ম্যানচেস্টার সিটিকে ১-০ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ট্রফি জিতলো চেলসি। এর আগে ২০১২ সালে লা ব্লুজরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। চেলসির হয়ে ম্যাচের ৪২ মিনিটের সময় একমাত্র গোলটি করেন জার্মান ফুটবলার কাই হ্যাবার্টজ।
বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় পোর্তোর এস্তাদিও দো ড্রাগাওয়ে অল ইংলিশ ফাইনালটি শুরু হয়। ম্যানসিটি এবার প্রথমবার চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠেছিল। কিন্তু ভাগ্য তাদের সহায় হয়নি।
দারুণ এক কাউন্টার অ্যাটাকে উড়তে থাকা সিটিজেনসদের হারিয়ে হারিয়ে শিরোপা নিজেদের করে নিলো ব্লুজরা। ম্যাসন মাউন্ট মাঝমাঠের বাঁ দিক থেকে লম্বা পাসে বল সামনে বাড়ান। সিটির ডিফেন্ডারদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়ে এগিয়ে থেকে ডি বক্সের একটু সামনে থেকে বল নিজের পায়ে নেন হ্যাবার্টজ, এগিয়ে এসে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন সিটির গোলরক্ষক অ্যাডারসন, তাকে ফাঁকি দিয়ে নিখুঁত শটে বল জালে জড়ান এই জার্মান।
প্রথমার্ধ শেষে ১-০ গোলের ব্যবধান নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল। দ্বিতীয়ার্ধে আর গোল শোধ করতে পারেনি গার্দিওয়ালার সিটি। শেষ পর্যন্ত হারের বেদনা নিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে মাঠ ছেড়েছেন প্রথমবার ফাইনালে ওঠা সিটি। অথচ ম্যাচে ৬১ ভাগ সময় বল ছিল সিটিজেনদের পায়ে। আক্রমণেও পিছিয়ে ছিল না ( সিটি ৮, চেলসি ১০)। কিন্তু চেলসির রক্ষণভেদ করে বল জড়াতে পারেনি জালে।কাউন্টার অ্যাটাক আর লম্বা পাসে কুপোকাত করেছেন কান্তে-হ্যাবার্টজরা।
দুর্দান্ত খেলেন এনগোলো কান্তে। তাকে রুখতেই হাঁসফাঁস করেছেন সিটির ফুটবলাররা। দারুণ খেলার বদৌলতে ম্যাচসেরার পুরষ্কার ওঠে তার হাতে। সর্বশেষ ৫ বছরে কান্তে বিশ্বকাপ ট্রফি-চ্যাম্পিয়নস লিগসহ সবধরণের বড় ট্রফিই জেতেন।
শুধু কান্তে নয় রাইটব্যাকে অসাধারণ খেলেন রিস জেমস; রেকর্ড ৮৯ মিলিয়ন ফাউন্ডে স্ট্যামফফোর্ড ব্রিজে আসা ২১ বছর বয়সী হ্যাবার্টজতো ম্যাচ জয়েরই নায়ক। অ্যান্টেনিও রুদিগার সিটির প্রাণভোমরা ফিল ফোডেনকে কার্যত বোতলবন্দি করে রেখেছিলেন অন্যদিকে মাউন্ট অবিশ্বাস্য খেলেন বরাবরের মতোই।
এই ম্যাচের প্রথমার্ধে গ্রোইন ইনজুরিতে মাঠ ছাড়েন চেলসির ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার থিয়াগো সিলভা। আর ম্যাচের ৫৯ মিনিটের সময় ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়েন সিটির মাঝ মাঠের ফেরিওয়ালা কেভিন ডি ব্রুইনা।
চেলসি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের তৃতীয় দল যারা দুবার করে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে। এর আগে লিভারপুল (২০০৪-২০০৫ ও ২০১৮-১৯) এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (১৯৯৮-১৯৯৯ ও ২০০৭-২০০৮) দুবার করে জেতে।
মাত্র চার মাস আগে টমাস টুখেল চেলসির দায়িত্ব নেন। গত আসরে প্রথমবারের মতো পিএসজিকে ফাইনালে তুলেছিলেন এই জার্মান কোচ, তবুও লিগে খারাপ খেলায় তাকে বরখাস্ত করে প্যারিসের কর্তারা। এবার স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে এসেই চার মাসের মাথায় দলকে তোলেন ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের ফাইনালে এবং শেষ করেন শ্রেষ্ঠ হয়েই।
এদিকে দলকে ইপিএল চ্যাম্পিয়ন করে ইংল্যান্ডের সেরা বানিয়েছিলেন পেপ গার্দিওয়ালা। এবার ছিল ইউরোপ সেরা হওয়া; কিন্ত্য ভাগ্যদেবি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। সর্বশেষ তিন ম্যাচে টুখেলের কাছে হার মেনেছেন গার্দিওয়ালা।
এর আগে টানা তিন ম্যাচ হেরেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদ ও লিভারপুলের বিপক্ষে। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার না নামানোসহ বেশ কিছু ভুল করেছেন গার্দিওয়লা। সেই ভুলেরই খেসারত দিইয়েছেন দিন শেষে। সেই সঙ্গে তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি জয়ের অপেক্ষা বাড়লো।
ল্যাম্পার্ডের পরবির্তে প্যারিস থেকে চেলসিতে উড়ে এসে টুখেল অকল্পনীয় পরিবর্তন ঘটান। হারতে থাকা লা ব্লুজদের ফেরান জয়ের ধারায়। সেই সঙ্গে ৮ বছরের ব্যবধানে দুবার ট্রফি ঘরে তুললো চেলসি। এদিকে প্রথমবার ফাইনালে উঠে ট্রফি অধরা থেকে গেলো সিটির। ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের স্বাদ পেতে অন্তত অপেক্ষা করতে হবে আরও এক মৌসুম। আপাতত বিশ্ব ফুটবলে চলুক টুখেলের চেলসির জয়গান। সময় এখন নীল-বাহিনীর, সময় এখন চেলসির।
খুলনা গেজেট/কেএম