১০৯ বলে হার না মানা ১৩৫ রানের ইনিংসের ওপর ভর করে ৫ উইকেট আর ১০ বল হাতে রেখে ৩০৪ রানের লক্ষ্য টপকে রেকর্ড গড়া জয় পায় জিম্বাবুয়ে। ফর্মের তুঙ্গে থাকা নিজের ইনিংসটি সাজান ৮টি চার ও ৬টি ছয়ের মারে।

এর আগে হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ভালো শুরু পেলেও বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে পারেননি দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। জিম্বাবুয়ের অনভিজ্ঞ বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে ১৫৪ বল খেলে তাদের পার্টনারশিপ থেকে আসে ১১৯ রান। তামিম ৮৮ বলে ৯ চারে ৬২ রান করে আউট হলে ভাঙে জুটি।

যদিও আউট হওয়ার আগে ৭৯ বলে ওয়ানডেতে নিজের ৫৪তম ফিফটির স্বাদ পাওয়ার তামিম বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এই ফরম্যাটে ৮ হাজার রানের মালিক বনে যান। তার বিদায়ের পর ফিফটির দেখা পান আরেক ওপেনার লিটন। মাসাকাদজাকে অন সাইডে খেলে ৭৫ বলে এই স্বাদ পান তিনি। এটি তার ক্যারিয়ারের ১৫তম ও ওয়ানডেতে সপ্তম ফিফটি।

ফিফটি পূর্ণ করে ব্যাট চালিয়ে খেলে ছুঁটছিলেন শতকের দিকে। তবে ৩৪তম ওভারের প্রথম বলে দ্রুত সিঙ্গেল নিতে গিয়ে পেশিতে টান পড়ে তার। এরপর স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়েন। দুর্দান্ত খেলতে থাকা লিটন ৮৯ বলে ৮১ রানে রিটায়ার্ড হার্ট হন। ৯টি চার ও ১ ছয়ে এই ইনিংস সাজান তিনি। লিটন অসুস্থ হয়ে সাজঘরে ফিরলে ক্রিজে আসেন মুশফিকুর রহিম। বিজয়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে দলকে বড় সংগ্রহের দিকে নেন তিনি।

দুইজনই পেয়েছেন অর্ধশতকের দেখা। বিজয় ওয়ানডেতে ৩ বছর পর ফিরেই হাঁকান ফিফটি। ৪৭ বলে ক্যারিয়ারের চতুর্থ অর্ধশতকের দেখা পান এই ডানহাতি। তার এই ফিফটি আসে ৭ বছর ৮ মাস পর। সুযোগ ছিল সেঞ্চুরি করার। তবে একবার জীবন পেয়েও থামেন ৭৩ রানে। উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অফে ধরা পড়েন মুসাকান্দার হাতে। ৬ চার ও ৩ ছয়ে ৬২ বলে ৭২ রান করেন বিজয়।

শেষদিকে ফিফটি তুলে নেন মুশফিক। তার ৪৯ বলে অপরাজিত ৫২ রানের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ১২ বলে ২০ রানের সুবাদে ৫০ ওভার শেষে ২ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ৩০২ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। তবে শেষ ৫ ওভারে খুব বেশি রান তুলতে না পারায় আরো বড় সংগ্রহ থেকে বঞ্চিত হয় সফরকারীরা।

বাংলাদেশ একাদশ: ৩০৩/২ (৫০ ওভার)

জিম্বাবুয়ে: ৩০৭/৪ (৪৮.২ ওভার)

খুলনা গেজেট/ টি আই




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!