খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

ফুলতলা : জমে উঠেছে প্রচারণা, আকরামের কাছে পাত্তা পাচ্ছেন না অন্যরা

একরামুল হোসেন লিপু

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা নির্বাচনের বাকি মাত্র ৪ দিন। ২১ মে ভোট গ্রহণ হবে খুলনার দিঘলিয়া, তেরখাদার মতো ফুলতলা উপজেলায়ও। শেষ সময়ে নির্বাচনী প্রচারণা জমে উঠেছে। ৮ প্রার্থীর প্রচারণা এখন তুঙ্গে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন বিরামহীনভাবে। ছুঁটছেন হাট-বাজার পাড়া-মহল্লা, চায়ের দোকান আর বাড়িতে বাড়িতে । চষে বেড়াচ্ছেন গ্রামের অলিগলি , রাস্তাঘাট।

প্রার্থীদের সাদাকালো আর রঙ্গিন পোস্টার শোভা পাচ্ছে গ্রামের অলিগলি, হাট বাজার, রাস্তাঘাটসহ সর্বত্র। দুপুর ২ টা থেকে রাত ৮ পর্যন্ত চলছে মাইকিংয়ে প্রচারণা। চলছে উঠান বৈঠক আর নির্বাচনী সভা। চায়ের দোকানে প্রার্থীদের নিয়ে চলছে সরব আলোচনা। নির্বাচনে ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও সর্বত্র আলোচনা বিষয়বস্তু উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নিয়ে।

নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোট ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদের লড়ছেন তিনজন।

এর মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ৪ বার নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আকরাম হোসেন লড়ছেন আনারস প্রতীক নিয়ে, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বিলকিছ আক্তার ধারা মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ সাব্বির হোসেন রানা ঘোড়া প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।

শেখ আকরাম হোসেনের ভাইপো খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবিদ হোসেন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেন। কিন্তু পরবর্তীতে দলীয় ঐক্য ধরে রাখার স্বার্থে সাংবাদিক সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। প্রতীক বরাদ্দের পরে তিনি সরে দাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ায় ব্যালট পেপারে তার নাম থাকছে।

ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিন জন। এরা হলেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কে এম জিয়া হাসান তুহিন উড়োজাহাজ প্রতীক নিয়ে, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি শেখ ইকবাল হোসেন তালা প্রতীক নিয়ে, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবু তাহের রিপনের প্রতীক মাইক।

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন হলেন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারজানা ফেরদৌস নিশা কলস প্রতীক নিয়ে। রেক্সোনা আজম লড়ছেন ফুটবল প্রতীক নিয়ে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফুলতলা উপজেলার রাজনৈতিক অঙ্গণে সুপরিচিত নাম শেখ আকরাম হোসেন। জন্ম এবং বেড়ে ওঠা ফুলতলা উপজেলার শিরোমনি এলাকাতে। ১৯৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৮১ সালে জেনারেল হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর তার প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। নিজের দূরদর্শিতা এবং যোগ্যতায় ফুলতলাসহ খুলনার জাতীয় পার্টির নীতি নির্ধারকদের অন্যতম একজন হয়ে ওঠেন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যোগদান করেন আওয়ামীলীগে। যোগদান করার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দলের ভেতর তিনি তার অবস্থান পোক্ত করেন। এরপর বাগিয়ে নেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ। ফুলতলা উপজেলা পরিষদের এ পর্যন্ত ৬ বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরমধ্যে তিনি ৪ বার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

উপজেলা প্রবর্তনের পর ১৯৮৫ সালে সর্বপ্রথম জাতীয় পার্টি মনোনীত ফুলতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও তিনি একই পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন। ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি নেতা মোঃ আলাউদ্দিন মিঠুর কাছে পরাজিত হন। এরপর ২০১৪ এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন।

দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এমপি হতে চেষ্টা চালিয়েছেন। সে চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার প্রত্যাশায়। ৭ জানুয়ারী অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৫ আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করেন। ওই নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের কাছে ১৯ হাজার ভোটের ব্যবধান হেরে যান। নির্বাচনের নারায়ণ চন্দ্র চন্দ পেয়েছিলেন ১ লাখ ১২ হাজার ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আকরাম হোসেন পেয়েছিলেন ৯৩ হাজার ভোট।

এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় নির্বাচনের শেখ আকরাম হোসেনের পাল্লা ভারি রয়েছে বেশি।

এদিকে ফুলতলা উপজেলা নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়েছেন খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বিলকিছ আক্তার ধারা। স্বামী প্রয়াত সরদার শাহাবুদ্দিন জিপ্পী ছিলেন ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এবং ক্লিন ইমেজসম্পন্ন একজন নেতা। দলের উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন দীর্ঘদিন। ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের নীতি নির্ধারকদের মধ্যে অন্যতম একজন।

স্বামীর উৎসাহ উদ্দীপনায় ধারার রাজনীতিতে আগমন। ইতিপূর্বে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ধারা নির্বাচন করেছেন। এবারই প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন। দলের একটি অংশ তার পক্ষে কাজ করছেন। পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে স্মার্ট ও আধুনিক ফুলতলা উপজেলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে জনতার মনোনীত প্রার্থী হিসেবে তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ সাব্বির হোসেন রানা উদীয়মান তরুণ নেতা হিসেবে প্রথমবারের মতো উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন। পদধারী বিএনপির নেতারা তার পক্ষে কাজ না করলেও তৃণমূল পর্যায়ের নেতা কর্মীরা প্রকাশ্যে অথবা গোপনে তার পক্ষে কাজ করছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের একটি অংশও তার পক্ষে কাজ করছেন। চাচা বিএনপি নেতা ও ফুলতলা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আবুল বাশার তার পক্ষে রয়েছেন।

ফুলতলা, দামোদার, জামিরা এবং আটরা গিলাতলা এ ৪ টি ইউনিয়ন নিয়ে ফুলতলা উপজেলা গঠিত। মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ১৫ হাজার ১৮৭।

 

 

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!