ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদ্য সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকি ১২ দিন পর জনসমক্ষে এসেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে উপজেলা পরিষদে আসেন তিনি। পরে আসন্ন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা উপলক্ষে এক প্রস্তুতি সভায় অংশ নেন। তবে প্রকাশ্যে এলেও সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি তিনি।
সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হাসান। এ সময় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শফিকুল ইসলাম ও বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ উপস্থিত ছিলেন। সভা চলাকালে ভেতরে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। সভা শেষে বের হলে সাংবাদিকরা কথা বলতে চাইলে তিনি কোনো কথা না বলেই গাড়িতে উঠে চলে যান।
জানা গেছে, ছাগলকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান লাকি আত্মগোপনে ছিলেন। তাঁকে কার্যালয়, বাড়ি বা তাঁর পার্কে কোথাও দেখা যায়নি। মোবাইল ফোনে কল করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তিনি কোথায় ছিলেন, তাও কেউ বলতে পারেননি। তিনি সর্বশেষ গত ১৩ জুন অফিস করেন।
চেয়ারম্যান অফিস না করায় হয়রানির শিকার হয়েছেন সেবাপ্রত্যাশীরা। তাদের অভিযোগ, ঈদের ছুটি শেষে অফিস খোলার পর বুধবার পর্যন্ত চেয়ারম্যান অনুপস্থিত ছিলেন। ওই সময় উপজেলা পরিষদে এসে তাঁকে না পেয়ে ফিরে গেছেন ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয়রা বলছেন, লায়লা কানিজের বাবা কফিল উদ্দিন আহম্মদ ছিলেন খাদ্য কর্মকর্তা। তাঁর মেয়ে লায়লা কানিজ সরকারি তিতুমীর কলেজে শিক্ষকতা করলেও রাজস্ব কর্মকর্তার সঙ্গে বিয়ের পর তাঁর ভাগ্য খুলে যায়। গত ১৫ বছরে তাঁর সম্পদ লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। তিনি এসব সম্পদ গড়েছেন তাঁর স্বামী আলোচিত সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের অবৈধ উপার্জনে। শিক্ষক থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া লায়লা কানিজের নামে-বেনামে রয়েছে প্রচুর সম্পদ।
তাঁর নির্বাচনী হলফনামা থেকে জানা গেছে, বার্ষিক আয় বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট-দোকান ও অন্যান্য ভাড়া থেকে ৯ লাখ ৯০ হাজার, কৃষি খাত থেকে ১৮ লাখ, শেয়ার-সঞ্চয়পত্র-ব্যাংক আমানতের লভ্যাংশ থেকে ৩ লাখ ৮২ হাজার, উপজেলা চেয়ারম্যানের সম্মানী বাবদ ১ লাখ ৬৩ হাজার ও ব্যাংক সুদ থেকে ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাঁর জমা রয়েছে ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। তাঁর কৃষি জমির পরিমাণ ১৫৪ শতাংশ, আর অকৃষি জমির মধ্যে রয়েছে– রাজউকে পাঁচ কাঠা, সাভারে সাড়ে ৮ কাঠা, গাজীপুরে ৫ কাঠা, গাজীপুরের পূবাইলে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ ও ২ দশমিক ৯০ শতাংশ, গাজীপুরের খিলগাঁওয়ে ৫ শতাংশ ও ৩৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ, গাজীপুরের বাহাদুরপুরে ২৭ শতাংশ, গাজীপুরের মেঘদুবীতে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ, গাজীপুরের ধোপাপাড়ায় ১৭ শতাংশ, নাটোরের সিংড়ায় ১ একর ৬৬ শতাংশ এবং নিজ জেলার রায়পুরায় ৬৮ শতাংশ, মরজালে ২১৮ দশমিক ২৫ শতাংশ, শিবপুরে ৪৩ দশমিক ১৮ শতাংশ ও যশোরে সাড়ে ৪৪ শতাংশ। সব মিলিয়ে টাকার অঙ্কে তাঁর সম্পদের পরিমাণ শতকোটি টাকা।
রায়পুরা উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাজ তাহমিনা মানিক বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর গত এক বছর লায়লা কানিজ কখনোই নিয়মিত অফিস করতেন না, মাঝেমধ্যে আসতেন। পরিষদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভায় তিনি উপস্থিত থাকতেন না।
রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফজাল হোসাইন বলেন, এটা রায়পুরার জন্য একটা দুঃখজনক অধ্যায়, লজ্জাজনক ঘটনা। স্বামীর অবৈধ টাকার প্রভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হয়েছেন। রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগকে তিনি তছনছ করে দিয়েছেন।
জানতে চাইলে রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হাসান বলেন, রোববারের উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভার ব্যাপারে শনিবার তাঁকে ফোন দিয়েছিলাম, তিনি ফোন ধরেননি। পরদিন সকালে অন্য একটি ফোন নম্বর থেকে তাঁর রেফারেন্স দিয়ে একজন বলেন, তিনি সোমবার থেকে অফিসে আসবেন। তবে এলেন বৃহস্পতিবার।
খুলনা গেজেট/কেডি