খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  খুলনায় মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের সংঘর্ষে নিহত ২
  রাজশাহীতে বাসচাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহীর নিহত
  ফ্যাসিবাদের শেকড় অনেক দূর ছড়িয়ে গেছে : আইন উপদেষ্টা

চোখের জলে বাপ্পি লাহিড়িকে বিদায়

বিনোদন ডেস্ক

চিরঘুমে বাপ্পি লাহিড়ি। স্বজনদের কান্নার রোল আর হাজারও মানুষের দীর্ঘশ্বাসে ভারী মুম্বাইয়ের ভিলে পার্লে শ্মশান। কিন্তু মানবজীবনের এ অবধারিত নিয়ম মেনে নিতেই হচ্ছে। চোখের জলে এ কিংবদন্তিকে বিদায় জানালেন সবাই।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবর, আজ ভারতীয় সময় সকাল ৯টার দিকে বাপ্পি লাহিড়ির শেষকৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন শুরু হয়। পরে বাপ্পির মরদেহ নিয়ে মুম্বাইয়ের ভিলে পার্লের পবন হংস শ্মশানের উদ্দেশে যাত্রা করেন পরিবারের সদস্যসহ অন্যরা। পৌনে ১১টার দিকে শ্মশানে পৌঁছান তাঁরা।

শ্মশানের উদ্দেশে যাওয়ার পথে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাপ্পি লাহিড়ির মেয়ে রিমা লাহিড়ি। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলেও খবরে প্রকাশ। দুপুর দেড়টার দিকে শেষকৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।

লতা মঙ্গেশকর ও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের পর চলে গেছেন আরেক কিংবদন্তি। মঙ্গলবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে মুম্বাইয়ের জুহুর ক্রিটিকেয়ার হাসপাতালে জীবনাবসান হয়েছে উপমহাদেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী, সুরকার ও সংগীত পরিচালক বাপ্পি লাহিড়ির। মাত্র ৬৯ বছরে থেমে গেছে তাঁর সুর।

গতকাল বুধবার তাঁর শেষকৃত্য হয়নি। একমাত্র ছেলে বাপ্পা লাহিড়ির পথ চেয়ে বসেছিল পরিবার। যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে আজ ভোরে মুম্বাইয়ে ফেরেন বাপ্পা। বিমানবন্দরে স্ত্রী-পুত্রসহ ক্যামেরাবন্দি হন বিধ্বস্ত বাপ্পিপুত্র।

হিন্দি চলচ্চিত্র অঙ্গনে সংগীতের দশা ও দিশা দুটোই বদলে গিয়েছিলেন এই বাঙালি সংগীতশিল্পী। ডিসকো সংগীতের অবিসংবাদিত রাজা ছিলেন সবার প্রিয় বাপ্পিদা।

মঙ্গলবার রাতে জুহুর ক্রিটিকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বাপ্পি লাহিড়ি। প্রয়াতের তত্ত্বাবধানে থাকা এক চিকিৎসক আজ বুধবার জানিয়েছেন, একাধিক শারীরিক জটিলতায় বাপ্পির মৃত্যু হয়েছে।

বার্তা সংস্থা পিটিআইকে ডা. দীপক নামজোশি বলেন, ‘লাহিড়ি মাসখানেক হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এবং সোমবার তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু মঙ্গলবার তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হয় এবং তাঁর পরিবার একজন ডাক্তারকে তাঁদের বাড়িতে দেখার জন্য ডেকেছিল। তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর একাধিক স্বাস্থ্য-সমস্যা ছিল।’

ওই চিকিৎসক বাপ্পির মৃত্যুর কারণ হিসেবে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ারের (ওএসএ) কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘বাপ্পি লাহিড়ি মধ্যরাতের একটু আগে ওএসএর কারণে মারা গেছেন।’

ওএসএ এক ধরনের শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা। এতে আক্রান্ত হলে ঘুমের মধ্যে বারবার শ্বাস-প্রশ্বাস বাধাগ্রস্ত হয়। নাক ডাকা ওএসএর-এর অন্যতম লক্ষণ।

১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে জন্ম বাপ্পি লাহিড়ির। ছোট থেকেই সুরের জগতের মানুষ ছিলেন বাপ্পি। তাঁর বাবা অপরেশ লাহিড়ি ছিলেন বাংলা সংগীতের অন্যতম জনপ্রিয় গায়ক। মা বাঁশরী লাহিড়ি ছিলেন শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী। বাপ্পি লাহিড়ি শুধু একজন সংগীত পরিচালকই ছিলেন না, প্লে-ব্যাকও করেছেন সমানতালে। পিতা-মাতার সান্নিধ্যেই তাঁর সংগীতে হাতেখড়ি। ১৯ বছর বয়সে দাদু (১৯৭২) নামক বাংলা চলচ্চিত্রে প্রথম কাজ করেন বাপ্পি লাহিড়ি।

১৯৭০ থেকে ৮০-এর দশকে হিন্দি চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম জনপ্রিয় নাম বাপ্পি লাহিড়ি। মুম্বাইয়ের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে যেসব বাঙালি সংগীতশিল্পী দাপটের সঙ্গে কাজ করেছেন, তাঁদের মধ্যে একদম ওপরের সারিতে থাকবেন বাপ্পি লাহিড়ি। আশি দশকে বলিউড মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির দিশা বদলে দিয়েছিলেন এ বাঙালি। ‘ডিসকো ড্যান্সার’, ‘হিম্মতওয়ালা’, ‘শারাবি’, ‘অ্যাডভেঞ্চার্স অব টারজান’, ‘ড্যান্স ড্যান্স’, ‘সত্যমেভ জয়তে’, ‘কমান্ডো’, ‘শোলা অউর শবনম’-এর মতো একাধিক সুপারহিট সিনেমায় সংগীতের দায়িত্বে ছিলেন বাপ্পি লাহিড়ি।

মিঠুন চক্রবর্তীর ‘ডিসকো ড্যান্সার’ সিনেমার মিউজিক কম্পোজ করে রাতারাতি সুপারস্টারে পরিণত হয়েছিলেন বাপ্পি লাহিড়ি। তাঁর জনপ্রিয়তা ভারতের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিদেশে। এর পর থেকেই ডিসকো কিং নামে পরিচিতি লাভ করেন এই বাঙালি গায়ক। প্রায় ৫০০ সিনেমায় কাজ করেছেন তিনি। পাঁচ হাজারের বেশি গানের রেকর্ড রয়েছে তাঁর।

বলিউড সুপাস্টার আমির খানের বাবা তাহির হুসেনের ‘জখমি’ সিনেমা দিয়ে বলিউডের সংগীত জগতে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন এ বাপ্পি লাহিড়ি। ২০২০ সালে তাঁর শেষ গান ছিল বলিউডের ‘বাঘি থ্রি’ সিনেমায়।

২০২১ সালের নভেম্বরে ‘সারেগামাপা’র মঞ্চে হাজির হয়েছিলেন বাপ্পি লাহিড়ি। শেষ বার তিনি প্রকাশ্যে আসেন সালমান খানের ‘বিগ বস-১৫’-এর মঞ্চে। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে সংগীতজগতে।

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!