সংসদ নির্বাচনের তফসিল বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আগামী ১৯ নভেম্বর রোববার ভোর ৬টা থেকে ২১ নভেম্বর মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত সারা দেশে টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর আগে একই দাবিতে রোব ও সোমবার (১৯ ও ২০ নভেম্বর) হরতাল ডেকেছে ১২ দলীয় জোট।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে হরতালের এই ঘোষণা দেন। তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে ১২ দলীয় জোটের নেতারা রাজধানীতে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিল শেষে জোট নেতারা হরতালের ঘোষণা দেন।
এটিএম মা’ছুম বিবৃতিতে বলেন, ‘১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় বিরোধীদল ও দেশবাসীর মতামত উপেক্ষা করে জনধিকৃত ও সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। সমগ্র জাতি এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের বেশির ভাগ বিরোধী দল তথাকথিত নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফরমায়েসি তফসিল ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলতে চাই, বিরোধীদলের মতামত অগ্রাহ্য করে ঘোষিত তথাকথিত তফসিল দেশকে অস্থিতিশীল ও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবে। সংলাপের পথ রুদ্ধ করবে। রাজনীতিতে ঘোর অমানিশা নেমে আসবে। একতরফা প্রহসনের নির্বাচনের ফলে উদ্ভূত যে কোনো পরিস্থিতির দায় ষড়যন্ত্রকারী সরকার এবং আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, গণতন্ত্রের লেবাসধারী স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতার অপব্যবহার করে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার নাগরিকদেরকে ভোট দিতে দেয়নি। সাজানো প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে। জামায়াতসহ বিরোধীদলকে সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ বিরোধীদলের বহু শীর্ষ নেতাকে জেলে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। বিরোধীদলের অসংখ্য নেতাকর্মী এখনো বন্দী। মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হয়রানি করা হচ্ছে। সরকারি দল সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলেও বিরোধী দলকে কোনো গণতান্ত্রিক স্পেস দেয়া হচ্ছে না। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। লেভেল প্লেইং ফিল্ড এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার জন্য আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ বিরোধীদলের সকল শীর্ষ নেতা এবং গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদেরকে মুক্তি দিতে হবে। মিথ্যা ও সাজানো মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সভা-সমাবেশ ও মিটিং করার সুযোগ দিতে হবে। জামায়াতের তালাবদ্ধ কেন্দ্রীয় অফিসসহ বন্ধ সকল শাখা অফিস খুলে দিতে হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিরোধীদলগুলো এখনো আন্দোলন করছে। দেশি-বিদেশী মহল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোট চুরিতে অভ্যস্ত সরকারি দল সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপই করছে না। স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকার গোয়ার্তুমি করছে এবং ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনের দিকেই হাঁটছে। বিদগ্ধ মহল কমিশনের তফসিল ঘোষণাকে ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনের গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ মনে করছেন।
তিনি বলেন, দেশবাসী মনে করে, ষড়যন্ত্রমূলক নীল-নকশার তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন মূলত বিরোধীদলকে নির্বাচনের বাইরে রেখে অতীতের মত শাসকদলকে জিতিয়ে আনার কৌশল নিয়েছে। গণতন্ত্রকামী সংগ্রামী জনতা সরকারের বিনা ভোটে ক্ষমতা দখলের দিবাস্বপ্ন পূরণ হতে দিবে না। জনগণের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে কমিশনকে অবশ্যই এ তফসিল প্রত্যাহার করতে হবে। সকল দলের মধ্যে ঐকমত্য ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত করে কমিশনকে নতুনভাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের গণতন্ত্র হত্যার ফরমায়েসি তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে সারাদেশে আগামী ১৯ নভেম্বর রোববার ভোর ৬টা থেকে ২১ নভেম্বর মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করছি। ঘোষিত হরতাল কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে সফল করে তোলার জন্য জামায়াতের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সংগ্রামী দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’
১২ দলীয় জোটের নেতাদের মিছিল শেষে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি নওয়াব আলী আব্বাস খান, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামে বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আবদুল আউয়াল মামুন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সহ-সভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মো. ফারুক রহমান, জাতীয় পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট হান্নান আহমেদ খান বাবলু, যুগ্ম মহাসচিব কাজী নজরুল ইসলাম, জাগপার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য আসাদুর রহমান খান, কল্যাণ পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব নুরুল কবির ভূইয়া পিন্টু, আবদুল্লাহ আল হাসান সাকিব, ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এম এ বাশার, বাংলাদেশ জাতীয় দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুল আহাদ, প্রচার সম্পাদক বেলায়েত হোসেন শামীম, ইসলামী ঐক্যজোট যুগ্ম মহাসচিব ইলিয়াস রেজা, লেবার পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবির, যুগ্ম মহাসচিব শরীফুল ইসলাম, যুব জাগপার সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবলু, ছাত্র সমাজের সভাপতি কাজী ফয়েজ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান,ছাত্র জমিতের আদনান প্রমুখ।
খুলনা গেজেট/ টিএ