ঘূর্ণিঝড় আসছে। শুনেছি ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত। এখন ভাটা চলছে, অথচ জল নামছে না। এখনও নদীতে জল রয়েছে। জোয়ার আসলে জলতো আরও বাড়বে। এই জল দেখে বুক কাঁপে। কারণ তিন বছর আগে ঝড়ে তিনটি ঘর ভেঙে যায়। এবারও ভয় লাগছে রাস্তা ভেঙে না বাড়ি-ঘর তলিয়ে যায়।
রোববার (২৬ মে) সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ এর প্রভাবে উত্তাল কাজিবাছা নদী তীরে দাড়িয়ে এভাবেই শঙ্কার কথা বলছিলেন বটিয়াঘাটার গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের বরণপাড়া এলাকার বাসিন্দা রমেশ চক্রবর্তী।
এই শঙ্কা শুধু রমেশেরই নয়, আছে ওই এলাকার শতাধিক পরিবারের।
একই এলাকার বিকাশ চন্দ্র বলেন, আমাদের রাস্তা বাঁধের উপর। ঘূর্ণঝড় যদি প্রবল হয়, তাহলে রাস্তা ভেঙে পানিতে তলিয়ে যাবে ঘর-বাড়ি। এই নিয়ে ভায়াবহ আতঙ্কে আছি। রাস্তা-ঘাট ভেঙে গেলে আমরা বিপদগ্রস্ত হয়ে যাবো।
তপসা সরকার বলেন, বাঁধের বালির বস্তা ভেঙে গেছে। বাতাস রাতে আরও প্রবল হবে। দিনে দেখা যায়, এদিক ওদিক যাপয়া যায়। কিন্তু রাতে তো দেখা যায় না। ঝড় আসলে ভয় লাগে।
বরণপাড়া এলাকার বাসিন্দা নিলিমা মন্ডল বলেন, মাটির-ঘর বাড়ি। ঝড় দেখলে ভয় লাগে। ভেঙে গেলে থাকবো কোথায়।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, রাতেই ঘূর্ণিঝড় রেমাল উপকূল অতিক্রম করবে। এসময় বাতাসের গতি থাকবে ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে ৮ থেকে ১০ ফুট জলোচ্ছ্বাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। রাতে বৃষ্টি বাড়বে।
খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে। সতর্ক থাকার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শুকনো খাবার, ওষুধ, ঢেউটিন ও নগদ টাকা প্রস্তত রাখা হয়েছে। প্রস্তত রয়েছে স্বাস্থ্যবিভাগ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি নেই।
খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব সাইক্লোন শেল্টারে মোট ৩ লাখ ১৫ হাজার ১৮০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এছাড়া ৩টি মুজিব কিল্লায় ৪৩০ জন মানুষ ও ৫৬০টি গবাদি পশু রাখা যাবে।
কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলায় ৫ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রয়েছ। উপকূলীয় এলাকার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/এএজে