জরুরি ভিত্তিতে ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে করোনা ভাইরাসের টিকা বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশসহ উৎপাদন সক্ষমতা আছে এমন দেশগুলোর কাছে করোনা ভাইরাসের টিকা উৎপাদনের প্রযুক্তি হস্তান্তর করারও অনুরোধ জানিয়েছেন।
শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত ১২ টায় জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে টিকা বৈষম্য বাড়ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে টিকা বৈষম্য বাড়তে দেখেছি। বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত উৎপাদিত টিকার ৮৪ শতাংশ উচ্চ ও উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মানুষের কাছে পৌঁছেছে। অন্যদিকে, নিম্ন আয়ের দেশগুলো ১ শতাশেরও কম টিকা পেয়েছে।
তিনি বলেন, জরুরি ভিত্তিতে এ টিকা বৈষম্য দূর করতে হবে। লাখ লাখ মানুষকে টিকা থেকে দূরে রেখে কখনই টেকসই পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। আমরা পুরোপুরি নিরাপদও থাকতে পারব না।
সবার জন্য ন্যায়সঙ্গত ও সাশ্রয়ী মূল্যে টিকার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কোভিডমুক্ত একটি বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে টিকার সর্বজনীন ও সাশ্রয়ী মূল্যে প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। গত বছর এ মহতী অধিবেশনে আমি কোভিড-১৯ টিকাকে ‘বৈশ্বিক সম্পদ’ হিসেবে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছিলাম। বিশ্বনেতাদের অনেকে তখন এ বিষয়ে সহমত পোষণ করেছিলেন। সে আবেদনে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। বরং আমরা ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে টিকা বৈষম্য বাড়তে দেখেছি।
প্রযুক্তি পেলে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে করোনার টিকা উৎপাদনে সক্ষম জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবিলম্বে টিকা প্রযুক্তি হস্তান্তর টিকার সমতা নিশ্চিত করার একটি উপায় হতে পারে। প্রযুক্তি সহায়তা ও মেধাসত্ত্বে ছাড় পেলে বাংলাদেশও ব্যাপক হারে টিকা তৈরি করতে সক্ষম।
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দুঃখজনক হলেও এ মহামারি আরও বেশ কিছুদিন স্থায়ী হবে বলে মনে হচ্ছে। সেজন্য এ অভিন্ন শত্রুকে মোকাবিলা করার জন্য অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন আমাদের অনেক বেশি নতুন, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বৈশ্বিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
এবার নিয়ে এটি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৮তম ভাষণ। নির্বাচিত রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক জাতিসংঘ অধিবেশনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে শেখ হাসিনা অন্যতম।
গত ২১ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের (ইউইনজিএ) উদ্বোধনী সেশনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর এবারের ইউএনজিএ সমাপ্ত হবে।
শতাধিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান জাতিসংঘের নীতি নির্ধারণী উচ্চ পর্যায়ের এ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে সশরীরে অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
২১ তারিখ উচ্চ পর্যায়ের সাধারণ আলোচনা শুরুর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ইউএনজিএ’র ৭৬তম অধিবেশন শুরু হয়। ওই দিন সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে মালদ্বীপের আব্দুল্লাহ শহিদ শপথ গ্রহণ করেন এবং তিনি বর্তমান অধিবেশন উদ্বোধন করেন।