খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  খুলনায় মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের সংঘর্ষে নিহত ২
  ফ্যাসিবাদের শেকড় অনেক দূর ছড়িয়ে গেছে : আইন উপদেষ্টা

ছড়িয়ে পড়ছে বন্যা, দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি

গেজেট ডেস্ক

টানা বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে শেরপুরে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলার বেশ কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাঁচটি উপজেলার ২৮টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রামে পানি উঠেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন দেড় লাখেরও বেশি মানুষ। অনেক পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পানিবন্দি মানুষ চরম কষ্টে দিন পার করছেন।

গত শুক্রবার থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত বন্যার পানিতে ডুবে নারী, বৃদ্ধ, কিশোরসহ মোট ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে নালিতাবাড়ী উপজেলায় মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। তারা হলেন– জহুরা খাতুন, ইদ্রিস আলী, ওমিজা বেগম, দুই ভাই হাতেম আলী ও আলমগীর হোসেন। এদিকে নকলা উপজেলার উরফা ইউনিয়নের কুড়েরকান্দা গ্রামে বন্যার পানিতে পড়ে থাকা বিদ্যুতের ছেঁড়া তারে সংস্পর্শে মোক্তার হোসেন নামে একজন মারা গেছেন।

ঝিনাইগাতী থানার ওসি মোহাম্মদ আল আমিন জানান, নলকুড়া ইউনিয়নের মহারশি নদীর সন্ধ্যাকুড়া এলাকা থেকে শনিবার একটি পচা-গলা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য এটি শেরপুর জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলার দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার পর ফুলপুর ও তারাকান্দায়ও বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানান, ময়মনসিংহ বিভাগের কংস, জিঞ্জিরাম, সোমেশ্বরী ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদনদীর পানির সমতল বাড়ছে। ভুগাই নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমানে শেরপুরে ভুগাই নদী, নাকুয়াগাঁও এবং জামালপুরে জিঞ্জিরাম নদী গোয়ালকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে দেশজুড়ে প্রায় টানা চার দিন বৃষ্টি হলেও গতকাল রোববার সকাল থেকে বৃষ্টি আরও কমে গেছে। এর মধ্যে বৈরী আবহাওয়ার জন্য দেশের চার বন্দরকে দেওয়া সতর্ক সংকেত গতকাল উঠিয়ে নিতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, তীব্রতা কমলেও আগামী শুক্রবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হতে পারে। এর পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে গরম পড়তে পারে।

গতকাল সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় বন্যার্তদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। শতাধিক গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের মাঠ তলিয়ে রয়েছে। অসংখ্য বাড়িঘর পানিতে নিমজ্জিত। মাছের খামার থেকে কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে যাওয়ায় খামারিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। শনিবার রাত থেকে নতুন করে শেরপুর সদর এবং নকলা উপজেলার আরও সাতটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় মহারশি, সোমেশ্বরী, চেল্লাখালী, ভোগাই ও মৃগী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বানভাসিদের উদ্ধারে কাজ করছে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, বিজিবি ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এ ছাড়া শুকনা খাবারসহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। এসব কাজে অংশ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন।

এদিকে শেরপুরের যেসব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোলা হয়েছে, সেগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নালিতাবাড়ীতে আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১২৩টি। এর মধ্যে ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

নেত্রকোনার দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলার অন্তত ১০টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানি উঠেছে ওইসব ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রামে। প্রায় সাড়ে ৩০০ হেক্টর জমির আমন ধান তলিয়ে গেছে।

দুর্গাপুরে সোমেশ্বরী ও জারিয়ার কংস নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি গতকাল সন্ধ্যায় বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া মহাদেও, সদর ও বারহাট্টা উপজেলার কংস, মগড়া, খালিয়াজুরীর ধনুসহ বিভিন্ন নদনদীর পানি বাড়ছেই।

দুর্গাপুর উপজেলার সাত ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গাঁওকান্দিয়া, কুল্লাগড়া, কাকৈরগড়া, চণ্ডীগড় ও বাকলজোড়া ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নের প্রায় ৪০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া পূর্বধলা উপজেলাতেই পানি প্রবেশ করছে। উপজেলার জারিয়ায় কংস নদীর পানি বেড়ে ময়মনসিংহ-জারিয়া রেললাইনে উঠে গেছে।

দুর্গাপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শিরিন আক্তার বলেন, পাহাড়ি ঢলে শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০ লাখ টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নীপা বিশ্বাস বলেন, প্রায় ১০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত। এর মধ্যে ৬ হাজার ২০০ হেক্টর ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নিম্নাঞ্চলের অনেক মানুষ পানিবন্দি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শনিবার কাকৈরগড়া ইউনিয়নের পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন করে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

কলমাকান্দা সদরসহ লেংঙরা, খারনৈ, রংছাতি ও নাজিরপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কে পানি উঠেছে। এসব ইউনিয়নের প্রায় ১০০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানির তোড়ে কিছু গ্রামীণ সড়ক ভেঙে গেছে। বেশ কিছু বাড়িঘরও ধসে গেছে। এ ছাড়া বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ ও বারান্দায় পানি ঢুকেছে। তলিয়ে গেছে শতাধিক পুকুর, ধান ও বীজতলা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শহিদুল ইসলাম জানান, পাহাড়ি ঢলে পানি বেড়েছে। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। বন্যা মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত আছে।

এদিকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে ৩ হাজার একর জমির আমন ধান ডুবে গেছে। যাদুকাটা নদীর পানি ক্রমশ বাড়ছে। ফলে আনোয়ারপুর সেতুর পূর্ব পাশ তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় গতকাল সকাল থেকে সড়ক পথে জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিঘ্নিত হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান উদ-দৌলা বলেন, আকস্মিক বন্যায় তাহিরপুরের আমন ধান ডুবে গেছে।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!