যশোরের চৌগাছার সীমান্ত পথে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার পথে পানিতে ডুবে মারা গেছেন রফিকুল ইসলাম জনি (৫৫) নামে এক প্রকৌশলী। তিনি রাজধানী ঢাকার ৭০৬ নম্বর বড় মগবাজারের বাসিন্দা।
বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে উপজেলার মাশিলা সীমান্তের গদাধরপুর বাওড়ে ভাসমান অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ভারতে তার খালাতো ভাই মোহনের সাথে কথা বলে ও ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে তার পরিচয় শনাক্ত করে ভোর ৪টার দিকে মরদেহটি চৌগাছা থানায় নেয়া হয়।
নিহতের বোনের ছেলে যশোর সরকারি পলিটেকনিক কলেজের অধ্যক্ষ (পিআরএল) মাশরেকুল ইসলাম বলেন, রফিকুল ইসলাম একজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী। তার স্ত্রী কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা। তিনি কয়েকদিন আগে যশোর শহরের লোন অফিস পাড়ায় আমার বাড়ির ছাদ ঢালাইয়ের কাজ তদারকি করতে আসেন। ২/৩ দিন আগে তিনি আমাকে বলেন মামা আমি তো মায়ের কবর জিয়ারত করতে ভারতে যাবো। কিন্তু পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আমি তাকে বলি আমি ঢাকায় সচিবালয়ে যাচ্ছি। এসে তোমার পাসপোর্টের বিষয়টি দেখবো। এরই মধ্যে তিনি গত বুধবার যশোর থেকে ঝিকরগাছায় তার ভাইয়ের মেয়ের বাড়িতে যান। সেখান থেকে ভারতে খালাতো ভাই মোহনের সাথে যোগাযোগ করে চৌগাছার সীমান্ত পার হয়ে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেখান থেকে তিনি ভারতে যাওয়ার সময় সীমান্তের একটি বাওড়ের পানিতে ডুবে মারা যান বলে মোহন মোবাইলে তাকে জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী গদাধরপুর বাওড়ের নাইটগার্ড শাহিন ও নওফেল জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে প্রতিদিনের মতো নৌকায় চড়ে তিনি বাওড় পাহারা দিচ্ছিলেন। এ সময় নৌকা থেকে দেখি বাওড়ের গদাধরপুর মসজিদ ঘাটের পাশে মানুষের মৃতদেহ পড়ে আছে। পরে এ বিষয়ে মাশিলা বিজিবি ক্যাম্পে খবর দিই। পরে বিজিবি সদস্যরা থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে।
চৌগাছার গদাধরপুর গ্রামের মৃত খলিলের ছেলে শান্তি জানান, ভারতের বয়রায় নানা বাড়ি হওয়ার সুবাদে সেখানকার অভি নামে এক দালালের সাথে মাঝেমধ্যে মুঠোফোনে কথা হতো। বৃহস্পতিবার সে মুঠোফোনে জানায় একজন লোক আসবে তাকে ভারতে নিতে হবে। পরে দালাল অভি এসে রাত সাড়ে ৮টার দিকে মসজিদ ঘাট থেকে রফিকুল ইসলামকে নিয়ে বাওড় দিয়ে সাতরিয়ে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিছুক্ষণ পরে সে ফোন দিয়ে বলে যাকে নিয়ে যাচ্ছিলাম সে পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে ও হাঁসফাশ করছে। যেখান থেকে নিয়ে এসেছিলাম সেখানেই তাকে রেখে এসেছি। পরে বিজিবি সেখানে যায়। তারপর পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে চৌগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, মাশিলা ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যদের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে পুলিশ রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে। এরপর অনুসন্ধানে জানা যায়, তিনি পাসপোর্ট ছাড়াই অবৈধভাবে দালালের মাধ্যমে বাওড় সাঁতরে পার হয়ে ভারতে যাওয়ার পথে পানিতে ডুবে মারা গেছেন। পরে দালালরা মরদেহ ঘটনাস্থলে রেখে পালিয়ে যায়। ভারতে তার খালাতো ভাইয়ের সাথে কথা বলে পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শুক্রবার পরিবারের সদস্যরা থানায় এসে মরদেহ শনাক্ত করেন। দুপুরে মরেদহটি ময়না তদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এনএম