খুলনার চালনা পৌরসভা নির্বাচনের দিন যতোই এগিয়ে আসছে প্রচার-প্রচারণাও ততই জমে উঠেছে। গত ১১ ডিসেম্বর প্রতীক পাওয়ার পর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু করেন প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা। ভ্যানগাড়ি স্ট্যান্ড, বাস স্ট্যান্ড ও হোটেল থেকে শুরু করে রাস্তার পাশের চায়ের দোকান, গ্রামগঞ্জ সর্বত্রই এখন নির্বাচনী আলোচনা। পৌর বাজার ছাড়াও শহরের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলিও ছেয়ে গেছে প্রার্থীদের পোস্টার-লিফলেটে। মিছিল-গণসংযোগ, পথসভা আর মাইকের শব্দে পুরো পৌরসভায় মেতে উঠেছে নির্বাচনী উৎসবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বড় দুই দল আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ চারজন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে সব দলের প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় এবার নারীরাও বেশ সরব, যা আগে কোনো নির্বাচনে দেখা যায়নি। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রার্থীরা যেমন তাঁদের দলীয় ও সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে রাতদিন বিরামহীনভাবে ছুটছেন, তেমনি বসে নেই আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর স্ত্রীরাও। দলীয় নারী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কোমর বেঁধেই স্বামীর পক্ষে প্রচারণার মাঠে নেমেছেন তাঁরা। এ ছাড়া পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে নারীরা দল বেঁধে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সনত কুমার বিশ্বাস, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. আবুল খয়ের খাঁন ও সাবেক পৌর মেয়র অচিন্ত্য কুমার মন্ডলের প্রচারণা চোখে পড়ার মতো।
চালনা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে এবার চারজন, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১০ জন ও কাউন্সিলর পদে ২৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে মেয়র পদ প্রার্থীদেরই অনলাইনে প্রচার-প্রচারণা সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া অনেক কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকেরাও অনলাইনে সরব উপস্থিতির জানান দিচ্ছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুক) খুঁজে দেখা গেছে, মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়া দুইজন প্রার্থী সনাতনরীতির পাশাপাশি নিয়মিত প্রচারণার অংশ হিসেবে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও নিজস্ব ওয়েব সাইট ব্যবহার করছেন।
আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী সনত বিশ্বাসের কর্মী-সর্মথকদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী প্রচার চালানো হচ্ছে। দেখা গেছে, ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী প্রকাশ করা হয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচনী গণসংযোগ ও পৌরসভা নিয়ে তাঁর পরিকল্পনার ও বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা কেউ কেউ নিজস্ব ফেসবুকে নির্বাচনী গান, ভিডিও এবং প্রতিশ্রুতিসহ নানা বিষয় স্থান পেয়েছে।
নারকেল গাছ প্রতীকের গৌতম কুমার রায় বেশিরভাগ সময় একা একা প্রচার চালাচ্ছেন। তবে মাঝে মধ্যে কিছু কর্মী-ভক্ত তাঁর সঙ্গে প্রচার চালাতে দেখা যাচ্ছে। পৌর শহরের একটি রাস্তায় দেখা হলে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মানুষ পরিবর্তন চায়, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে বেছে নিতে চায়। আমি মনে করি, সততার জয় হবে। নারকেল গাছ জিতবে।’
আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সনত কুমার বিশ্বাস খুলনা গেজেটকে বলেন, চালনা হচ্ছে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। এখানে নৌকার বিকল্প নেই। তাঁরা জয়ের লক্ষ্যে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
চালনা পৌরসভা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোজাফ্ফর হোসেন মুঠোফোনে খুলনা গেজেটকে বলেন, তাঁদের দলীয় সমর্থিত প্রার্থী আবুল খান কিছুটা অসুস্থ। তারপরেও নির্বাচনে প্রার্থীর জন্য ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চাচ্ছি। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী জয়ী হবে বলে আশা করেন তিনি।
শুক্রবার সারাদিন পৌরসভার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাইকে বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রার্থনা করে গান বাজানো হচ্ছে। হাটবাজার গুলোতে শিশুদের দিয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে। প্রচার কাজে শিশুদের ব্যবহারের কারণ জানতে চাইলে কয়েকজন প্রার্থী বলেন, ভালোবাসার টানে ওরা আসে। শিশু কণ্ঠে স্লোগান শুনতে কার না ভালো লাগে।
নির্বাচনী মাঠে নারীদের সরব উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে দাকোপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল হোসেন খুলনা গেজেটকে বলেন, নারীরা এখন আগের চেয়ে অনেক রাজনীতি সচেতন। তাঁরা দেশের নেতৃত্ব থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে এগিয়ে আছেন। চালনায় এখন দিনরাত নিরাপদে নারীরা নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। এটিকে দেশের অগ্রগতি ও গণতন্ত্রের জন্য শুভ বার্তা বলা যায়।
খুলনা গেজেট / এনএম