ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রোববার বিবিসি জানিয়েছে, রুশ প্রেসিডেন্ট নিজেই জানিয়েছেন, তিনি ‘জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত’ রয়েছেন এবং ‘কোনো এক পর্যায়ে’ তিনি আলোচনায় বসবেন।
এর আগে শনিবার পুতিনকে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের আহ্বান জানান জেলেনস্কি। হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, তা না হলে পরে পস্তাতে হবে। জেলেনস্কির এই হুশিয়ারির প্রেক্ষিতে তুরস্কের এক কর্মকর্তা বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট এখনও এ ধরনের কোনো বৈঠকের জন্য ‘প্রস্তুত নন’।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতি এবং তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা নৃশংস যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানে আলোচনার পথ খুঁজে বের করতে মধ্যস্থতাকারীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের চেষ্টা করছে তুরস্ক।
ইউক্রেনে প্রায় চার সপ্তাহ ধরে রাশিয়ার সামরিক অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে বেলারুশ সীমান্তে কয়েক দফা আলোচনা করেও সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি মস্কো ও কিয়েভের কূটনীতিকরীরা।
তুরস্কে আনতালিয়ায় রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ আর ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবার শীর্ষ বৈঠকেও কোনো ফল আসেনি। দুই পক্ষই জানিয়েছে সমঝোতায় পৌঁছানো খুব কঠিন।
পুতিন-জেলেনস্কিও নানা মাধ্যমে কথা ছোড়াছুড়ি করছেন। একে অপরকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। তবে দুইজন এখনও সমঝোতার জন্য সরাসরি কথা বলেননি।
এই দুই নেতার মধ্যে সমঝোতা বৈঠক আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান। গত বৃহস্পতিবার পুতিনের সঙ্গে এক ফোনালাপকালে তিনি এ প্রস্তাব দেন বলে জানায় আঙ্কারা। এরপর জেলেনস্কির সঙ্গেও কথা বলেন এরদোগান। এসব ফোনালাপে এরদোগানের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিনও ছিলেন।
শনিবার (১৯ মার্চ) এক বিবৃতিতে কালিন জানান, প্রেসিডেন্ট এরদোগানের প্রস্তাবের অনেক কিছুর সঙ্গেই একমত হয়েছেন পুতিন। তবে কয়েকটি শর্ত দিয়েছেন তিনি। কালিন জানান, ‘পুতিনের প্রথম শর্ত ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ হতে হবে। ন্যাটোতে যোগ দেওয়া যাবে না।
দ্বিতীয়ত, অস্ত্রবিহীন ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। তৃতীয়ত, নাৎসি আচরণ পরিহার করতে হবে। চতুর্থত, ইউক্রেনে রুশ ভাষার বিস্তারে যে বাধা আছে তা দূর করতে হবে।
পঞ্চামত, ক্রিমিয়াকে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং ষষ্ঠত, দনবাসের স্বীকৃতি দিতে হবে। যদিও এই দাবি ইউক্রেন মানছে না বলে জানিয়েছে তুরস্ক। প্রথম চার শর্ত মানলেই পরেই পঞ্চম ও ষষ্ঠ ইস্যুতে আলোচনায় বসতে রাজি আছেন পুতিন।
তুরস্কের এই কর্মকর্তা আরও জানান, পুতিন এখন আর জেলেনস্কিকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরাতে চাইছেন না। তার কথায়, ‘পছন্দ হোক বা না হোক, তিনি এখন জেলেনস্কিকে ইউক্রেইনের জনগণের নেতা হিসেবেই মেনে নিচ্ছেন।’
এ সময় এই দুই নেতার মধ্যে বৈঠক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ কর্মকর্তা। বলেন, ‘আমার বিশ্বাস কোনো না কোনো এক পর্যায়ে বৈঠকটি হবে। এক পর্যায়ে শান্তি চুক্তিও হবে। আমরা সবাই চাই এটা দ্রুতই হোক। কিন্তু হয়তো পুতিন মনে করছেন, তিনি তখনই এটা (বৈঠক) করবেন, যখন একটা শক্তিশালী অবস্থানে থাকবেন; যেন সামরিক ক্ষয়ক্ষতি বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় তাকে দুর্বল না দেখায়।’