আপিল নিষ্পত্তির আগেই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা মামলার দুই আসামির ফাঁসি কার্যকরের সংবাদে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে চুয়াডাঙ্গা জেলার মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার মেম্বর হত্যা মামলায় দুই আসামি পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা মোকিম ও ঝড়–র ফাঁসি কার্যকর করা হয়। কারাগার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলেছে, আইনগত সকল প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর মোকিম ও ঝড়–র ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের মৃত রবকুল মন্ডলের মেঝো ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার হোসেনকে ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন গ্রামের বাদল সর্দ্দারের বাড়িতে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির কতিপয় চরমপন্থি কুপিয়ে হত্যা করে। ওইদিনই নিহতের ভাই মুক্তিযোদ্ধা অহিম উদ্দীন বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় ২১ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির দুই আঞ্চলিক নেতা দুর্লভপুরের মৃত মুরাদ আলীর ছেলে আব্দুল মোকিম ও একই গ্রামের মৃত আকছেদ আলীর ছেলে ঝড়ুসহ ৩ জন আসামিকে মৃত্যুদন্ডাদেশ এবং দুর্লভপুরের মৃত কুদরত আলীর ছেলে আমিরুল ইসলাম ও একই গ্রামের আবু বক্করের ছেলে হিয়াসহ ২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। বাকি ১৬ আসামিকে আদালত বেকসুর খালাস দেয়।
মামলার রায় ঘোষণার পর উচ্চ আদালতে আসামির স্বজনরা আপিল করেন। হাইকোর্টের আপিল বিভাগে ওই আবেদনের শুনানী শেষে এক রায়ে ফাঁসির দন্ডাদেশপ্রাপ্ত এক আসামি ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডাপ্রাপ্ত ২ জন আসামি আমিরুল ইসলাম ও হিয়ার দন্ডাদেশ মওকুফ করা হয়। মোকিম ও ঝড়–র ফাঁসির আদেশ বহাল থাকে। এরপর ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর রাত পৌনে ১২টায় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে মোকিম ও ঝড়–র ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
এদিকে, বুধবার ‘আপিল নিস্পত্তির আগেই যশোর কারাগারে ২০১৭ সালে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে’-এমন খবরে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। কারাগার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আইনগত সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর মোকিম ও ঝড়–র ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। আপিল বিভাগে মৃত্যুদন্ড বহাল থাকার পর এই দুই আসামি মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে ‘মৃত্যুদন্ড মওকুফের আবেদন’ করেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি এই আবেদন নামঞ্জুর করেন। ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সহকারী সচিব মোহাম্মদ আলী স্বাক্ষতির এক পত্রে আবেদন নামঞ্জুরের বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। এরপর আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ১৬ নভেম্বর রাত পৌনে ১২টায় তাদের ২ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ওই রাতেই নিহত ২ জনের লাশ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে কারা কর্তৃপক্ষ। সে সময় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলর ছিলেন আবু তালেব। বর্তমান জেলর তুহিন কান্তি খান বলেন, এ ধরনের খবর শোনার পর আমি নিজে ফাইল পত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছি। কোথাও কোন ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়নি। রাষ্ট্রীয় আইনগত সকল বিধিবিধান মেনেই দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে খুলনা বিভাগীয় কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজন) ছগির মিয়া সাংবাদিকদের জানান, আপিল নিষ্পত্তির আগেই যশোর কারাগারে ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, এমন খবর তাদের নজরেও এসেছে। কারা কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র-ফাইল পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখছে। কোথাও কোন ভুলক্রটি হয়েছে কিনা। তবে প্রাথমিকভাবে এ বিষয়ে কোন ভুল তাদের নজরে আসেনি।
খুলনা গেজেট/ এস আই