ড্রাগন চাষ ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে যশোরের চৌগাছার কৃষিতে। এ অঞ্চলের গুটি কয়েক চাষি পাঁচ ছয় বছর আগে শখের বশত ড্রাগনের চাষ শুরু করেন এবং সফলতা পান। অধিক লাভজন হওয়ায় বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে।। ব্যয় বেশি কিন্তু লাভও বেশি তাই প্রতি বছরই উপজেলাতে বৃদ্ধি পাচ্ছে ড্রাগন চাষ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন নারায়নপুর, পাতিবিলা ও হাকিমপুরে চাষিরা ড্রাগন চাষে ব্যাপক ঝুঁকে পড়েছেন। এই তিনটি ইউনিয়ন ছাড়াও উপজেলার স্বরুপদাহ ও সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নে বিচ্ছিন্নভাবে ড্রাগনের চাষ শুরু করা হয়েছে।
বর্তমানে চৌগাছাতে ৪৫ হেক্টর জমিতে ড্রাগনের চাষ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর ৭ হেক্টর জমি বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে ড্রাগন ফলের চাহিদা বেশি সে কারণে দামও অন্য ফলের চেয়ে কিছুটা বেশি। তাই কৃষক ড্রাগন চাষে সাফল্য পাচ্ছেন।
উপজেলার পাতিবিলা, হাকিমপুর ও নারায়নপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, যে জমিতে কৃষক আগে ধান, পাট বা সবজির চাষ করতেন সেই জমিতে ড্রাগনের চাষ করেছেন। ইউনিয়ন দুুটির মাঠে বিঘার পর বিঘা জমিতে চাষ হয়েছে ড্রাগন ফলের। চৌগাছা-কোটচাঁদপুর সড়কে মুক্তদাহ মোড় পার হলেই সড়কের পূর্বপাশে দেখা মিলবে ড্রাগনের ক্ষেত। বিঘার পর বিঘা জমিতে চাষ হয়েছে মনোমুগ্ধকর ও সুস্বাদু এই ফলের। পথচারীরা চলতে পথে অনেক সময় থমকে যান এবং নতুন এই চাষ দেখে মুগ্ধ হয়ে উঠেন, অনেকে মন্তব্য করেন এ যেন ড্রাগনের রাজধানী।
ড্রাগন ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষি পাতিবিলা গ্রামের আইনাল মন্ডলের ছেলে আক্তার হোসেন, একই গ্রামের নাসির উদ্দিনের ছেলে রুবেল হোসেন। এই চাষিরা জানান, তারা কয়েক বন্ধু মিলে একই মাঠে সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে ২ বছর আগে ড্রাগন চাষ শুরু করেন। গত দুই বছরে তারা সমুদয় জমিতে ব্যয় করেছেন ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা আর দুই বছরে ফল বিক্রি করেছেন প্রায় ১৬ লাখ টাকা।
উপজেলার কৃষকরা জানান, ড্রাগন চাষ প্রথম দিকে ব্যয় বেশি এরপর ধীরে ধীরে ব্যয় কমে যায়, আয় বাড়ে। একবার ড্রাগন চাষ শুরু করলে ১৫ থেকে ১৬ বছর একাধারে ফল দিতে থাকে। বাজারে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা, তাই ফল বিক্রি উপযোগী হলে ব্যাপারী ক্ষেতে চলে আসেন। ১২০ টাকা হতে ৩০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি করা যায় বলে কৃষকরা জানান।
কৃষক আক্তার হোসেনের মত ওই মাঠে তরিকুল ইসলাম সাড়ে ৪ বিঘা, শাহাবুদ্দিন সাড়ে ৩ বিঘা, লিটন হোসেন দেড় বিঘা, নাসির উদ্দিন দেড় বিঘা, রবিন ঘোষ সাড়ে ৩ বিঘা, বিষ্ণু ঘোষ দেড় বিঘা, শফিয়ার রহমান দেড় বিঘা জমিতে ড্রাগনের চাষ করেছেন। কৃষকরা জানান, ড্রাগনে পোকার আক্রমণ কম তবে গাছের গোড়া পচার রোগ দেখা দেয়। এ সময়ে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করলে গাছকে রক্ষা করা যায়। গাছে ফল ধরার পর দেড় মাস পরেই বিক্রি করার উপযোগী হয়। অন্য যে কোন ফসলের চেয়ে ড্রাগন একটি লাভজন চাষ বলে মনে করছেন চাষিরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ড্রাগন এক ধরনের ফণিমনসা বা ক্যাকটাস প্রজাতির ফল। এই ফলের উৎস মেক্সিকো হলেও বাংলাদেশে চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। ড্রাগন ফলের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবেনা। ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ। ড্রাগন ফল খেলে হজমে সহায়তা করে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সমরেন বিশ্বাস বলেন, ড্রাগন চাষ লাভজনক হওয়ার কারণে প্রতি বছরই চাষ বাড়ছে। কৃষকরা যাতে এ ধরনের ফসলের চাষ আরও আগ্রহী হয়ে উঠেন সে লক্ষে কৃষি অফিস নিয়মিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
খুলনা গেজেট/ টি আই