খুলনা, বাংলাদেশ | ২৩ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৮ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১২১৮
  বিএনপি কর্মী খুনের মামলায় সাবের হোসেন ৫ দিনের রিমান্ডে
  সামিট গ্রুপের আজিজসহ পরিবারের ১১ সদস্যের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ

ছাগলের সাথে বসবাস আম্পানে বিধ্বস্ত খাদিজার

নিতিশ সানা, কয়রা

প্রতি বছর নদী ভাঙ্গণে ঘর হারাতে হয় উপকূলবাসির। এক সময় খাদিজাদের ঘর ছিলো, ছিল জমিও। ৪৫ বছর আগে আবুল হোসেন শেখের সাথে তার বিয়ে হয়। তখন তার স্বামীর অনেক জায়গা জমি ছিল। প্রতি বছর নদী ভাঙ্গনে একটু একটু করে নদী গর্ভে বিলিন হতে থাকে তাদের জমি ও বাড়ি। নদী ভাঙ্গনের সাথে সাথে তারাও দূরে সরে এসে নতুন করে ঘর তৈরি করে বসবাস করতে থাকে। এক সময়ে শুধু বসতভিটা ছাড়া সব জমিই কপোতাক্ষ নদীর বুকে চলে যায়। কোন রকমে নদীতে মাছ ধরে টানাপোড়নের সংসার চলতে থাকে।

এদিকে তার স্বামী আবুল হোসেন শেখ এক মেয়ে ও এক ছেলেকে রেখে ২০০৮ সালে অন্য একজনকে বিয়ে করে পাড়ি জমায় পাশ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়ায়। শুরু হয় খাদিজার একলা চলার জীবন সংগ্রাম। এরপর নদীতে জাল টেনে কোন দিন একশ’ কোন দিন দেড়শ’ টাকা আয় করে চলতে থাকে মা, মেয়ে ও ছেলের সংসার। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলায় তার শেষ সম্বল বসত ভিটাও নদী গর্ভে চলে যায়। রাস্তার স্লোভে পুনরায় ঘর বেধে জীবনযুদ্ধে লড়াই চলতে থাকে অভাবের সংসার। তিনি নদীতে মাছ ধরার পাশাপাশি সেখানে ছাগলও পালতে থাকেন। এদিকে ছেলেও বড় হয়ে অভাবের সংসার ফেলে অন্য জায়গায় চলে যায়।

গেল বছরের আম্পানে নদীর বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় সেই ঝুঁপড়িও পানিতে ভেসে যায়। নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় আসবাবপত্র ও ঘর, নিঃস্ব হয়ে যান তিনি। সেখানে ঘর বাধার জায়গা না পেয়ে সদর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের কয়রা খালের গোড়ায় রাস্তার স্লোভে ছোট ঝুঁপড়ি বেধে কোন রকমে বসবাস করছেন। সেখানে চৌকির উপরে থাকেন তিনি আর চৌকির নিচে থাকে তার পালিত ৮ থেকে ১০টি ছাগল।

সরেজমিন পরিদর্শনকালে কয়রা সদর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের কয়রা গোড়ায় ঝুপড়িতে বসবাসকারী খাদিজার সাথে স্বাক্ষাতকালে এসব কথা জানালেন তিনি।

আমার ওয়ার্ডের ৪২ জনের নাম পাঠানো আছে। এর মধ্যে লটারীর মাধ্যমে সাত জনকে ঘর দেয়া হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য লটারী করায় তার চেয়ে স্বাবলম্বীরাও ঘর পাচ্ছেন।- ইউপি সদস্য

তিনি আরও বলেন, শুনেছি প্রধানমন্ত্রী গৃহহীনদের পাকা ঘর দিচ্ছেন। আমাদের এখানে আমার চেয়ে স্বাবলম্বীরা ঘর পাচ্ছেন। আমি যদি একটি ঘর পেতাম তাহলে বাকী জীবনটা হয়ত একটু নিশ্চিন্তে কাটাতে পরতাম।

৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আব্দুল গফ্ফার খুলনা গেজেটকে বলেন, আমি তাকে চিনি। তারা খুবই অসহায়। কোন জায়গা জমি নেই। আম্পানের পরে তাদেরকে কিছু খাদ্যসামগ্রী দেয়া হয়েছিল। এছাড়া তেমন কোন সহায়তা তাকে করা হয়নি। তবে এনজিও থেকে কিছু সহায়তা পেয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী গৃহহীনদের যে ঘর দিচ্ছেন সেই তালিকায় তার নাম রয়েছে। পর্যায়ক্রমে তিনিও পাবেন বলে আশাবাদি। আমার ওয়ার্ডের ৪২ জনের নাম পাঠানো আছে। এর মধ্যে লটারীর মাধ্যমে সাত জনকে ঘর দেয়া হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য লটারী করায় তার চেয়ে স্বাবলম্বীরাও ঘর পাচ্ছেন।

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!