খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ পৌষ, ১৪৩১ | ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

চিতলমারীতে ‘গোল্ড কয়েন’ চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত বাস চালক

চিতলমারী প্রতিনিধি

বাগেরহাটের চিতলমারীতে ‘গোল্ড কয়েন’ চক্রের অভিনব প্রতারণার শিকার হয়ে দেড় লাখ টাকা খুইয়ে ৪ দিন ধরে সাতক্ষীরার দরিদ্র বাস চালক আইউব আলী পথে পথে ঘুরছে। এ ঘটনায় চিতলমারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের আটকের চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, কখনও মিসকল দিয়ে, কখনও সামান্য পরিচয়ের সুত্র ধরে মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে সখ্যতা গড়ে তোলে এই চক্রটি। এরপর সুযোগ মত ওইসব ব্যক্তিদের মূল্যবান গোল্ড কয়েন দেয়ার কথা বলা হয়। কখনও বিশ্বাস বাড়াতে তাদের এলাকায় এনে স্থানীয় স্বর্ণকারের দোকানে নিয়ে গোল্ড কয়েন পরিক্ষা করেও দেখানো হয়। এরপর দর কষাকষি চলতে থাকে। নির্ধারিত দিনে ক্রেতাকে টাকা নিয়ে আসতে বলা হয়। এরপর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে ক্রেতার কাছ থেকে সবকিছু ছিনিয়ে নেয়া হয়। এই ভাবে গত প্রায় এক যুগ ধরে প্রতারণা করে আসছে চিতলমারীর একটি ‘গোল্ড কয়েন চক্র’।

অভিযোগপত্রে জানা গেছে, এই চক্রের সদস্যরা হলেন, উপজেলার খলিশাখালী গ্রামের মৃত রঞ্জন বিশ্বাসের ছেলে কিরোণ বিশ্বাস, মৃত খগেন্দির বিশ্বাসের ছেলে প্রদীপ বিশ্বাস ও জিতেন বিশ্বাসের ছেলে অনুপ বিশ্বাসসহ ৮/১০ জন। ‘গোল্ড কয়েন’ চক্রের সর্বশেষ প্রতারণার শিকার হয়েছেন সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার দুরলী গ্রামের বাস চালক আইউব আলী।

আইউব আলী জানান, সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার মুন্সিগঞ্জ এলাকায় গত ১৫ দিন আগে পরিচয় হয় বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার প্রদীপ বিশ্বাসের সাথে। ওই এলাকা দিয়ে তারা বাড়ি ফিরছিল। তাদের কাছে কোন টাকা ছিল না। মানবিক কারনে কোন প্রকার ভাড়া নেয়া ছাড়াই তাদের পৌছে দেন তিনি। বাস থেকে নামার সময় উপকার করায় প্রদীপ বিশ্বাস তার কাছে মোবাইল নাম্বার চেয়ে নেন। পরে বাড়িতে ফিরে প্রদীপ তার মোবাইলে কল দেয়। অল্প সময়ে ভাল সম্পর্ক তৈরি হয় তার সাথে। একপর্যায়ে তাকে গোল্ড কয়েনের কথা বলা হয়। প্রথমেই তিনি এটা নিয়ে অস্বীকার করেন। তাদের পিড়াপিড়িতে অবশেষে রাজি হয়ে, তার আত্মিয়-স্বজন, প্রতিবেশি ও সুদে করে ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা নিয়ে গত রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) চিতলমারী আসেন।

এদিন দুপুরে তাকে স্থানীয় ডাকাতিয়ার মোড় এলাকার নদীর পাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তার কাছ থেকে জোরপূর্বক ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা নিয়ে তাকে কাউকে কিছু না বলার হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগীতায় তিনি চিতলমারী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি গত ৪ দিন ধরে খেয়ে না খেয়ে চিতলমারীর পথে পথে ঘুরছেন বলে জানান।

এ বিষয়ে পাশ্ববর্তী কলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিকদার মতিয়ার রহমান বলেন, হিজলা ইউনিয়নের বাবুগঞ্জ বাজার এলাকায় গত ১৫ বছর ধরে এই ‘গোল্ড কয়েন’ চক্র সক্রিয়। আর এর সাথে জড়িত স্থানীয় একটি মহল।

হিজলা ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আজমীর আলী বলেন, ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই চক্রটি একের পর এক সোনা বিক্রির নামে মানুষের সাথে প্রতারণা করেই চলেছে। অন্য জেলার মানুষ তাদের কাছে গোল্ড কয়েন কিনতে আসে। তিনি সাড়ে ৭ বছর আগে ঝিনাইদহের এক লোকের কিছু টাকা আদায় করে দিয়েছিলেন। সবাই এই চক্রের কাছে অসহায় হয়ে যায় বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর শরিফুল হক সাংবাদিকদের জানান, চিতলমারী-নাজিরপুর সীমান্তবর্তী এলাকায় বিভিন্ন চক্র সক্রিয়। তিনি এই থানায় যোগদানের পর চক্রগুলো দমনে কাজ করে যাচ্ছেন। অভিযোগের পর অভিযুক্তদের আটকের জন্য পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!