জীবননগরে মাটিবহনকারী ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে পিতা নিহত পুত্র আহত ও অবরুদ্ধ হয়েছেন জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার কাটাপোল গ্রামের দক্ষিণ পাড়ায় লুুকমানের বাড়ির সন্নিকটে এই মর্মাত্নিক দূূূর্ঘটনাটি ঘটে।
নিহত হয়েছেন মহেশপুর উপজেলার শংকররহুদা- বাতানগাছী মসজিদ পাড়ার মৃত শমসের আলী বিশ্বাসের ছেলে ওহিদুল ইসলাম বিশ্বাস (৪০) এবং মারাত্মক আহত হয়েছেন নিহত ওহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের একমাত্র ছেলে ইয়াসিন আলী (৭) । এই ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে গেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনিম লিংকন জনরোষের মূখে পড়ে অবরুদ্ধ হন এবং শরীরিকভাবে লাঞ্চিত হন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে উদ্ধার করেন।
পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, শ্বশুর বাড়ি নতুন চাকলার পশ্চিম পাড়া তোফাজেল হোসেনের বাড়ি থেকে নিহত ওহিদুল ইসলাম তার ভাইরা ভাইয়ের সাথে অনেকদিন দেখা সাক্ষাৎ না থাকায় সকালে ভাইরা ভাইয়ের বাড়ি সাইকেল যোগে জীবননগর উপজেলার মিনাজপুর গ্রামে স্ত্রী ও একমাত্র পুত্র সন্তানকে নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। তিনি উপজেলার কাটাপোল দক্ষিণ পাড়ার লুকমানের বাড়ির সন্নিকটে পৌছালে বিপরীত দিক থেকে আসা বেপরোয়া গতিতে ইটভাটার মাটিবহনকারী ট্রাক্টরের ধাক্কায় রাস্তার উপর পড়ে যায় এবং মাটিবহনকারী ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় এবং মারাত্মকভাবে আহত হয় তার একমাত্র পুত্র সন্তান । স্থানীয়রা পরে নিহত ওহিদুল ইসলামের ছেলেকে উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করেন।
এদিকে স্থানীয় গ্রামবাসী জানান, কাটাপোল গ্রামের শাখাওয়াত, জুলহাসসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র বেশ কিছু দিন থেকে এলাকার বিভিন্ন জমি হতে মাটি কেটে ইটের ভাটায় বিক্রি করে আসছিল। প্রতিদিন ৫০-৬০টি ট্রাক বেপরোয়া গতিতে মাটি আনা নেয়া করতো। এতে মাঝে মাঝে দূর্ঘটনার কবলে পড়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অনেকে। এই কারণে ওই এলাকার লোকজন চরম ক্ষুব্ধ ছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকই জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হলেও মাটিকাটা বন্ধ না করায় বার বার উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মাটিকাটা বন্ধ করার আবেদন করলেও কোন ব্যবস্তা করেননি। যার কারণে ঐ এলাকার জনগন খুবই ক্ষুব্ধ ছিল।
আরো জানা গেছে, ক্ষমতাশীন দলের প্রভাব দেখিয়ে সাখাওয়াত হোসেন ও জুলহাস হোসেনের মাটি খাদকের কবলে পড়ে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। মাটি খাদকের সিন্ডিকেট মাটি কেটে বিভিন্ন ইটের ভাটায় বিক্রি করেন। ক্ষমতাশীন দলের হওয়ায় বেপরোয়া মাটিকবহনকারী ট্রাক্টরের এলাকার মানুষ অতিষ্ট হলেও কেউ কোন টুঁ-শব্দটিও করেন না। জীবননগর উপজেলায় প্রতিবছর অর্ধশতাধিক বেপরোয়া ইটেরভাটার মাটি বহনকারী ট্রাক্টরের ধাক্কায় ও চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হয় এবং শতাধিক মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে।
অপরদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে যেয়ে জনরোষের মুখে পড়ে এক পর্যায়ে জনতার হাতে লাঞ্ছিতের শিকার হয়েছেন জীবননগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মুনিম লিংকন। উত্তেজিত জনতার জনরোষের মুখে তিনি গ্রামের একটি বাড়িতে আশ্রয় নিলেও জনগণ তাকে দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ করে রাখে। পরবর্তীতে খবর পেয়ে, জীবননগর থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মুনিম লিংকনকে উদ্ধার করে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মুনিম লিংকন জানান, দূর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজিত শতাধিক লোক তাকে ঘিরে ধরে। এসময় বিক্ষুদ্ধ জনতা তার ওপর আচমকা হামলা চালালে। প্রাণ বাঁচাতে দৌঁড় দিলে বিক্ষুব্ধ লোকজন ইউ এন ও কে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় একটা ইট মাথায় লাগলে রক্তাত্ত হন তিনি। অবস্থার ভয়াবহতা বুঝতে পেরে তিনি পার্শবর্তী জমির উদ্দিনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এসময় বিক্ষুব্ধ লোকজনও ওই বাড়িতেও হামলা চালায়। খবর পেয়ে জীবননগর উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী হাফিজুর রহমান দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে বিক্ষুব্ধ লোকজনকে শান্ত করেন এবং অবরুদ্ধ থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে কৌশলে উদ্ধার করে তার বাসভবনে নেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী মো. হাফিজুর রহমান জানান, তিনি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন তিন শতাধিক মানুষ ইউ এন ও কে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। বিক্ষুব্ধ লোকজন খুবই উত্তেজিত ছিল। আমি কৌশলে ইউ এন ও কে উদ্ধার করে তার বাসভবনে নিয়ে আসি এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করি।
জীবননগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর ৫ মিনিট আগে আমি ওখানে পৌঁছাই এবং উত্তেজিত বিক্ষুব্ধ লোকজনকে শান্ত করার চেষ্টা করি। এসময় ইউ এন ও মহোদয় গাড়ি থেকে নামার পরই উত্তেজিত লোকজন তার ওপর হামলা চালায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সেলিনা আখতার সুমি জানান, ইটের আঘাতে ইউএনও মহোদয়ের মাথায় আঘাত লেগেছে। তবে তিনি শঙ্কামুক্ত।
খুলনা গেজেট/এমএইচবি