খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ কার্তিক, ১৪৩১ | ৩১ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১১৫৪
  দ্রুতই সিটি করপোরেশন, জেলা-উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভায় স্থায়ীভাবে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে : স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা

কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর জাবি ছাত্রলীগের হামলা, হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ

গেজেট ডেস্ক

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার পদত্যাগ করেছেন।

আজ সোমবার ভোররাত ৩টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যর প্রতিক্রিয়ায় রোববার রাত ১০টার দিকে বিভিন্ন আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা, ‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। রাত সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় জড়ো হন বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা।

অভিযোগ রয়েছে, তখন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে দুজন আন্দোলনকারীকে অবরুদ্ধ করে ফোন তল্লাশি করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এ খবর জানাজানি হলে রাত সাড়ে ১২টার দিকে বটতলা এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে হলের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে প্রাধ্যক্ষকে হলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখানোর অনুরোধ জানান আন্দোলনকারীরা। পরে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীকে নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার। তখনো শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হলের সামনে ও ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছিলেন।

এরপর রাত দেড়টার দিকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি রাত সোয়া ২টার দিকে ফের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সামনে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাধা দেন এবং মুখোমুখি অবস্থান নেন। এ সময় দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবিরসহ কয়েকজন শিক্ষক উভয়পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করেন। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের জামায়াত-শিবির আখ্যা দেন এবং নারী শিক্ষার্থীদের গালাগাল করেন।

রাত পৌনে ৩টার দিকে বাধা উপেক্ষা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পাল্টা ধাওয়া দেন শিক্ষার্থীরা। পরে আন্দোলনকারীরা হলের ফটকে গেলে তাদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হামলার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রাচুর্যসহ বেশ কয়েকজন এই হামলা করেছেন।

ছাত্রলীগের হামলায় আহত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব এবং নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিহা। এ ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তাও আহত হয়েছেন। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ নাজমুল হাসান তালুকদার ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উস্কে দিয়েছেন।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। পরে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে হলের প্রাধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের রাজাকার বলা হয়েছে। তারই প্রতিক্রিয়ায় তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আহ্বান করেন। এরমধ্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে কয়েকজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী স্লোগান দেওয়ায় তাদের আটকে রেখে মোবাইল তল্লাশি করা হয়েছে—এমন খবর পেয়ে হলের সামনে যান তারা। পরে হল প্রাধ্যক্ষের কাছে সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাইলে তিনি ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে ছাত্রলীগকে উস্কে দেন। এ সময় ছাত্রলীগ আক্রমণাত্মক স্লোগান দিয়ে তাদের ওপর হামলা চালালে তারাও একপর্যায়ে পাল্টা ধাওয়া দেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের অর্থ সম্পাদক ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ নেতা তৌহিদুল আলম তাকিদ বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা আমাদের হলের সামনে এসে কোটা সংস্কারের নামে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও ছাত্রলীগকে অবমাননা করে স্লোগান দিচ্ছিল। তখন আমরা একটা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে যেতে চাইলে তারা বাধা দেন এবং গালিগালাজ করেন। তাদের ওপর কোনো হামলা হয়নি, যথেষ্ট সম্মান দেখিয়েছি। আমরা হলে ফিরে যাওয়ার সময় তারা আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে।’

এ বিষয়ে অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, ‘আজ যে ঘটনা ঘটেছে, সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এভাবে হল চালানো সম্ভব না। আমি প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করছি।’

আজ সকাল ১১টায় উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন, এমন আশ্বাস পেয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে নিজ নিজ হলে ফিরে যান।

এ ছাড়া, ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে আজ সন্ধ্যা ৭টায় মশাল মিছিলের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!