খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬
প্রতিদিন জোয়ারে ভাসছে অর্ধশতাধিক পরিবার

জিও ব্যাগের অভাব, ফের ভেসে গেল কয়রার দশহালিয়া বাঁধ

তরিকুল ইসলাম

ভোরের সূর্য ফোটার আগেই ভাঙা বাঁধের কাছে হাজির হয়েছিলেন ভুক্তভোগীরা। দুপুর পর্যন্তও চেষ্টা চালিয়ে ভাঙা বাঁধ আটকাতে সফলও হন। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি। পর্যাপ্ত জিও ব্যাগের অভাবে আবারও ভেসে গেছে কষ্টে আর ঘামে গড়া বাঁধ। এ দৃশ্য খুলনার কয়রা উপজেলার দশহালিয়া। এ গ্রামে জোয়ারের পানিতে ভাসছে অর্ধশতাধিক পরিবার। বুধবার ভোর ছয়টা থেকে বেলা দেড়টা টা পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক মানুষ কাজ করে দশহালিয়ায় ভেঙে যাওয়া দুটি স্থানে রিং বাঁধ দিতে সক্ষম হয়। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতিতে বালু পূর্ণ জিও ব্যাগের অভাবে কাজ সম্পন্ন করতে পারেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা  যায়,   ঘূর্ণিঝড় রিমালের তান্ডবে রোববার ভোররাতে দশহালিয়ার প্রায় আধা কিলোমিটার জরাজীর্ণ বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ শুরু হয়। তাৎক্ষণিক স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে স্থানীয় এলাকাবাসী বাঁধের উপর বস্তা দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করেন। তবে সোমবার দুপুরের জোয়ারে শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। দশহালিয়ার দুইটি স্থানের ৭০ মিটার বাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় জনগণ স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করেন। তবে পানি আটকানো সম্ভব হয়নি ‌‌। বুধবার ভোর থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় পাঁচতাধিক স্থানীয় জনগণ ফের বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। ঐদিন বেলা দেড়টা পর্যন্ত কাজ করে দুইটি পয়েন্টে রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকানোর ব্যবস্থা করতে সক্ষম হন। তবে যথাসময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জিও ব্যাগ না পাওয়ায় সেখানে চাপান দিতে পারেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। বালুর বস্তা চাপান না দিতে পারায় জোয়ারের পানিতে ফের রিং বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্লাবিত হয় এলাকা। সেখানে অর্ধশতাধিক পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। তাদের সুপেয় পানি ও খাবারের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।অসুস্থদের চিকিৎসা সেবা মিলছে না। তারা জোয়ারের সময় খাটের উপর অথবা বাঁধের উপর বসে থাকছে। অনেকের ঘর নষ্ট হয়ে গেছে। দশহালিয়ার কয়েকশ’ চিংড়ির ঘের তলিয়ে গেছে।
সাবেক ইউপি সদস্য শাহাদাত হোসেন, স্থানীয় বাসিন্দা আসাদুল, আরাফাতসহ কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, দশহালিয়ার ওই স্থানটি বারবার ভাঙছে। দুই বছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ সংস্কার করলেও ফের ভেঙেছে। মূলত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ হাত বদল হওয়ায় মানসম্মত হয় না। মূল ঠিকাদার থেকে কাজ সম্পন্ন করা শ্রমিক সরদার পর্যন্ত কয়েকটি দফায় লভ্যাংশ রেখে হাত বদল হয়। ফলে বরাদ্দের দশ শতাংশ টাকারও কাজ হয় না বলে অভিযোগ তাদের। কাজ মানসম্মত হয় না। যতটুকু চওড়া এবং উঁচু করার কথা থাকে সেটা করেন না। কাজের সাইটে কোন সাইনবোর্ডও দেয়া থাকে না। খুবই নিম্নমানের কাজ হাওয়ায় একই স্থান থেকে বারবার বাঁধ ভাঙছে বলে অভিযোগ তাদের।
মহারাজপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও খুলনা জেলা পরিষদের সদস্য মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন লাভলু বলেন, বাঁধ না ভাঙা পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড গুরুত্ব দেয় না। তাদের দায়িত্ব অবহেলার কারণে আজ আমরা পানিবন্দি। তিন দিন হলো এখান থেকে জোয়ার ভাটায় পানি উঠানামা করছে, এরপরেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের চরম উদাসীনতা রয়েছে। বালু পূর্ণ জিও ব্যাগ দেওয়ার কথা থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড সেটা এখানে পৌঁছাননি। তাদের গাফিলতিতে আজও পানি আটকানো সম্ভব হয়নি।
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগীয় উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা জনগ‌ণের সাথে থেকেই সার্বক্ষণিক তদারকি করছি। বাঁধ নির্মাণের সকল সরঞ্জামাদি আমরা সরবরাহ করছি। শ্রমিকের মজুরিও পরিশোধ করা হবে।
খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!