যশোরের চৌগাছায় বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ। সেই সাথে মৌমাছির গুনগুন শব্দ ক্ষেতসহ চারপাশ মুখরিত করে তুলেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে উপজেলায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে নানা জাতের সরিষার চাষ করা হয়েছে। কিন্তু দু’সপ্তাহ আগে একটানা বৃষ্টিতে ১শ হেক্টর জমির সরিষা সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। আর ২শ’ হেক্টর জমির সরিষা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে যে সব মাঠে সরিষা বেঁচে আছে তাতে এখন ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ফলন ভাল হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
চৌগাছার বিভিন্ন এলাকার মাটির গুনাগুন ভেদে নানা জাতের সরিষার চাষ করেন কৃষকরা। এ বছর বারী-১৪, বারী-১৭, ১৮, বিনা-৯, রায়, টরি-৭ সহ দেশীয় জাতের সরিষার চাষ বেশি হয়েছে।
কৃষকরা জানান, বৃষ্টির কারণে অনেক এলাকার সরিষা নষ্ট হয়ে গেছে। সে কারণে এ বছর সরিষার বাজারদর ভাল হবে বলে তারা আশায় বুক বেঁধেছেন। সরিষা চাষে খরচ খুবই কম। বিঘা প্রতি চাষিদের দেড় থেকে ২ হাজার টাকা ব্যয় হয়। ভাল ফলন হলে ১ বিঘা জমিতে ৭ থেকে ৮ মণ সরিষা পাওয়া যায়। বর্তমানে বাজারে ১ মণ সরিষা ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সেই হিসেবে ১ বিঘা জমি থেকে ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকার সরিষা বিক্রি করা সম্ভব হবে। এছাড়া সরিষার গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। কৃষকরা জানান, যে সব জমির সরিষা বৃষ্টির পানিতে মারা গেছে সেই সব জমি ইতোমধ্যে তারা প্রস্তুত করা শুরু করেছেন। সেখানে আগেভাগেই ইরি ধানের চাষ হবে।
ফুলসারা ইউনিয়নের চান্দা গ্রামের কৃষক তপন কুমার জানান, তিনি চলতি বছরে ২ বিঘা জমিতে রায় জাতের সরিষা চাষ করেছেন। সমস্ত জমি যখন সরিষার সবুজ গাছে ভরে উঠে, ঠিক সেই সময়ে একটানা তিনদিনের বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়। বৃষ্টি থামার পর জমি থেকে পানি বের করে তিনি দ্রুত পরিচর্যা শুরু করেন। এখন সব জমিতে সরিষায় ফুল এসেছে। আর কোন দুর্যোগ না হলে বৃষ্টির কারণে যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে। ওই মাঠে কৃষক আশরাফুল ইসলাম ১০ কাঠা, পবন কুমার ১ বিঘা, মাসুদ রানা ১ বিঘা, আব্দুল মান্নান ২ বিঘা, হবিবর রহমান ১০ কাঠা, ঝড়– মন্ডল ১ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। প্রত্যেক চাষিই বৃষ্টির কারণে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এলাকায় অপেক্ষাকৃত উঁচু জমির সরিষাগুলো বেঁচে আছে। এছাড়া নিচু জমিতে চাষ করা সরিষা সবই বলাচলে মারা গেছে। যে সরিষা বেঁচে আছে তা এখন ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। চাষিরা জানান, সলুয়া, আফরা, চারাবাড়ি, রায়নগরসহ এলাকার অনেক কৃষকের সরিষাসহ অনেক ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সমরেন বিশ্বাস বলেন, চৌগাছার নিচু এলাকা ছাড়া সর্বত্রই সরিষার চাষ হয়। এ বছর বৃষ্টিতে সরিষা চাষে বেশ ক্ষতি হয়েছে। কৃষক এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছেন। কৃষি অফিস তাদেরকে সর্বদা সহযোগিতা প্রদান করছে।