খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬
তদারকির অভাবে নষ্ট হচ্ছে সরঞ্জাম, সেবা বঞ্চিত সাধারণ মানুষ

চিতলমারীতে পোস্ট ই-সেন্টার গুলোর কার্যক্রম বাক্সবন্দী

এস এস সাগর, চিতলমারী

বাগেরহাটের চিতলমারীতে ডাক বিভাগের অধিকাংশ পোস্ট ই-সেন্টারের কার্যক্রম বাক্সবন্দী হয়ে পড়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে সাধারণ মানুষের দুয়ারে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে প্রতিটি পোস্ট-ই সেন্টারে ডাক বিভাগ কয়েক লাখ টাকার কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জাম দিয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে তা ব্যবহার না করায় এ সকল সরঞ্জামান অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন তদারকি না থাকায় পোস্ট-ই সেন্টারের ই-সেবা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। ফলে জনসাধারণ কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার ৭ ইউনিয়নে ১৫টি শাখা পোস্ট অফিস ও পোস্ট ই-সেন্টারে একজন করে পোস্ট মাস্টার, পিয়ন, রানার ও উদ্যোক্তা রয়েছেন। এসব পোস্ট ই-সেন্টারে ডিজিটাল সেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষে ডাক বিভাগ কর্তৃক ৩ টি ল্যাপটপ, একটি লেজার প্রিন্টার, একটি রঙ্গিন প্রিন্টার, একটি স্ক্যানার, একটি মডেম, একটি কিবোর্ড, মাউসসহ কয়েক লাখ টাকার সরঞ্জাম প্রদান করা হয়। সংশ্লিষ্ট এলাকার একজন শিক্ষিত বেকার যুবককে উদ্যোক্তা হিসেবে নিয়োগ করে এ সকল সরঞ্জাম ব্যবহার করে নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ মানুষের দুয়ারে সরকারের ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষেই এ সকল পোস্ট ই-সেন্টার স্থাপন করা হয়।

পোস্ট ই-সেন্টারের সেবার মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, কম্পিউটার প্রিন্টিং, কম্পিউটার কম্পোজ, ছবি প্রিণ্ট, স্ক্যানিং, ই-লার্নিং, ই-মেইল, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ইন্টারনেটে পরীক্ষা ফলাফল প্রিন্ট, চাকুরির আবেদন, কৃষি তথ্য প্রদান, দেশ-বিদেশে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলাসহ বিভিন্ন ধরণের ডিজিটাল সেবা প্রদান।

সরেজমিনে উপজেলার খাসেরহাট, উমাজুড়ি, টেকেরবাজার, বাবুগঞ্জবাজার, পাটরপাড়াসহ বেশ কয়েকটি পোস্ট ই-সেন্টার ঘুরে জানা গেছে, বেশীরভাগ সেন্টারেরই প্রকৃতপক্ষে কোন অস্তিত্ব নেই। কোন কোন সেন্টারে নাম সর্বস্ব একটি সাইনবোর্ড লক্ষ্য করা গেলে নেই কোন কার্যক্রম। এ সকল সেন্টারে ডাক বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত সরঞ্জামগুলো ব্যবহার না করে বাক্সবন্দী করে রেখেছেন সংশ্লিষ্ট পোস্টমাষ্টার ও উদ্যেক্তারা।

এ ব্যাপারে সুরশাইলের মিঠু বিশ্বাস, বোয়ালিয়ার টিটব বিশ্বাস ও কুরমনির দেবাশিষ বিশ্বাসসহ অনেকে জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন তদারকি না থাকায় পোস্ট-ই সেন্টারের ই-সেবা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। ফলে জনসাধারণ বঞ্চিত হচ্ছেন। ব্যহত হচ্ছে সরকারের মহতি উদ্দেশ্য।

খাসেরহাট বাজারের পোস্ট-ই সেন্টারের পোস্টমাষ্টার গিরিশ চন্দ্র অধিকারী, বাবুগঞ্জ বাজারের ঝণ্টু অধিকারী, টেকের বাজারের পীযূষ কান্তি রায়, উমাজুড়ির হিরণ প্রভা মজুমদারসহ বেশ কয়েক জন বলেন, অধিকাংশ পোস্ট ই-সেন্টার গুলো প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় উদ্যোক্তারা ডাক বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত সরঞ্জামগুলো ব্যবহার তেমন কোন আয়-উপার্জন করতে পারছেন না। তাছাড়াও অধিকাংশ মালামাল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তা মেরামতের কোন বরাদ্দ না থাকায় বাধ্য হয়ে বাক্সবন্দী করে রাখতে হচ্ছে। এসব উদ্যোক্তাকে প্রতি মাসে কিছু উপার্জনের টাকা সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের নিকট জমা করতে হয়। তাছাড়া মূল্যবান এ সকল সরঞ্জাম রাখার মত নির্দিষ্ট কোন স্থান না থাকায় উদ্যোক্তাদের চরম বিপাকে পড়তে হয়। ফলে বাধ্য হয়ে সরঞ্জাম গুলো বাক্সবন্দী করে রেখেছি।

এ ব্যাপারে চিতলমারী উপজেলা পোস্টমাষ্টার বিপ্লব কান্তি হাওলাদার বলেন, এ সব কিছুর তদারকির দায়িত্ব আমার নয়। তদারকি করেন আইপিও স্যার।

বাগেরহাট জেলা পোস্ট অফিস পরিদর্শক (আইপিও) প্রনবেশ গাইন বলেন, বাগেরহাট জেলায় ৬৮ টি শাখা পোস্ট অফিসের পোস্ট ই-সেন্টার তদারকিতে দায়িত্ব আমার। এ সকল সেন্টারের কোন স্থানে প্রদত্ত সরঞ্জাম নষ্ট ও জনবল সংকট থাকায় উদ্যোক্তার সঠিকভাবে সেবা প্রদান করতে পারছেন না। উদ্যোক্তারা যাতে সঠিক ভাবে তাদের নির্ধারিত সেবা প্রদান করে তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

তবে খুলনা বিভাগরে ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল (ডিপিএমজি) এস এম ওয়ালিউজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, খুলনা বিভাগে মোট ৫৭৩টি শাখা পোস্ট অফিস ও পোস্ট ই-সেন্টার রয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে ডাক বিভাগের ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে সারা দেশে পোস্ট ই-সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এ সকল সেন্টারের উদ্যোক্তাগণকে ডাক বিভাগের থেকে যে সকল সরঞ্জাম প্রদান করা হয়েছে তা বাক্সবন্দী করে রাখার সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে যদি নিয়মের কোন ব্যতয় ঘটে তবে তদন্ত সাপেক্ষ আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

খুলনা গেজেট/কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!