খুলনা, বাংলাদেশ | ২৮শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৩ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, ফেসবুকে ঘোষণা দিলেন বিদায়ের
  কাল ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘের মহাসচিব, পরিদর্শন করবেন রোহিঙ্গা ক্যাম্প
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে ‘র‌্যাগিংয়ের শিকার ছাত্রীদের শিক্ষকদের প্রশ্ন

চিকিৎসা চাও নাকি বিচার?

গেজেট ডেস্ক

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের দুই ছাত্রী র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়ে অসুস্থ হওয়ার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ ভুক্তভোগীদের বলেছে, ‘তোমরা চিকিৎসা চাও, নাকি বিচার চাও?’-এমনটাই অভিযোগ করেছেন র‌্যাগিংয়ের শিকার এক ছাত্রীর মা। এদিকে ছাত্রী হোস্টেলসহ কলেজের সব হোস্টেল ব্যবস্থাপনা কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। আবাসিক ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে গঠিত ওই কমিটি শনিবার রাতে বিলুপ্ত করা হয়েছে বলে উপাধ্যক্ষ ডা. জিএম নাজিমুল হক জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ছাত্রী নিবাসে কোনো র‌্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেনি। একটি কক্ষে তিন ছাত্রীর মধ্যে একটু দ্বন্দ্ব হয়। এই নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে একটু ঝামেলা হয়েছিল। এক পক্ষ ছাত্রী নিবাসের ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে বিচার দেয়। ব্যবস্থাপনা কমিটি বিচার করায় একজন ক্ষুব্ধ হয়। ক্ষুব্ধ হয়ে সে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

উপাধ্যক্ষ আরও বলেন, ব্যবস্থাপনা কমিটির বিচার করার কোনো এখতিয়ার নেই। তাই তাদের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এছাড়া ছাত্রীনিবাসের আবাসিক ছাত্রীদের তাদের কক্ষের রদবদল করা হবে।

তিনি আরও জানান, অধ্যক্ষ ডা. ফয়জুল বাশার সব শিক্ষার্থীকে হলে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করার নির্দেশনা দিয়েছেন। কেউ ভবিষ্যতে ঝামেলা করলে কিংবা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করলে একাডেমিকভাবে কঠোর শাস্তি দেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন অধ্যক্ষ। এদিকে র‌্যাগিংয়ের শিকার ওই দুই ছাত্রী অভিযোগ করেন, বেশ কয়েকদিন ধরেই ছাত্রলীগের নেত্রী পরিচয় দেওয়া ছাত্রী হোস্টেলের সেক্রেটারি বিডিএস-৭ এর ছাত্রী ফাহমিদা রওশন প্রভা ও সহকারী হোস্টেল সেক্রেটারি ৫০তম ব্যাচের ছাত্রী নিলীমা হোসেন জুঁই তাদের নানাভাবে গালাগাল দিয়ে মানসিক নির্যাতন করে আসছেন। এতে ভীতসন্ত্রস্ত ছিলেন তারা। তাদের সঙ্গে যেন এমন আচরণ না করা হয়, সেজন্য ওই ছাত্রীদের একজন সহপাঠীকে দিয়ে অনুরোধ করান তারা। কিন্তু এতে অভিযুক্তরা ক্ষ্যাপে যান।

এর জেরে বুধবার রাত ১১টার দিকে নির্যাতনের শিকার ছাত্রীদের হলের ৬০৬ নম্বর কক্ষে ডেকে নেওয়া হয়। এরপর তাদের দুজনকে দাঁড় করিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন অভিযুক্তরা। তাদের মুঠোফোন তল্লাশি করা হয়। আধাঘণ্টা নানাভাবে শাসিয়ে দুই ছাত্রীকে তাদের কক্ষে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রাত ১২টার দিকে দ্বিতীয় দফায় ডেকে নিয়ে দুই ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখে আবারও গালাগাল করা হয় এবং ভয়ভীতি দেখানো হয়। এভাবে মানসিক নির্যাতনে ওই দুই ছাত্রী অসুস্থ বোধ করলে তাদের কক্ষে পাঠানো হয়। এর পরপরই একজন অচেতন হয়ে পড়েন। গভীর রাতে তাকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নির্যাতনে অসুস্থ ছাত্রীর মা বলেন, এ ঘটনায় রোববার দুপুর ১২টার দিকে কলেজ প্রশাসন তার মেয়ে ও অন্য ছাত্রীকে ডেকে ঘটনা সম্পর্কে তাদের বক্তব্য নেয়। প্রশাসন তার মেয়েকে মানসিক রোগের চিকিৎসকের কাছে পাঠায়।

ওই ছাত্রীর মা অভিযোগ করেন, নির্যাতনের শিকার দুই ছাত্রীকে কলেজ প্রশাসন থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, ‘তোমরা চিকিৎসা চাও, নাকি বিচার চাও? যে কোনো একটি বেছে নিতে হবে। বিচার চাইলে তোমাদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’ আমরা বলেছি, আমরা দুটোই চাই। নির্যাতনকারী ছাত্রীদের পক্ষে যায়, এমন প্রস্তাব কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আসায় আমরা বিস্মিত হয়েছি।

ওই ছাত্রীর মা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, এখন আমার মেয়েকে মানসিক ভারসাম্যহীন প্রমাণ করার চেষ্টা করছে তারা। কলেজ প্রশাসন যখন দুই ছাত্রীর বক্তব্য নিচ্ছিল, নির্যাতনকারীরা তখন বাইরে অবস্থান নিয়ে হাসাহাসি করছিল। কলেজ প্রশাসনের এমন আচরণে আমরা হতাশ হয়েছি। মেয়ের নিরাপত্তা নিয়েও আমরা উদ্বিগ্ন।

অভিযোগ সম্পর্কে অভিযুক্ত ছাত্রী হোস্টেলের সহকারী সেক্রেটারি নিলীমা হোসেন জুঁই বলেন, নির্যাতনের অভিযোগ মিথ্যা। এ বিষয় নিয়ে কথা বলার মতো মানসিক অবস্থা আমার নেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ ঘটনার খবর সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনার পেছনে নিলীমা হোসেন জুঁইয়ের স্বামী ডা. আতিকুর রহমান খানের ইন্ধন রয়েছে। ডা. প্রবীর কুমার সাহা ছাত্রী হোস্টেল সুপার। তার বিরুদ্ধে নারীঘটিত নানা কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে ছাত্রীদের। নির্যাতনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে প্রবীর কুমার সাহা সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছেন ডা. বাকী বিল্লাহকে নিয়ে। এছাড়া ডা. আতিকুর রহমান খান নিজের স্ত্রীকে বাঁচাতে হামলায় ইন্ধন দিয়েছেন। বর্তমানে নির্যাতনের শিকার ছাত্রীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন প্রবীর কুমার সাহা ও বাকী বিল্লাহ।

নির্যাতিত দুই ছাত্রীকে কলেজ প্রশাসন থেকে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে জানতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ফয়জুল বাশারকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!